1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধর্ষণের পক্ষেও জনমত!‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৬ এপ্রিল ২০১৮

জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়ার এক ৮ বছরের শিশুকন্যার গণধর্ষণের ঘটনা সারা ভারতকে বিচলিত করেছে৷ তার পরেও জনমত তৈরি হচ্ছে ধর্ষকদের পক্ষে!‌

https://p.dw.com/p/2w774
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/Pacific Press/E. McGregor

ওরা কেউ প্রকাশ্যে বলছেন, কেউ আড়ালে৷ কেউ ফেসবুকের পাবলিক পোস্টে, কেউ নিজেদের বন্ধুবৃত্তের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপ করে প্রচার করছেন৷ কাঠুয়ার ৮ বছরের শিশুকন্যার ধর্ষণ নিয়ে নানা যুক্তি, তর্ক৷ এর মধ্যে এক বেসরকারি ব্যাংকের কর্মীর বক্তব্য রীতিমতো ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল৷ সেই যুবক লিখেছিলেন, ‘‘‘‌ভালো হয়েছে, মেয়েটি ধর্ষিতা হয়েছে৷ বড় হলে তো বোমা বানাতো!’’ অর্থাৎ কাশ্মীরের মেয়ে যখন, এবং ধর্মত মুসলিম, নিশ্চিত জঙ্গিই হতো৷ এই মন্তব্যের যে তীব্র গণপ্রতিক্রিয়া হয়, তার জেরে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ওই যুবককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে৷ কিন্তু সবার ক্ষেত্রে এমনটা হচ্ছে না৷ তাদের কেউ প্রশ্ন তুলছেন, কী করে একটা মন্দিরের মধ্যে এমনটা হয়?‌ যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার পূণ্যার্থী যান, সেই জায়গায় দিনের পর দিন গণধর্ষণ কি আদৌ হতে পারে?‌ অর্থাৎ কুযুক্তির জাল বিছিয়ে এঁরা গোটা ঘটনার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন৷ এদেরই একটা অংশ ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে অভিযুক্তদের পক্ষে মিছিল করছেন৷ এবং এদেরই কেউ কেউ লাগাতার হুমকি দিচ্ছে মৃতা বালিকার পরিবারের হয়ে যে মহিলা উকিল আদালতে লড়ছেন, সেই দীপিকা রাজাওয়াতকে। নিজের কর্তব্যে অটল থেকেও দীপিকা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে এতটাই চিন্তিত যে, সুপ্রিম কোর্টে সুরক্ষার দাবি জানিয়েছেন তিনি৷ বলেছেন, তিনি ভয় পাচ্ছেন তাঁকেও ধর্ষণ করা হতে পারে, অথবা মেরে ফেলা হতে পারে৷

ধর্ষণ মূলত ক্ষমতার রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ, তার সঙ্গে যৌন পরিতৃপ্তির কোনও সম্পর্ক নেই: ধীমান দাশগুপ্ত

এই অসম্ভব এক বিষাক্ত আবহে গুজরাটের সুরাত থেকে খবর, ১১ বছর বয়সি একটি মেয়ের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া গেছে৷ অসংখ্য আঘাতের দাগ তার দেহে৷ এবং ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রমাণ হয়েছে, এই বালিকাও মৃত্যুর আগে ভয়ঙ্কর যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে৷ এই খবর পাওয়ার পর প্রাবন্ধিক, প্রাক্তন কর্পোরেট কর্তা ধীমান দাশগুপ্ত'র ফেসবুক পোস্টে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘‘‘‌আমি ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে চাই!‌’’ একের পর এক শিশুর যৌন নিগ্রহের ঘটনা এতটাই বিচলিত করেছে তাঁকে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানালেন, রাষ্ট্র হিসেবে, সেই রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে নিজেকে চূড়ান্ত ব্যর্থ মনে করছেন তিনি, যেখানে শিশুদের সুরক্ষাও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি৷ আর ধীমান দাশগুপ্তের মতে, ধর্ষণ মূলত ক্ষমতার রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ৷ তার সঙ্গে যৌন পরিতৃপ্তির কোনও সম্পর্ক নেই৷ যেভাবে কোনো দেশের সেনা যখন আরেকটি দেশ আক্রমণ করে, প্রথমেই ধর্ষিত হয় নারীরা, খুন করা হয় শিশুদের৷ এসবই চূড়ান্ত আধিপত্যের নিদর্শন রাখতে৷ এবং যেখানে পূর্ণবয়স্ক নারীর যৌননিগ্রহ অত সহজ থাকছে না, সহজ শিকার হচ্ছে প্রতিরোধহীন শিশুরা৷

রাষ্ট্র হিসেবে, নাগরিক হিসেবে এ এক চূড়ান্ত ব্যর্থতা: সুমন্ত্র মিত্র

এক কন্যাসন্তানের পিতা হিসেবে কতটা সন্ত্রস্ত বোধ করছেন?‌ ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে প্রশ্নটা রাখা হয়েছিল বৃহৎ বাণিজ্যের বিপণন বিশেষজ্ঞ সুমন্ত্র মিত্রকে৷ তিনি জানালেন, মেয়ের বাবা বলে নয়, তাঁর যদি মেয়ের জায়গায় ছেলেও থাকতো, তাহলেও তিনি একইভাবে শঙ্কিত হতেন, সেই সন্তানের ভবিষ্যৎ এবং সামগ্রিকভাবে গোটা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে৷ এবং তিনিও একই কথা বললেন যে, রাষ্ট্র হিসেবে, নাগরিক হিসেবে এ এক চূড়ান্ত ব্যর্থতা!‌ যেখানে শিশুদেরও রক্ষা করা যায় না৷

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সমাজের এক বড় অংশের এই সচেতনতা এবং সহানুভূতি সত্বেও একটা অংশের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে, যারা এই শিশু ধর্ষণের মধ্যে কোনো দোষ দেখতে পাচ্ছেন না৷ অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে তারা সবাই সেই মহান আইনি অজুহাত দিচ্ছেন যে, দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী ধরে নেওয়া অন্যায়৷ কাজেই ধৃতদের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে মিছিল করা, জাতীয় পতাকা হাতে ‘‌ভারত মাতা কি জয়'‌ বলাও তাদের কাছে ন্যায়সঙ্গত বলে মনে হচ্ছে!‌

এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই৷ তাই লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷