ঝুপড়ি-কলোনিবাসী যখন ট্রাম্পকার্ড
২২ জানুয়ারি ২০২০সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লির ১৭৩১ টি অবৈধ কলোনিকে ‘বৈধ'করার ছাড়পত্র দিয়েছে৷ বেশ কয়েকজনের হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে সরকারি নথিও তুলে দেওয়া হয়েছে৷ বলা যায়, ঝুপড়ি ও কলোনি বৈধ ও অবৈধ বিষয়ের উপর ভর করে ভোট বৈতরণী পার হতে চাইছে কেন্দ্রের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি৷ উল্টোদিকে, অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন আম আদমি পার্টির বক্তব্য, ভোটের মুখে কাগজে বৈধকরণ নয়, বছরভর জরুরি পরিষেবা দেওয়াই উন্নয়ন৷ দিল্লিতে আপ-বিজেপি-কংগ্রেসের ত্রিমুখী লড়াই হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আপ ও বিজেপি৷
ঝুপড়ি, বস্তি মানেই সরু গলি৷ সর্বত্র আবর্জনা৷ ভেজা প্যাচপ্যাচে রাস্তা৷ কয়েক দশক ধরে এই ছবিতেই অভ্যস্ত সেখানকার বাসিন্দারা৷ দিল্লির সবচেয়ে বড় অবৈধ কলোনি দক্ষিণ দিল্লির সঙ্গম বিহার৷ সংলগ্ন সৈনিক ফার্মের বাসিন্দা সুকেশ কুমার মোটরবাইক মেরামতের দোকান চালান৷আরও একবার কেজরিওয়াল সরকারকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনতে চান তিনি৷ যুক্তি, পানীয় জল, নিকাশি, পার্ক, মহল্লা ক্লিনিকের মতো স্বাস্থ্য পরিষেবার অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে হবে যে৷
কথা হচ্ছিল পূর্ব দিল্লির সিলমপুর বিধানসভা এলাকার জেজে(জুগ্গি-ঝোপড়ি)কলোনির বাসিন্দা মাকসুদ ইসলামের সঙ্গে৷ পেশায় রাজমিস্ত্রি৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানালেন, ‘‘দিল্লিতে গত ৫ বছরে যদি কেই ভালো করার চেষ্টা করে থাকেন, তিনি কেজরিওয়াল৷ তাঁকে নানা ভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে৷ সব আমরা দেখেছি৷ কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে কাজ করতে বাধা দেওয়ার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করতে না পারলে আর কোথায় করবেন!''একই ছবি মায়াপুরি, মেহেরলি, নারায়ণা বিহার, বুদ্ধনগর প্রভৃতি এলাকাতেও৷
উত্তর-পূর্ব দিল্লির রাজা বিহার এলাকার জেজে কলোনির মুদি দোকানদার নরেশ সাহুর কথায়, ‘‘অবৈধ কলোনিকে বৈধ করার ঘোষণা দীর্ঘদিনের৷ ঝুপড়িবাসীদের অপেক্ষাও সুদীর্ঘ৷ এখন দিল্লি ডেভলপমেন্ট অথরিটি থেকে সরকারি নথি সংগ্রহের বার্তা পেয়েছি৷ ভালো লাগছে৷ তবে, ক্ষমতায় কেজরিওয়াল এলেই ভালো হবে৷''বিনোদ নগরের পীযূষ শর্মা, শাদিপুরের জি পি তিওয়ারিদের বক্তব্য, ‘‘দেশ, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি সরিয়ে রেখে গরিব মানুষের নিত্যদিনের প্রয়োজনের কথা ভাবলে বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের প্রথম পছন্দ আম আদমি পার্টি৷ লোকসভায় পছন্দ নরেন্দ্র মোদি৷''
অন্যদিকে, ভোটবাক্সে লাভবান হওয়ার লক্ষ্যে বিজেপি'র তরফে সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে, অবৈধ কলোনিকে বৈধ করার সিদ্ধান্ত তৃণমূলস্তরে পৌঁছে দেওয়ার৷ কীভাবে ১৭৩১টি ঝুপড়ির বাসিন্দাদের নামে নথি তৈরি হবে, সেসব প্রচার করা হচ্ছে৷
‘‘তথাকথিত অবৈধ কলোনিতে গত ৫ বছরে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে৷ আগে সরকার এসবে নজর দেয়নি৷ আমাদের সরকার দিল্লির ৯৩ শতাংশ কলোনিতে রাস্তা, পানীয় জল, নর্দমা তৈরির কাজ শেষ করেছে৷ এখন নতুন করে কলোনিকে বৈধ করার কথা বলে ভাঁওতা দিচ্ছে বিজেপি৷''
গত ১৬ ডিসেম্বর ডিডিএ কর্তৃপক্ষ ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস অধিকার যোজনা'সংক্রান্ত একটি ওয়েসাইট চালু করেছে৷ সরকারি নথি অনুযায়ী, তাতে ১,৭৬,০০০ জন নাগরিক নথিভুক্ত হয়েছেন৷ ৪,৫০০ জন নিজেদের নথিপত্র জমা দিয়েছেন৷ প্রায় ১৫০০ জনের দেওয়া নথি সরজমিনে খতিয়ে দেখা হয়েছে৷ এ যাবৎ মোট ২০জনকে সরকারি ভাবে পঞ্জিকৃত নথি দেওয়া হয়েছে৷
সেই ২০১৩, ২০১৫ সালে আপ-এর প্রধান ভোটব্যাঙ্ক ছিল এই ঝুপড়িবাসীরা৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এবার তার খুব একটা পরিবর্তন হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই৷ কারণ, জমির মালিকানা দেওয়ার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন৷ কিন্তু, পানীয় জল, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, সিসিটিভি, বিনামূল্যে ইন্টারনেট ইত্যাদি পরিষেবা দিতে গত ৫ বছরে বিপুল অর্থ খরচ করেছে কেজরিওয়াল সরকার৷ এই একটি কারণে বিজেপি'র ‘বৈধ কলোনি'র প্রকল্প ধাক্কা খেতে পারে৷ অপর প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস কোনো মতে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার দিকেই জোর দিচ্ছে৷ আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ৷