আফগানিস্তান
৯ সেপ্টেম্বর ২০১২আলোচনার চেষ্টা
একটা সময় ছিলো যখন মার্কিন কর্তৃপক্ষের ধারণা ছিল আফগানিস্তানে সামরিক পন্থাই তালেবানকে উৎখাতের জন্য সবচেয়ে ভালো উপায়৷ তবে আফগানিস্তানে হামলার দীর্ঘ এক যুগ পর এখন মার্কিন ধারণায় পরিবর্তন এসেছে৷ তারা এখন রাজনৈতিকভাবে একটি সমাধান সূত্র খুঁজছে৷ কারণ তালেবান গোষ্ঠী ক্ষমতা থেকে সরে গেলেও আফগানিস্তানে তারা এখনও বহাল রয়েছে৷ মার্কিন সমর্থনপুষ্ট প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের কর্তৃত্ব কাবুল আর আশেপাশের কিছু এলাকাতেই৷ এর বাইরে এখনও তালেবান গোষ্ঠীর আধিপত্যটা স্পষ্ট৷ মার্কিন প্রশাসন তাই বলছে, রাজনৈতিক সংলাপই আফগানিস্তানে স্থায়ী শান্তি আনতে পারে৷
গত দুই বছর ধরে মার্কিন কর্তৃপক্ষ তালেবানের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়ে আসছে৷ তবে গত মার্চ মাসে সেই আলোচনা ভেঙ্গে গেছে৷ কারণ গুয়ান্তানামো কারাগার থেকে তাদের পাঁচজন নেতাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি, এমনটি বক্তব্য তালেবান গোষ্ঠীর৷ তবে এরপরও যে ওবামা প্রশাসন হাল ছেড়ে দিয়েছে তা নয়৷ দিন কয়েক আগে সংবাদ মাধ্যমে তালেবানের সঙ্গে গোপন একটি কথাবার্তার খবর ফাঁস হয়ে গেছে৷ কাতারে তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিলো মার্কিন প্রতিনিধিদের৷
অল্প ছাড়
উভয় পক্ষের অবস্থানটা বেশ পরিস্কার৷ একদিকে মার্কিন কর্তৃপক্ষের শর্ত হলো, তালেবান গোষ্ঠী মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করুক, আফগান সংবিধান মেনে নিক এবং আল কায়েদার সঙ্গে সব ধরণের সম্পর্ক ছিন্ন করুক৷ অন্যদিকে তালেবানের শর্ত, আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সব সেনার বিদায়, তালেবান সহযোগী নেতৃবৃন্দের মুক্তিদান এবং তালেবানকে স্বীকৃতি প্রদান৷ জাতিসংঘের আল কায়েদা ও তালেবান পর্যবেক্ষণ দলের প্রধান রিচার্ড ব্যারেট বললেন, উভয় পক্ষ একটু ছাড় দিলেই এসব শর্ত পূরণ সম্ভব৷ তার ভাষায়, ‘‘আমি মনে করি না উভয় পক্ষের কেউ ঝামেলা চায় তারা সকলেই একটু ছাড় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত৷ যেমন উদার তালেবানরা হয়তো মনে করতে পারে যে আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক বাহিনীর উপস্থিতি থাকলে সেটা তাদের নিরাপত্তার জন্যও একধরণের গ্যারান্টি হতে পারে৷ অথবা পর্যবেক্ষকরা বুঝতে পারবে সেদেশে কী ঘটছে যেটা সরকারে অংশ নেওয়ার বেলায় তালেবানের জন্য সহায়ক হতে পারে৷''
নতুন প্রজন্ম
একটা সময় ছিলো যখন তালেবান গোষ্ঠীতে ছিলো সোভিয়েত বিরোধী মুজাহিদদের প্রাধান্য৷ তবে এতগুলো বছর পর সেই চিত্র পাল্টে গেছে৷ মার্কিন বিশেষজ্ঞদের মতে, তালেবান কমান্ডারদের গড় বয়স ৩৫ থেকে কমে এসে ২৩ এ নেমে গেছে৷ তালেবান যোদ্ধাদের নেতৃত্বে এই তরুণ প্রজন্মের উপস্থিতি তাদের চিন্তাভাবনাতেও পরিবর্তন আনতে পারে, এমনটি বললেন কাবুলের ইন্টারন্যাশনালা ক্রাইসিস গ্রুপের বিশেষজ্ঞ ক্যানডেস রোনদোঁ৷ তার বক্তব্য, ‘‘তালেবান গোষ্ঠীর মধ্যে একটি বড় জেনারেশন গ্যাপ তৈরি হয়েছে যাদের সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়ে তেমন স্মৃতি নেই৷ যারা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে তাদের মধ্যে যে বন্ধন এবং স্মৃতি ছিলো সেটি নতুন তালেবান কমান্ডারদের মধ্যে নেই৷ তাদের মধ্যে বন্ধনের ভিত্তি সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্রের৷ তারা শরণার্থী শিবিরে জন্মেছে এবং কেবল ধর্মীয় বিদ্যালয়ে শিক্ষা পেয়েছে৷ আগের তালেবান নেতারা যুদ্ধক্ষেত্রে নিজ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সোভিয়েতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে৷ সেটার চেয়ে বর্তমানের কমান্ডাররা একেবারেই ভিন্ন রকমের৷''
তালেবানের নতুন প্রজন্ম আর পাশাপাশি তাদের মধ্যে বিভিন্ন গোষ্ঠীর উদয়, এই কারণে পশ্চিমা দেশগুলো চাচ্ছে পুরো তালেবান গোষ্ঠী না হোক, তাদের মধ্যে একটি অংশকে আলোচনায় ফিরিয়ে আনতে এবং আফগানিস্তানের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে৷
প্রতিবেদন: ডেনিস স্টুটে/আরআই
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই