দোকানে দেখে অনলাইনে কিনবেন
১৬ মে ২০১৭অনলাইন শপিং, ই-কমার্স, মোবাইল কমার্স – নানা রকমের নাম দিয়ে একই বস্তু বোঝানো হচ্ছে: ইন্টারনেটে ছবি দেখে পণ্যের অর্ডার দিন; ভ্যান আর পিয়ন এসে কয়েকদিনের মধ্যেই বাড়িতে এসে ঈপ্সিত বস্তুটি পৌঁছে দিয়ে যাবে – আপনাকে না পেলে, পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীর কাছে রেখে যাবে৷ আপনি জিনিসটা পরে দেখলেন, ফিট করল কিংবা করল না, পছন্দ হল কিংবা হলো না – সোজা আবার প্যাকেটে পুরে পোস্টাপিস কিংবা হ্যার্মেসের দোকানে নিয়ে গিয়ে ফেরৎ পাঠিয়ে দিলেন৷
এভাবেই জার্মানিতে প্রতি তিনটি অনলাইন অর্ডারের মধ্যে একটি ফেরৎ যায় – দিনে সাকুল্যে প্রায় দশ লাখ প্যাকেট৷ এর নানা কুফলের মধ্যে প্রথমেই বলতে হয়, শনিবার কিংবা ছুটির দিনে বা অন্য কোনো উপলক্ষ্যে বাড়িতে থাকলে দিনের মধ্যে অন্তত পাঁচ-সাত বার ফ্ল্যাটবাড়ি তটস্থ করে আসে উর্দিপরা ড্রাইভার, কোনো না কোনো অনলাইন অর্ডারের ডেলিভারি দিতে৷ তার ভ্যান বাইরের ছোট রাস্তা ব্লক করে পার্ক করে, সে এসে যে কোনো বেল বাজায় – মানে যিনি অর্ডার দিয়েছেন, তাঁকে না পেলে৷ কেউ দরজা না খুললে ফয়ার কিংবা সিঁড়ির নীচে রেখেও চলে যায়৷
জার্মানিতে মাছি-মশা না থাকলেও, এই ডেলিভারি ভ্যানগুলো আর তাদের ড্রাইভাররা আছে – সেই সঙ্গে সারা দেশটা ভাসছে এই প্যাকেটের স্রোতে৷ প্যাকেট ফেরৎ পাঠানোয় ইউরোপে জার্মানরাই চ্যাম্পিয়ন৷ ফরাসিরা জার্মানদের অর্ধেকের কম প্যাকেট ফেরৎ পাঠান – তার একটা কারণ অবশ্য এই যে, ফ্রান্সের ৯০ ভাগ অনলাইন শপিং সংস্থা পণ্য পাঠানোর আগে পেমেন্ট পেতে চায়৷ অপরদিকে জার্মানিতে গ্রাহকদের দুই-তৃতীয়াংশ পণ্য হাতের পাবার পর বিল অনুযায়ী পেমেন্ট করেন৷ ২০১৪ সালের মাঝামাঝি থেকে জার্মানিতেও পণ্য ফেরৎ পাঠানোর জন্য চার্জ করা যায়, কিন্তু কোনো অনলাইন সংস্থাই তা করতে সাহস পাবে না৷
দিন বদলাচ্ছে
জার্মানিতে রিটেল ট্রেড বা খুচরো বিক্রি একের পর এক ধাক্কা খেয়ে চলেছে, আবার সেই ধাক্কা আংশিক সামলেও উঠছে – কিংবা উঠছে না৷ ১৯৫০ সাল থেকেই অটোর মতো মেইল অর্ডার কোম্পানিগুলি জন্ম নিতে শুরু করেছে আর জার্মানিতে ধুম উঠেছে যে, পাড়া ছোট দোকানগুলো তো বটেই, বাজারের বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বা সুপারমার্কেটগুলিরও এবার রুটিতে টান পড়বে৷
তারপর আসে শহরের বাইরে ফাঁকা মাঠে সুবিশাল শপিং মল তৈরির প্রবণতা – যেখানে মল-এর সামনে হাজার খানেক গাড়ির পার্কিং-এর জায়গা আছে৷ শহরের ‘মেইন স্ট্রিট' বা বাজারের বড় রাস্তার উপর তার প্রভাব পড়েছে বৈকি৷ কিন্তু অনলাইন শপিং প্রায় অন্য সব ধরনের বিপণীর বিপদ ডেকে এনেছে নানাভাবে: মানুষজন দোকানে গিয়ে জিনিসপত্র পরখ ও পছন্দ করেন, এমনকি ট্রায়াল রুমে গিয়ে পরে দেখে ও সাইজ ঠিক করে নেন – তারপর বাড়িতে ফিরে কম্পিউটার বা ল্যাপটপ – হালে মোবাইল থেকেই – ঠিক সেই জিনিসটাই অনলাইনে অর্ডার করেন৷ তাহলে রিটেইল স্টোর ও বিভিন্ন শিল্পের স্পেশাল আউটলেটগুলির কর্তব্য কী?
উত্তর হল ‘মাল্টি-চ্যানেল' বিক্রি: বাভেরিয়ায় যেমন বিপণীগুলির ৮০ ভাগ অনলাইনেও তাদের পণ্য বিক্রি করে থাকে৷ ‘অটো'-র মতো ১,১০০ কোটি ইউরো বিক্রির আন্তর্জাতিক মেইল অর্ডার কোম্পানিও আজ অনলাইনে সমানভাবে উপস্থিত৷ সেই সঙ্গে রিটেইল ট্রেডকে নবসাজে সাজতে হচ্ছে, তার জন্য যদি ‘ইনফো-ডিসপ্লে' লাগাতে হয়, তো তাই সই৷
তবে বন শহরের একটি ইলেকট্রনিক গুডস-এর দোকান নাকি ‘দেখবেন দোকানে, কিনবেন অনলাইনের' ধাক্কায় প্রায় দেউলে হতে বসেছিল – বিশেষ করে যখন এ ধরনের দোকানে খরিদ্দারদের নানা প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী রাখতে হয়৷ শোনা গেল, শুধু বনেই নয়, জার্মানির অন্যত্রও ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকানগুলি বৈদ্যুতিক পণ্যের নির্মাতাদের কাছ থেকে অর্থ দাবি করতে শুরু করেছে – একাধারে শেল্ফ স্পেস ও হবু ক্রেতাদের পরামর্শদানের জন্য৷ অর্থাৎ শেষমেষ ক্রেতাকে দোকানে পরখ করা ও পরামর্শ নেওয়ার মূল্য অনলাইনে পণ্য কেনার সময়েই চোকাতে হচ্ছে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷