থ্রিডি প্রিন্টারে সেতু তৈরি!
২৮ ডিসেম্বর ২০১৫এ যেন বাতাসে তুলি চালানো! শুধু তুলির জায়গায় অত্যন্ত শক্ত ইস্পাত৷ নেদারল্যান্ডস-এর স্টার্ট আপ কোম্পানি এমএক্সথ্রিডি থ্রিডি প্রিন্টিং-এর বাজারে বিপ্লব এনে দিচ্ছে৷ তাদের প্রযুক্তির সাহায্যে ধাতু দিয়ে জটিল কাঠামো তৈরি সম্ভব হচ্ছে৷ কোম্পানির প্রতিনিধি টিম খোয়ের্টইয়েন্স বলেন, ‘‘আমরা যেভাবে রোবট ব্যবহার করি, কেউ তা করে না৷ গাড়ি বা অন্যান্য শিল্পে ইঞ্জিনিয়াররা একই কাজের পুনরাবৃত্তির জন্য রোবটদের প্রোগ্রামিং-এর পেছনে অনেক সময় ব্যয় করেন৷ আমরা অন্য পথ বেছে নিয়েছি৷ অর্থাৎ রোবটকে সর্বদা নতুন তথ্য দিয়ে চলেছি৷ ফলে রোবট প্রিন্টিং-এর প্রতিটি তথ্য তার আগেরগুলি থেকে ভিন্ন৷''
গোটা ব্যবস্থার মূলে রয়েছে একটি রোবটিক হাত, যাতে ৬টি ভাঁজ রয়েছে৷ প্রিন্টহেড-টি অনেকটা ওয়েল্ডিং টর্চ-এর মতো কাজ করে৷ ১,৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তাপ সহ্য করতে পারে সেটি৷ প্রায় যে কোনো সারফেসের উপর ধাতুর বস্তু তৈরি করা সম্ভব৷ উপর-নীচ অথবা পাশাপাশি সেই কাজ করা চলে৷ খোয়ের্টইয়েন্স বলেন, ‘‘শিল্পের নানা কাজে এটা ব্যবহার করা যায়৷ ইস্পাত দিয়ে যাই তৈরি করুন না কেন, আলাদা অংশ দিয়ে তা করলে অত্যন্ত জটিল ও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে৷ প্রতিবার আলাদা করে ছাঁচ তৈরি করতে হয়৷ আমরা কিন্তু প্রায় যে কোনো আকার-আয়তন প্রিন্ট করতে পারি৷''
এর মধ্যেই এই প্রযুক্তির প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে৷ যেমন স্টেনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি পথচারীদের সেতু৷ কোম্পানির সদর দপ্তর আমস্টারডাম শহরের কেন্দ্রস্থলে এটি বসানো হবে৷ শহরের প্রায় ২০০টি খালের উপর ১,২০০-রও বেশি সেতু রয়েছে৷ নতুন সেতুটি একেবারে খালপাড়েই থ্রিডি প্রিন্টিং পদ্ধতিতে তৈরি হবে৷ টিম খোয়ের্টইয়েন্স বলেন, ‘‘আমাদের আর কোনো জ্যামিতিক বাধ্যবাধকতা মানতে হয় না৷ রোবট ব্যবহারের ফলে আমরা তৈরি কাঠামো থেকেই প্রিন্ট করতে পারি৷''
এমন ত্রিমাত্রিক স্থাপত্য প্রিন্ট করার বিষয়টি সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েও গুরুত্ব পাচ্ছে৷ সেখানে অবশ্য আরও হালকা বস্তু নিয়ে কাজ চলছে৷ কৃত্রিম স্যান্ডস্টোন দিয়ে কম্পিউটার জটিল ডিজাইন তৈরি করছে৷ বিশেষ অ্যালগোরিদমের সাহায্যে প্রতিটি অংশ আলাদা করে মাপা হচ্ছে৷ ‘ডিজিটাল গ্রোটেস্ক' ওয়েবসাইটের মিশায়েল হান্সমায়ার বলেন, ‘‘আধুনিক যুগের আগেও এমন জটিল স্থাপত্য ছিল৷ গির্জার বিভিন্ন শৈলিতেই তা দেখা যায়৷ তবে তখন নির্মাণকাজের জন্য অনেক সময় লাগতো৷ অনেক বছরের পরিশ্রমের পর পাথর কেটে এমন অংশ তৈরি করা যেত৷''
জুরিখের থ্রিডি প্রিন্টার দুই দিনেই সূক্ষ্ম বালু দিয়ে একের পর এক স্তর তৈরি করে৷ বিশেষ ধরনের আঠা সেই স্তরকে কৃত্রিম পাথরে পরিণত করে৷ প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি ডিজাইন আলাদা করে স্থির করা সম্ভব৷
এক্ষেত্রে বিশেষ আধারের মধ্যেই প্রিন্টিং-এর কাজ চলে৷ তবে আমস্টারডামের রোবটদের সেই বাধ্যবাধকতা নেই৷ আরও জায়গার খাতিরে কোম্পানি শহরের উপকণ্ঠে এক গুদামঘরে চলে যাচ্ছে৷ এমএক্সথ্রিডি কোম্পানির টিম খোয়ের্টইয়েন্স বলেন, ‘‘আমরা সেতু দিয়ে কাজ শুরু করছি৷ প্রথমে ছোট সেতু, কারণ আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে৷ পরে দেখতে হবে, আর কী করা যায়৷ হয়ত নতুন ও আরও বড় সেতু৷ নির্মাণের অন্যান্য কাজও হবে৷ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে হয়তো একদিন গোটা বাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে৷''
২০১৭ সালের শুরুতে আমস্টারডাম শহরের কেন্দ্রস্থলে সেতু প্রিন্টিং শুরু হওয়ার কথা৷ প্রয়োজনীয় সব অনুমতি জোগাড় করতে ততদিন সময় লাগবে৷ কোম্পানির রোবটরা এই সময়কালে অনুশীলনের সুযোগ পাবে৷