তালেবান কি ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করবে?
৩১ আগস্ট ২০২১কাবুলে এখনই মাঝেমধ্যে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে তালেবান বলেছে, তারা ইন্টারনেট পরিষেবা বহাল রাখবে। কিন্তু বিপুল আর্থিক খরচ ও প্রযুক্তিগত সমর্থন কি তাদের কাছে আছে? তারা কি সত্যি সত্যিই ইন্টারনেট পরিষেবা আগের মতো দেবে, না কি তা নিয়ন্ত্রণ করা হবে? এই প্রশ্ন এখন কাবুলের সাংবাদিক ও অধিকাররক্ষাী কর্মীদের মনে ঘুরছে।
আফগান পিস ইনিশিয়েটিভের প্রধান এবং সাংবাদিক হাবিব খান বলেছেন, ''তালেবান কাবুলে মাঝে মধ্যেই ইন্টারনেট বন্ধ করে দিচ্ছে। সাংবাদিক এবং অধিকাররক্ষাকর্মীরা চিন্তিত। তালেবান ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে না তো?''
স্থানীয় সূত্র উদ্ধৃত করে বিবিসির সাংবাদিক ইলডা হাকিম টুইট করে বলেছেন যে, পঞ্জশিরে তালেবান ইন্টারনেট ও টেলিকম পরিষেবা মাঝে মধ্যে বন্ধ করে দিচ্ছে।
তবে ঘটনা হলো, এইরকম কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে মোটের উপর তালেবান শাসনেও ইন্টারনেট পরিষেবা ঠিকঠাকই আছে।
টুইটার, ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ আগের মতোই চলছে। সেগুলি ব্লক করা হয়নি। ২০ বছর আগে আফগানিস্তানে ইন্টারনেট চালু করা হয়। বিশ্বব্যাঙ্কের হিসাব হলো, ১৩ দশমিক পাঁচ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন বা ব্যবহার করতে পারেন। বেশিরভাগ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী শহরে থাকেন এবং ইন্টারনেট পরিষেবা তৈরি হয়েছিল অ্যামেরিকা, ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক ও বিদেশি কোম্পানির সাহায্যে।
অনলাইনে তালেবান
তালেবান কর্মকর্তাদের অনেকেই এখন টুইটারে যোগ দিয়েছেন। অনেকে হোয়াটস অ্যাপে আছেন। কয়েকজন উচ্চপদস্থ তালেবান কর্মকর্তা অ্যাপল ওয়াচও ব্যবহার করেন। ছবিতে তা স্পষ্ট দেখা গেছে।
তবে এর আগের শাসনে তালেবান টিভি, রেডিও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। সেই তালেবান নেতারা এখন উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন, এটা বিশাল পরিবর্তন।
নেট-পরিষেবা চালাতে পারবে?
দিল্লির ওভারসিজ রিসার্চ ফাউন্ডজেশনের কবীর তানেজা মনে করেন, ''তালেবান আফগানিস্তান দখল করেছে, তারা অনলাইনে মিডিয়া প্রচারও চালাচ্ছে, তবে তার মানে এই নয় যে, তারা লাখ লাখ আফগান নাগরিককে এই পরিষেবা দিয়ে যেতে পারবে।''
তার মতে, ''কালাশনিকভ রাইফেল হাতে কাবুল শাসন করা সোজা। কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্র, ইন্টারনেট পরিষেবা চালানোর কাজটা অত সহজ নয়। আমরা আগে তালেবানকে ইন্টারনেট চালাতে দেখিনি।''
গত সপ্তাহে তালেবান কর্মকর্তারা আফগান টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটির কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা বলেছেন, ইন্টারনেট পরিষেবা অব্যাহত রাখতে তারা একসঙ্গে কাজ করবেন। তবে টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি এর আগে জানিয়েছিল, তালেবান ইতিমধ্যে ২৮টি টেলিকম টাওয়ার নষ্ট করে দিয়েছে।
আফগানিস্তানে দুইটি সব চেয়ে বড় ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা হলো আমিরাতের একটি সংস্থা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার এমটিএন গ্রুপ। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার কোম্পানিটি গত বছর জানিয়েছিল, তারা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাবে। আমিরাতের কোম্পানি অবশ্য এই ধরনের কোনো কথা বলেনি।
ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞ ডগ ম্যাডরি বলেছেন, এখন মনে হচ্ছে আফগানিস্তানে ইন্টারনেট অটোপাইলট মোডে চলছে। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ''আর কয়েক সপ্তাহ পরেই বোঝা যাবে, ইন্টারনেট পরিষেবা দেয়ার ক্ষমতা তালেবানের আছে কি না।''
ইন্টারনেট পরিষেবা চালাতে গেলে তালেবানকে অর্থ খরচ করতে হবে। ম্যাডরি জানিয়েছেন, ''আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলি আফগানিস্তানকে ইন্টারন্যাশনাল ব্যান্ডউইথ দিচ্ছে অর্থের বিনিময়ে।'' অ্যামেরিকায় আফগানিস্তানের সম্পদ ফ্রিজ করে দেয়া হয়েছে, বিদেশি ঋণ বন্ধ, এই অবস্থায় তালেবান কি অর্থ খরচ করে এই পরিষেবা চালাতে পারবে?
তালেবান কি নজরদারি করতে পারবে?
আফগানরা মনে করছেন, তালেবান ইন্টারনেটে নজরদারি চালাবে। গুগল প্লে থেকে কী ডাউনলোড হচ্ছে, তার উপর নজর রাখে সেন্সর টাওয়ার। তারা জানিয়েছে, আফগানিস্তানে এখন ভিপিএন, টেলিগ্রামের মতো অ্যাপের ডাউনলোড বাড়ছে।
সাংবাদিক মজিদ খান বলেছেন, ''অনেকে নিজের হ্যান্ডসেট বদল করে নিয়েছেন, অনেকে সিম বদল করেছেন। অনেকে মনে করেন, হোয়াটস অ্যাপ নিরাপদ নয়, তাই তারা সিগন্যাল ব্যবহার করছেন।''
ফেসবুক, টুইটার সহ অনেকেই গ্রাহকের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে। ম্যাডরি ও তানেজার মতো বিশেষজ্ঞের মতে, ইন্টারনেট বন্ধ করা, কিছু ওয়েবসাইট ব্লক করা, বিরোধীদের পরিষেবা না দেয়ার মতো প্রযুক্তিগত ক্ষমতা তালেবানের আছে। কিন্তু তাদের পক্ষে অনলাইন সেন্সরশিপ ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব নয়।
স্থানীয় মিডিয়া জানাচ্ছে, কান্দাহারের দক্ষিণে গান ও মেয়েদের নিয়ে ভিডিও তালেবান নিষিদ্ধ করেছে।
তানেজা মনে করেন, কাবুল সহ অন্যত্রও তারা একইরকমভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে।
ওলে ট্যানজেন জুনিয়ার/জিএইচ