1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দার্জিলিং-এ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা বেকায়দায়

২৫ মে ২০১০

গোর্খা লিগ নেতা মদন তামাং বেঁচে থাকতে যা করতে পারেননি, তাঁর নৃশংস খুনের পর তাই ঘটে গেল দার্জিলিং-এর পাহাড়ে৷ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার উপর আস্থা হারালেন, সমর্থন সরাতে শুরু করলেন সাধারণ মানুষ৷

https://p.dw.com/p/NWGk
মদন তামাং-এর মৃত্যু পরিস্থিতি বদলে দিয়েছেছবি: DW

মদন তামাং-এর মৃতদেহ নিয়ে শোকমিছিলে সোমবার যখন হাজার হাজার মানুষ স্বেচ্ছায় এসে যোগ দিচ্ছিলেন, তখনই বোঝা গিয়েছিল পাহাড়েও এবার পরিবর্তনের হাওয়া৷ শোকের পাশাপাশি সেই মিছিলে মিশে গিয়েছিল প্রচণ্ড ক্রোধ৷ নয়ত দার্জিলিং শহরে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পতাকা ছিঁড়ে নামিয়ে নেওয়া হচ্ছে, বিমল গুরুং-এর ছবিওলা হোর্ডিং টেনে নামিয়ে তাতে লাথি মারা হচ্ছে, দুদিন আগেও এটা ভাবা সম্ভব ছিল না৷ কিন্তু সোমবার সেই অঘটনটাই ঘটল৷ শোকমিছিল থেকে স্লোগান উঠল মোর্চার নেতাদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে৷ এবং মদন তামাং-কে হত্যার প্রতিবাদে, এক সঙ্গে পদত্যাগ করলেন মোর্চার প্রথম সারির ১০ নেতা৷

এই বিস্ফোরক মেজাজের আঁচ পেয়েই জেলা প্রশাসন মঙ্গলবার তড়িঘড়ি দার্জিলিংয়ে ১৪৪ ধারা জারি করে দেয়৷ মদন তামাং-এর জন্য একটি শোকসভা করতে চাইছিলেন মোর্চা নেতারা, পুলিশ অনুমতি দেয়নি৷ এর পরও বিস্ময়ের বাকি ছিল৷ কালিম্পং থেকে সদলে দার্জিলিং আসছিলেন বিমল গুরুং৷ তার কনভয় মাঝ রাস্তায় অবরোধের মুখে পড়ে৷ মোর্চা নেতৃত্ব যদিও এই ঘটনার কথা অস্বীকার করেছে৷ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি জোর গলায় বলেছেন, আসলে এ সবই গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনকে ব্যর্থ করার চক্রান্ত৷ কিন্তু সাধারণ মানুষ তাঁদের সঙ্গেই আছেন৷ মদন তামাং-এর শোকমিছিলে কয়েক হাজার মানুষ যোগ দিলে কিছু প্রমাণ হয় না৷ আর দলের নেতাদের পদত্যাগ প্রসঙ্গে রোশনের বক্তব্য, সেটাও অপপ্রচার৷ মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির যতজন নেতার ইস্তফার কথা বলা হচ্ছে, অতজন নেতা কমিটিতে ছিলেনই না৷

কিন্তু যত জোর গলায় সব অভিযোগ এদিন অস্বীকার করেছেন রোশন গিরি, ততই জোরালোভাবে তাদের কোণঠাসা অবস্থাটা বোঝা গেছে৷ পাহাড়ের মানুষ অনেকদিন ধরেই মোর্চার জঙ্গিপনায় তিতিবিরক্ত৷ লাগাতার বনধ-বিক্ষোভের জেরে পাহাড়ে পর্যটন শিল্প বলে আর কিছু নেই৷ দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এখন দার্জিলিং-কালিম্পং সভয়ে এড়িয়ে চলেন৷ পাশাপাশি মোর্চার জারি করা নিত্যনতুন ফতোয়ায় স্থানীয় মানুষ জেরবার হচ্ছিলেন৷ মদন তামাং-এর হত্যা তাদের সেই ক্ষোভ-বিরক্তিকেই একটা অভিমুখ দিয়েছে৷ এবার তাঁরা প্রতিবাদ করছেন৷

অথচ, মদন তামাং খুন হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত ধরে নেওয়া হয়েছিল, বিমল গুরুং – রোশন গিরি-রাই এখন পাহাড়ের রাজনীতির শেষ কথা৷ সুবাস ঘিসিং-এর মত মদন তামাং-ও এখন বাতিল অতীত৷

যদিও আলাদা গোর্খাল্যান্ডের দাবি মদন তামাং-এরও ছিল৷ কিন্তু সেই দাবি পুরণের নামে কথায় কথায় পাহাড়ে বনধ ডাকা. ব্যবসাপত্র শিকেয় তুলে দেওয়া, পর্যটকদের হয়রানি, এবং জঙ্গি রাজনীতির জেরে নিজেদেরই আর্থ সামাজিক ভবিষ্যৎ বিপন্ন করে তোলার যে বিপজ্জনক খেলায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা মেতেছিল, তাতে মদন তামাং-এর আদৌ সায় ছিল না৷ পাহাড়ে গণতন্ত্র ফেরানোর ডাক দিয়েছিলেন তিনি৷ নিজের জীবন দিয়ে শেষ পর্যন্ত সেই পথই তিনি করে দিয়ে গেলেন বলে অনেকেই এখন আশায় বুক বেঁধেছেন৷

প্রতিবেদন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন