‘নকল করে পাশ করেছেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী’
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১জার্মান সমাজে ডক্টরেট ডিগ্রির সম্মানই আলাদা৷ তাই উচ্চাভিলাষ থাকলে খেটেখুটে ডক্টরেট করতে পারলে আখেরে লাভই হয়৷ অন্যদিকে জার্মানির রাজনীতির জগতে প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে বেশিরভাগই আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, কেউ কেউ আবার পেশাদার আইনজীবী হিসেবে যথেষ্ট সুনামও কুড়িয়েছেন৷
৩৯ বছর বয়স্ক তরুণ প্রতিরক্ষামন্ত্রী কার্ল টেওডোর সু গুটেনব্যার্গ শুধু আইন নিয়ে পড়াশোনাই করেন নি, আইনের ক্ষেত্রে ২০০৭ সালে ডক্টরেট উপাধিও লাভ করেন৷ থিসিসের জন্য ভালো নম্বরও পেয়েছিলেন৷ উঠতি ও জনপ্রিয় এই তারকা রাজনীতিক একদিন দেশের চ্যান্সেলর হবেন, এমন সব জল্পনা-কল্পনা যখন শুরু হয়েছে, তখনই দেখা দিয়েছে এমন এক বিতর্ক, যা তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক পরিণতি বয়ে আনতে পারে৷
ঘটনার সূত্রপাত এইভাবে৷ ব্রেমেন শহরের এক অধ্যাপক গুটেনব্যার্গ'এর প্রায় ৪৭৫ পাতার ডক্টরেট থিসিস নাড়াচাড়া করছিলেন৷ এক জায়গার তাঁর কিছুটা খটকা লাগায় তিনি ইন্টারনেটে লেখার কিছু অংশ মিলিয়ে দেখেন৷ তারপর কেঁচো খুঁড়তে সাপ৷ লেখার মধ্যে কমপক্ষে ৯টি অংশ তিনি খুঁজে পান, যা অন্য কোনো লেখা থেকে হুবহু তুলে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এমনকি বেশ কিছু প্রথম সারির সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের অংশবিশেষও রয়েছে থিসিসের মধ্যে৷ নিয়ম অনুযায়ী ফুটনোটে তা স্বীকারও করা হয় নি৷ ‘স্যুডডয়চে সাইটুং' সংবাদপত্রে একটি প্রতিবেদনে এই খবর প্রকাশ হয়৷ তারপর দেশজুড়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়৷ বিশেষজ্ঞরা এবার সেই থিসিস আরও খুঁটিয়ে পড়তে শুরু করেছেন৷ তাদের ধারণা, অন্যের লেখা থেকে অন্যায়ভাবে নকল করার আরও অনেক উদাহরণ সেখানে পাওয়া যাবে৷
মন্ত্রী নিজে কী বলছেন? বলাই বাহুল্য, তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ৷ সেইসঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে নকল করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি৷ বলেছেন, থিসিসের প্রথম সংস্করণে কয়েকটি ক্ষেত্রে যদি ফুটনোট ছাপা নাও হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ সংস্করণে তা শুধরে নেওয়া হবে৷ এর মধ্যে আবার অঘোষিত সফরে আফগানিস্তান চলে গেছেন তিনি৷ এই সফর বিতর্ক থেকে দূরে থাকার জন্য কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়৷
বিরোধীরা কি এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে? তারা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তুমুল সমালোচনার ঝড় তুলেছে৷ জার্মান সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি কেলেঙ্কারির ফলে এমনিতেই কোণঠাসা হয়ে রয়েছেন৷ গুটেনব্যার্গ'এর নিজের খ্রিস্টীয় গণতন্ত্রী শিবির অবশ্য এই সংকটের সময় মন্ত্রীর পাশেই দাঁড়িয়েছে৷ তবে গুটেনব্যার্গ ও তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়কে যে গোটা ঘটনার জবাবদিহি করতে হবে, এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ খোদ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও এমনটাই আশা করছেন৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: ফাহমিদা সুলতানা