তৃণমূলের বিক্ষোভের উল্টো ফল
৬ জানুয়ারি ২০১৭সাংসদ সুদীপ ব্যানার্জিকে সিবিআই গ্রেপ্তার করার পর তৃণমূল কংগ্রেসের বাকি সাংসদরা যেদিন দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারি বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে গ্রেপ্তার হলেন, সেই খবর জানিয়ে প্রথম টুইট করল সংবাদসংস্থা পিটিআই৷ তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এক অবাঙালি নাগরিক যে টুইট করলেন, তার ভাবার্থ এই রকম— ‘‘এদের ন্যুনতম লজ্জাবোধ নেই! হাওড়া এক্সপ্রেসের টিকিট কাটিয়ে এদের ফেরত পাঠানো হোক!’’
মন্তব্যের ধরনেই স্পষ্ট, ‘এদের’ বলতে ওই নাগরিক সার্বিকভাবে বাঙালি রাজনীতিকদের কথা বলেছেন, যাদের সর্বভারতীয় রাজনীতিতে আসার যোগ্যতা নেই বলে তিনি ইঙ্গিত করেছেন৷ সেই কারণেই ট্রেনে চাপিয়ে হাওড়া স্টেশনে পাঠিয়ে দেওয়ার কটাক্ষ৷
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তৃণমূল নেতৃত্ব নির্বিকার এবং তাপস পাল, সুদীপ ব্যানার্জির গ্রেপ্তারিকে নোট বাতিলবিরোধী আন্দোলনের পাল্টা রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসেবে তুলে ধরতে মরিয়া৷ এবং সে ব্যাপারে যে কোনও বিরুদ্ধমতকে রাজনৈতিক চক্রান্ত হিসেবে দেখছে তারা৷ সে মতামত যদি খোদ রাজ্যপালও জানান, তা হলেও৷ সুদীপ ব্যানার্জি গ্রেপ্তার হওয়ার দিনই কলকাতা এবং অন্যত্র বিজেপি’র কার্যালয়ে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা হামলা করেছে, সংঘর্ষে জখম হয়েছেন বিজেপি কর্মীরা৷ সেই নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপি অভিযোগ জানিয়ে আসে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির কাছে৷ পাল্টা অভিযোগ জানায় তৃণমূলও৷ যার প্রেক্ষিতে রাজ্যপাল ত্রিপাঠি বলেন, ‘‘রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব রাজ্য সরকারেরই৷ রাজনৈতিক পার্থক্য ভুলেই সেটা করতে হবে৷’’
সরকারকে তার দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়ায় রাজ্যপালের ওপর ক্ষুব্ধ তৃণমূল কংগ্রেস৷ দলের প্রথম সারির নেতা, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, ‘‘সাংবিধানিক পদে বসে রাজ্যপালের গলায় এ ধরনের রাজনৈতিক সুর বরদাস্ত করা হবে না!’’ অন্যদিকে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় সরাসরি হুমকি দিয়েছেন, ‘‘মমতা ব্যানার্জি ও তাঁর সঙ্গীরা যদি নিজেদের না শুধরান, তাহলে সমস্যায় পড়বেন৷ বিজেপি কর্মীরা যদি ঠিক করেন যে ওঁদের রাস্তা আটকাবেন, তা হলে কী করে মমতা সারা দেশে ঘুরে বেড়াবেন, আর কী করেই বা তৃণমূল সাংসদরা দিল্লিতে ঢুকবেন!’’
যদিও বৃহস্পতিবারও দিল্লিতে বিক্ষোভ দেখিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন তৃণমূল সাংসদরা৷ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচি আগাম ঘোষিত ছিল৷ কিন্তু বৃহস্পতিবার একেবারে গেরিলা কায়দায় পুলিশের অবরোধ টপকে দিল্লির হাই সিকিওরিটি জোন সাউথ ব্লকের ভেতরে ঢুকে পড়েন সাংসদরা, সোজা পৌঁছে যান প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সামনে৷ যদিও পুলিশ তাঁদেরকে আটকে দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেপ্তার করে, পুলিশের সঙ্গে একপ্রস্থ হাতাহাতিও হয় তাঁদের৷ কিন্তু এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে ভিভিআইপি এলাকার সার্বিক সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েই৷ যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই সময় দপ্তরে ছিলেন না, ছিলেন পাটনায়৷ কিন্তু তিনি হাঙ্গামার খবর শুনে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ এবং দিল্লি ফিরেই তিনি কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে৷
পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী বামফ্রন্ট এদিকে তাপস পাল, সুদীপ ব্যানার্জির গ্রেপ্তারির সূত্র ধরে রাজ্যে চিটফান্ড কেলেঙ্কারির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি আরও জোরদার করেছে৷ বুধবার এই নিয়ে কলকাতায় একটি মিছিল করে বামেরা৷ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘কেবল তাপস, সুদীপ নয়, চিটফান্ড কেলেঙ্কারির নাটের গুরুদের গ্রেপ্তার করতে হবে৷ রোজভ্যালি চিটফান্ডের মালিক গৌতম কুন্ডু কালিম্পংয়ের ডেলো পাহাড়ে যাঁর সঙ্গে বৈঠক করতেন, তাঁকেও গ্রেপ্তার করতে হবে!’’ সুজন চক্রবর্তীর ইঙ্গিত স্পষ্টতই তৃণমূল নেত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দিকে৷