ধর্ষণ নিয়ে হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রাজনীতি
১২ এপ্রিল ২০১৮ঘোড়াকে ঘাস খাওয়াতে জঙ্গলে নিয়ে গিয়েছিল আট বছরের মেয়ে আসিফা৷ তার আর বাড়ি ফেরা হয়নি৷ যাযাবর বাখরওয়াল উপজাতির এই নাবালিকাকে এক সপ্তাহ ধরে গণধর্ষণ করে দুষ্কৃতীরা৷ তারপর না খাইয়ে ধর্মস্থানে আটকে রাখে৷ এখানেই শেষ নয়৷ বেহুঁশ করে খুন করার আগে আবারো ধর্ষণ করা হয় মেয়েটিকে৷
জম্মু ও কাশ্মীরের জোট সরকারের শরিক বিজেপি৷ তারা ইসলাম ধর্মালম্বী গুজ্জর বাখরওয়ালদের অধিকার কেড়ে নিতে চায় বলে অভিযোগ উঠেছে৷ এই দুই গোষ্ঠীর জনসংখ্যা কাশ্মীরের ১১ শতাংশ৷ গুজ্জররা দুধ ব্যবসায় নিযুক্ত হলেও বাখরওয়ালরা মূলত অরণ্যবাসী, যাযাবরের জীবনযাপন করে৷ এদের সঙ্গে জম্মুর সংখ্যাগুরু হিন্দুদের বিভাজন টানার রাজনৈতিক চেষ্টা চলছিলই৷ আর তাতে এবার ঘি ঢাললো আসিফার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা৷ জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ নাবালিকার গণধর্ষণ ও খুনের যে ১৫ পাতার চার্জশিট পেশ করেছে, তাতে ঘটনার ভয়াবহতা উঠে এসেছে৷ এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ এক নাবালকসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে৷ অভিযুক্তদের মধ্যে আছে৷ দীপক খাজুরিয়া নামের এক স্পেশ্যাল পুলিশ অফিসারও৷ যাযাবর সম্প্রদায়টিকে এলাকাছাড়া করতেই নাকি তাদের এই ঘৃণ্য ছক৷
১৭ জানুয়ারি জম্মু কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলায় আসিফার দেহ উদ্ধার হয়েছে৷ এই আড়াই মাসের তদন্তে পুলিশ যে তথ্য পেয়েছে, তাতে এই ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তুলনাদিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের সঙ্গে হতেই পারে৷ ‘নির্ভয়া কাণ্ড' নাগরিক সমাজে যে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিল, তাতে ভারতের ধর্ষণবিরোধী আইনেও পরিবর্তন এসেছিল৷ কিন্তু কাঠুয়া গণধর্ষণে তা কই? বরং হিন্দুত্ববাদীরা একে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷
এমনকি জম্মু হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের ভূমিকাও কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে ধৃতরা হিন্দু হওয়ায় আইনজীবীরা পুলিশকে চার্জশিট পেশ করতে বাধা দিয়েছে৷ আর এই বার অ্যাসোসিয়েশন সামনে রেখে বিজেপি কলকাঠি নাড়ছে বলে অভিযোগ৷ বারের ডাকে বুধবার বনধ পালিত হয়েছে জম্মুতে৷
রাজ্যের বনমন্ত্রী বিজেপি নেতা চৌধুরী লাল সিং বলেছেন, অরণ্য তিনি দখলমুক্ত করবেন৷ বনে চাষবাস করতে দেবেন না৷ অভিযোগ উঠছে, এই পরিকল্পনার লক্ষ্য যাযাবর বাখরওয়ালরা, যারা বছরভর বিভিন্ন অরণ্যে ঘুরে বেড়ায়, পশুপালন করে নিজেদের বাঁচার রসদ সংগ্রহ করে৷
রাজ্য সরকারে বিজেপির জোটসঙ্গী পিডিপির ভোটার এই সুন্নি মুসলিমরা৷ তাই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এ নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য করেননি৷ গুজ্জর বাখরওয়ালদের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় উপজাতি আইন অনুসারে আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না৷ এ নিয়ে রাজ্য সরকার পদক্ষেপ নিলে মামলা আদালত পর্যন্ত গড়াতে পারে৷
একদিকে উত্তর প্রদেশের উন্নাও গণধর্ষণে মূল অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ক দেদার ঘুরে বেড়াচ্ছে আর অন্যদিকে আসিফার সম্প্রদায় অধিকার হারানোর পথে৷ প্রশ্ন ওঠে, সত্যিই কি ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও'-এর দেশ ভারত? এর মধ্যেই কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী বলছেন, ‘বিজেপিসে বেটি বাঁচাও', অর্থাৎ বিজেপির হাত থেকে মেয়েদের বাঁচাও!
পিএস/এসিবি (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এনডিটিভি)