নতুন ভেন্যুতে যেমন চলছে ঢাকা বাণিজ্য মেলা
এবারই প্রথমবারের মতো স্থায়ী মেলা কমপ্লেক্সে বসেছে ২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা৷ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ আয়োজনে ১৯৯৫ সাল থেকে এ মেলার আয়োজন করে আসছে৷ নতুন ভেন্যুতে কেমন চলছে মেলা, দেখুন...
যাতায়াত ব্যবস্থা
ঢাকা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরের ভেন্যুতে পৌঁছাতে দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করেছে বিআরটিসি৷ ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ৩০টি বাস প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলাচল করছে৷ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে জনপ্রতি ৩০ টাকা৷
নতুন ভেন্যু
এবার বাণিজ্য মেলা পেয়েছে তার নিজস্ব ঠিকানা৷ ঢাকার উপকণ্ঠে পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের স্থায়ী কমপ্লেক্সে এবারই প্রথমবারের মতো মেলার আয়োজন করা হয়েছে৷ এক জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই মেলা চলবে মাসব্যাপী৷
প্রবেশে হুড়োহুড়ি
২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার প্রবেশপথে দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবকরা৷ কে কার আগে প্রবেশ করবেন চলছে যেন সেই প্রতিযোগিতা৷
টিকেট মূল্য
শুক্রবারও মেলায় কাউন্টারের সামনে তেমন ভিড় দেখা গেল না৷ একজন বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, অনলাইনে টিকেট কেনার ব্যবস্থা রাখায় মানুষ এবার কাউন্টারে ভিড় করছেন না৷ আট বছর ও তদুর্ধ্বদের জন্য প্রবেশ মূল্য ৪০ টাকা, আর চার থেকে আট বছর বয়সি শিশুদের জন্য রাখা হচ্ছে ২০ টাকা৷
কারা পণ্য
বাংলাদেশ জেল কর্তৃপক্ষের আয়োজনে জেলখানার কয়েদীদের বানানো পণ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে ‘কারা পণ্য’ নামের একটি স্টল৷ সেখানে ২৫ টাকা থেকে শুরু করে ৮০০০ টাকা দামের প্রায় ২০০ রকমের পণ্য আছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা৷ সুলভ মূল্য ও টেকসই উপকরণ হওয়ায় মেলার শুরু থেকেই তারা ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলেন জানান একজন বিক্রয় প্রতিনিধি৷
হারানো-প্রাপ্তির ঘোষণা
মেলায় আসা দর্শনার্থীদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতে বসানো হয়েছে ‘কন্ট্রোল সেন্টার’৷ বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি মেলাপ্রাঙ্গণে হারানো ও প্রাপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয় এখান থেকে৷ শিশু, পরিচয়পত্র, টাকা, লাইসেন্স বা চাবি হারানো-প্রাপ্তির ঘোষণা চলতে থাকে সার্বক্ষণিক৷
বিদেশি পণ্যের সমারোহ
২৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ভারত, তুরস্ক, থাইল্যান্ড, ইরানসহ ১১টি দেশের পণ্যের স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে৷ সব মিলিয়ে ২২৫টি স্টল দেশি ও আতর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে৷ মেলায় রয়েছে ক্রোকারিজ, মেশিনারিজ, প্লাস্টিক, দেশীয় বস্ত্র, কসমেটিক্স, অলঙ্কার, খেলনাসহ বিভিন্ন পণ্যের সমাহার৷
মানিব্যাগ, মোবাইল সাবধান
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার প্রায় প্রতিটি স্টলেই প্রবেশের সময় দর্শনার্থীদের ‘মানিব্যাগ, মোবাইল সাবধানে’ রাখার জন্য সতর্ক করছেন নিরাপত্তাকর্মীরা৷ দিল্লি ক্রোকারিজ স্টলের একজন নিরাপত্তারক্ষী বলেন, ‘‘কার উদ্দেশ্য কী তা বোঝা যায় না৷ এই ভীড়ে চুরির মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য সবাইকে সাবধান করা হচ্ছে৷’’
শিশুদের বিনোদন
মেলায় আসা শিশুদের বিনোদনের জন্য দুইটি ‘হাওয়াই চেম্বারের’ ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এখানে বিনামূল্যে প্রবেশ করে লাফঝাঁপ করে সময় কাটাতে পারে তারা৷ এতে শিশুরা যেমন খুশি, তেমনি অভিভাবকরাও সময় নিয়ে মেলায় কেনাকাটা করতে পারছেন৷
ছাড়ের ছড়াছড়ি নেই
নতুন ভেন্যুতে আয়োজিত বাণিজ্য মেলায় অন্যবারের মতো ছাড়ের ছড়াছড়ি দেখা যায়নি৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, এবার শুরু থেকে সরকার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করছে৷ এজন্য বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি এড়াতে কেউই তেমন ছাড়ের অফার দিচ্ছেন না৷
কেনাকাটায় মন্দা
মেয়েদের ব্যাগ, শালসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ভারতের রাজস্থান থেকে বাণিজ্য মেলায় এসেছেন দীনেশ ইসরানি৷ এ নিয়ে চারবার ঢাকার বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণ করছেন৷ কিন্তু এবার অন্যবারের মতো ক্রেতা পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি৷ তার মতে, এত দূরে ধনী খদ্দেররা আসেন না, যারা আসেন তারা সবাই মধ্যবিত্ত৷ তাই আগারগাঁয়ে যে ব্যবসা হতো এখানে তার অর্ধেকও হচ্ছে না৷ এভাবে চললে বড় লোকসানে আশঙ্কা তার৷
চড়া দাম
ঢাকার মিরপুর থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এসেছেন শামীম ও নাসরিন৷ সদ্য বিবাহিত এ দম্পতি জানান, নতুন সংসারের জন্য তারা এখানে শখ করে কেনাকাটা করতে এসেছেন৷ কিন্তু বিক্রেতারা বাজারের চেয়েও দ্বিগুন-তিনগুন বেশি দাম চাচ্ছেন বলে অভযোগ তাদের৷ তাই তেমন কিছু না কিনেই চলে যাচ্ছেন তারা৷
দুপুরের পরে ভিড়
বাণিজ্য মেলার রীতি অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে এবং বিকালের পর ভিড় বাড়তে দেখা যায়৷ মেলার শেষের সাতদিন ছাড়াও শুক্র ও শনিবার থাকে উপচে পড়া ভিড়৷
এক ছাদের নিচে গোটা আয়োজন
ঢাকার পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের ৩৩ হাজার বর্গমিটারের সুবিশাল ও দৃষ্টিনন্দন কমপ্লেক্সে চলছে মেলা৷ একাধিক দর্শনার্থী জানিয়েছেন, আগে আগারগাঁওয়ে উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে রোদে মেলায় ঘুরতে কষ্ট হতো৷ এখানে ছাদের নিচে প্রায় পুরো আয়োজন৷ এছাড়া মেলার পরিচ্ছন্নতা নিয়েও সন্তুষ্ট তারা৷
নেই স্বাস্থ্যবিধি
করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হলেও মেলায় প্রবেশের পর থেকেই স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব মানার তোয়াক্কা করতে দেখা গেল না অনেককে৷ মুখে মাস্ক নেই, ধাক্কাধাক্কি করে মেলায় প্রবেশ, স্টলগুলোতে উপচে পড়া ভীড়সহ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষার বিষয়গুলো সহজেই চোখে পড়ে৷
ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম
এবারের বাণিজ্য মেলার শুরু থেকেই জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে৷ ভোক্তারা যেন প্রতারণার শিকার না হন, তা নিশ্চিত করাই এ কার্যক্রমের অংশ বলে জানান সংশ্লিষ্টরা৷