ধূমকেতুর পুলক
১৩ নভেম্বর ২০১৪অথচ রোজেটা মহাকাশ অভিযান গোড়া থেকেই নানা অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিল৷ পরিবহণ রকেটের সমস্যার দরুন উৎক্ষেপণ এক বছর পিছিয়ে দিতে হয় – অর্থাৎ গোড়ায় যে ধূমকেতুর উপর নামার কথা ছিল, সে পরিকল্পনা ত্যাগ করতে হয়৷ তা সত্ত্বেও গবেষক এবং প্রযুক্তিবিদরা অতি কম সময়ের মধ্যে একটি বিকল্প ধূমকেতু খুঁজে বার করেছেন, যার ফলে রোজেটা অভিযান সংঘটিত হতে পেরেছে৷
একেই বলা হয় গবেষণার বাস্তবিক উৎসাহ ও প্রেরণা, জার্মানি তথা ইউরোপের মানুষদের দৈনন্দিন কর্মজীবনে যার ছোঁয়াচ কখনো-সখনো মেলে – তাই মানুষজনের এতো উন্মাদনা৷ এ বছরের জানুয়ারি মাসে রোজেটা-কে যখন তার আড়াই বছরের ‘শীতনিদ্রা' থেকে জাগিয়ে তোলা হয়, তখন ডার্মস্টাট-এর ইউরোপীয় স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা সানন্দে পরস্পরকে আলিঙ্গন করেন৷ ফুটবল মাঠেও এ রকম উচ্ছ্বাস চোখে পড়ে কিনা সন্দেহ!
রোজেটা মহাকাশ অভিযান আমাদের নাড়া দেয়, কেননা এই পন্থায় আমরা মানব অস্তিত্বের কিছু বুনিয়াদি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি: জীবনের সূচনা কী থেকে এবং কী ভাবে? দার্শনিক বিচারে প্রশ্নটা এতোই গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ যে, তার প্রযুক্তিগত দিক যতোই জটিল এবং ব্যয়সাপেক্ষ হোক না কেন, মানুষ তা মেনে নিতে রাজি৷
ডার্মস্টাট-এর ‘ইসক' কেন্দ্রের প্রযুক্তিবিদদের ক্ষমতাও মেনে না নিয়ে উপায় নেই৷ রোজেটা-র সুদীর্ঘ যাত্রাপথে তাকে পৃথিবী এবং মঙ্গলগ্রহের টান ছাড়িয়ে তবে এগোতে হয়েছে – পরিভাষায় যাকে বলে ‘সুইং বাই'৷ এই সুইং বাই থেকেই রোজেটা ছ'শো কোটি কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করে চুরিউমভ গেরাসিমেঙ্কো বা ‘চুরি' ধূমকেতুর উপর নামতে পেরেছে৷ বলতে কি, সেই ‘নামতে পারাটাই' আসল কৃতিত্ব!
রোজেটা তার দশ বছরের যাত্রাপথে বহু অবিশ্বাস্য ছবি পাঠিয়েছে – নিজের ছবি, পৃথিবীর ছবি, মঙ্গলগ্রহের ছবি, আবার অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণুর ছবি৷ এছাড়া অবশ্যই ‘চুরি' ধূমকেতুর ছবি৷ এই সব ছবির মাধ্যমে কোটি কোটি কিলোমিটার দূরের একটি সাড়ে তিন কিলোমিটার বাই চার কিলোমিটার ধূমকেতুর জগতটা যেন আমাদের কাছাকাছি এসে পড়েছে! তারপর যখন শুনি, সেই বহুদূরের জগতটায় নাকি পৃথিবীর মতোই গন্ধ: পচা ডিমের মতো...