1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধ্বংসের মুখে কক্সবাজারের বন, কারণ রোহিঙ্গা ক্যাম্প

১৯ এপ্রিল ২০১৯

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রভাবে ধ্বংসের মুখে বাংলাদেশের কক্সবাজারের বন ও জীববৈচিত্র্য৷ সম্প্রতি দু'টি পৃথক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন চিত্র৷

https://p.dw.com/p/3H4Ud
Rohingya Flüchtlingslager
ছবি: Getty Images/P. Bronstein

কক্সবাজারে রয়েছে টেকনাফ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, হিমছড়ি ও ইনানী জাতীয় উদ্যানের মতো জীববৈচিত্র্যের এলাকা৷ কিন্তু ২০১৭ সালে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা আসার পর দুই হাজার হেক্টর বন ধ্বংস হয়েছে৷এই রোহিঙ্গারা আসার আগেও সেখানে অবস্থান করছিলেন মিয়ানমারের এই সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর আরো ৩ লাখ মানু্ষ৷

গত দেড় বছরে ছোট-বড় হাজার হাজার গাছ কাটা হয়েছে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প, ফার্নিচার তৈরি এবং রান্নার জ্বালানির জন্য৷  কক্সবাজার বন বিভাগের এক গবেষণা বলছে, উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় বন ধ্বংসের ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৮৬৫ টাকা, যদিও এর পরিবেশগত ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদি৷

‘‘বন ও গাছপালা ধ্বংস, মাটি ক্ষয়ে যাওয়া আর ভূমিধসের ঝুঁকি তৈরি করছে,'' বলেছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের অ্যাপ্লায়েড ইকোলজি অ্যান্ড কনজারভেশন রিসার্চ ল্যাবের পরিচালক শরীফ আহমেদ মুকুল৷

‘অ্যামেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স' সাময়িকীতে এ বিষয়ে সম্প্রতি ‘রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং পরিবেশ' শীর্ষক একটি প্রবন্ধ লিখেছেন শরীফ আহমেদ মুকুলসহ সাতজন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ৷

তাঁদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘কুতুপালং ক্যাম্পের বিস্তৃতির কারণে বিশ্বব্যাপী বিপদাপন্ন ‘এশিয়ান এলিফ্যান্টের' একমাত্র করিডরটি বন্ধ হয়ে গেছে৷ ফলে ওই ক্যাম্পের পশ্চিম প্রান্তে আটকা পড়েছে প্রায় ৪৫টি হাতি৷''

এসব কারণে সেখানে মানুষ আর হাতির মধ্যে সংঘাত বেড়ে গেছে বলে উল্লেখ করা হয় ওই নিবন্ধে৷ এখন পর্যন্ত হাতির হামলায় ১৩জন মানুষের প্রাণ গিয়েছে৷ অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে জ্বালানির কাঠ সংগ্রহের কারণে অবশিষ্ট হাতিগুলো রয়েছে শঙ্কার মধ্যে৷

মাটি এবং ভূমিধস টেকনাফ ও কুতুপালং এলাকায়  খুব সাধারণ ঘটনা৷ এসব ঘটনা সেখানকার পানি সম্পদ, সেচ এবং ভূগর্ভস্থ পানির সংরক্ষণকে প্রভাবিত করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে৷

গবেষক শরীফ আহমেদ বলেন, বর্তমানে রোহিঙ্গারা হর-হামেশাই বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে আর বিভিন্ন জলজ সম্পদ সংগ্রহ করতে যাচ্ছেন৷ তা জলজ উদ্ভিদ ও পরিবেশকে চাপের মধ্যে ফেলছে৷

‘‘ঘরের ও বাইরের বিভিন্ন আবর্জনা ফেলার কারণে পানি দূষণ হচ্ছে ভয়াবহ মাত্রায়৷ একই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানিতেও সেটা প্রভাব রাখছে৷ কারণ, খুব অল্প সময়েই এত বড় সংখ্যক রোহিঙ্গা এখানে পাড়ি জমিয়েছেন৷''

রোহিঙ্গা বসতির কারণে কক্সবাজার এলাকার পরিবেশ ধ্বংস নিয়ে আরেকটি যৌথ গবেষণা করেছে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিসিসিএডি) এবং ইন্টান্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্র্যান্টস (আইওএম)৷

সমতল ভূমির সঙ্গে মাঝারি পাহাড়ি এলাকার হওয়ায় উখিয়া ও ইনানী বন এলাকার টপোগ্রাফি বা ভূঃসংস্থান বৈচিত্র্যময়৷ সেখানকার প্রায় ১০ শতাংশ ভূমিতে বন্যার পানি আসে এবং সেটি বালি এলাকা৷

ওই গবেষণায় বলা হয়, ‘‘পরিবেশ যতটুকু না দিতে পারে, তার চেয়ে অনেক জ্বালানি কাঠের চাহিদা আছে সেখানে, যা বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের পর পরিস্থিতি আরো খারাপ করে দিতে পারে৷''

ইতিবাচক পরিবর্তন

বড় আকারে বন ধ্বংস হতে থাকলেও আইসিসিসিএডি-এর জরিপে জ্বালানিতে কাঠ ব্যবহার কমার চিত্র উঠে এসেছে৷ এতে দেখা যায়, এক বছর আগে ৮০ শতাংশ মানুষ প্রধান জ্বালানি হিসাবে কাঠ এবং ২০ ভাগ মানুষ গ্যাস ব্যবহার করত৷ কিন্তু বর্তমানে প্রধান জ্বালানি হিসাবে গ্যাসের ব্যবহার করছেন ৩৯ শতাংশ রোহিঙ্গা৷ প্রধান জ্বালানি হিসাবে এখনো কাঠ রয়েছে ৬০ শতাংশের কাছে৷ তাঁদের কেউ কেউ কেরোসিনও ব্যবহার করছেন৷

এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য রোহিঙ্গাদের বিকল্প জ্বালানির দিকে উদ্বুদ্ধ করার পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকরা৷ পাশাপাশি পতিত ও অব্যবহৃত জমিতে দ্রুত বর্ধনশীল গাছ রোপনের পরামর্শও তাঁদের৷

ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির গবেষক শরীফ আহমেদ বলেন, কক্সবাজারের পরিবেশের অবস্থা উন্নতির জন্য ক্যাম্প এবং ক্যাম্পের বাইরে ভূমি রক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় গাছ রোপণ করতে হবে৷ মানুষ আর হাতির সংঘাত এবং মৃত্যু থামাতে হাতিদের জন্য নিরাপদ করিডোর তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়েছে৷

সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেখানে গাছ লাগানো শুরু করলেও তাদের উদ্যোগ ‘বিচ্ছিন্ন ও অপর্যাপ্ত' বলে মনে করছেন তিনি৷ পরিবেশ রক্ষায় সবার মধ্যে সমন্বয়ের পরামর্শ তাঁর৷

কক্সবাজার বন বিভাগের (উত্তর) কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারণে এলাকার বন ও জীববৈচিত্র্যেরযে ক্ষতি হয়েছে সেটি অপূরণীয়৷ তবে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের কিছু চেষ্টা তাঁরা করছেন৷

এদিকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার মিজানুর রহমান বলেছেন, বন রক্ষার জন্য টেকসই প্রকল্প নিতে সরকার সব সংস্থাকে নির্দেশনা দিয়েছে৷ ‘‘তৃণমূল পর্যায়ের কাজ চলছে,'' ডেইলি স্টারকে বলেন তিনি৷

এমবি/এসিবি (ডেইলি স্টার)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য