1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নতুন মাদকে আসক্ত উচ্চবিত্তের সন্তানরা

২৯ আগস্ট ২০২১

বাংলাদেশে নতুন ধরনের মাদকের ব্যবহার বেড়েছে৷ আর নতুন ধরনের মাদকের ব্যবহারকারীদের অনেকেই উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তান৷ মাদক চোরকারবারিরা মাদকের নতুন নতুন রুট তৈরি করছে৷

https://p.dw.com/p/3zdey
Kampagne gegen Drogen Bangladesch
ছবি: AFP

ইয়াবার ব্যবহার তো থামেইনি, উপরন্তু দেশের বাইরে থেকে নতুন নতুন ধরনের মাদক আসছে৷ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গত ২২ আগস্ট ঢাকার বনানী ও উত্তরা এলাকায় কয়েকটি অভিযান চালিয়ে ক্রিস্টাল মেথ-আইস নামে এত ধরনের মাদক উদ্ধার করে৷গ্রেপ্তার করে ছয় জনকে৷ এরা সবাই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান৷ এর আগে ১৮ আগস্ট ঢাকার মোহাম্মদপুর ও যাত্রাবাগি এলাকা থেকে আধা কেজি আইস এবং ৬৩ হাজার পিস ইয়াবাসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা বিভাগ৷

করোনার সময় শুধু এই আইস নয়, এলএসডি, ডিএমটি এবং ম্যাজিক মাশরুম নামের নতুন নতুন মাদকের ব্যবহার বেড়ে গেছে বলে জানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশের গেয়েন্দা বিভাগ৷

র‌্যাব গত জুলাই মাসে ঢাকার হাতিরঝিল থেকে ম্যাজিক মাশরুমসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে৷

গত জুন মাসে ধানমন্ডি ও লালমাটিয়া থেকে এলএসডি মাদকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা বিভাগ৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়ের হাফিজুর রহমান নামে একজন ছাত্রের আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়েই এই মাদকের সন্ধান পায় তারা৷

‘‘এই নতুন ধরনের মাদকের বড় বাজার হচেছ অনলাইনে’’: মশিউর রহমান

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের ডেপুটি কমিশনার মশিউর রহমান বলেন,‘‘আগে আমরা ফেনসিডিল, গাঁজা ও ইয়াবার ব্যবহার বেশি দেখেছি৷ এখন ইয়াবার সাথে নতুন নতুন মাদকের ব্যবহারও দেখতে পাচ্ছি৷ আর এই নতুন ধরনের মাদকের বড় বাজার হচেছ অনলাইনে৷ বাংলাদেশেও এই ধরনের মাদকের অনলাইন গ্রুপ আছে যোগাযোগ ও কেনা বেচার জন্য৷ তবে বাংলাদেশে এই মাদক ঢোকে কুরিয়ার সার্ভিস বা আকাশ পথে৷ কিন্তু আশঙ্কার কথা হলো পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আসা শুরু হলে তা আরো ছড়িয়ে পড়বে৷''

তিনি জানান, ‘‘এই নতুন ধরনের মাদকের দাম অনেক বেশি হওয়ায় এখনো এটা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ৷ উচ্চপদস্থ একজন সরকারি কর্মকর্তার সন্তান যিনি ইউরোপের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন তিনি ঢাকায় এসে আইস মাদক চক্রে জড়িয়ে পড়েছেন৷ এরকম আরো অনেক ঘটনা আছে৷''

বাংলাদেশে এই নতুন ধরনের মাদক যে আগে ছিলো না, তা নয়৷ তবে এর আগে দুই-একবার ধরা পড়লেও দীর্ঘ সময় আর দেখা যায়নি৷ কিন্তু করোনার সময় আবার দেখা যাচ্ছে এবং তা ভয়বহ আকারে দেখা যাচ্ছে৷ মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহাকারী পরিচাল মেহেদি হাসান জানান, ‘‘২০০৯ সালে একবার আমরা আইস মাদকসহ কয়েকজনকে আটক করেছিলাম৷ আর এলএসডি মাদক প্রথম ২০১৯ সালে আমরা উদ্ধার করি৷ এরপর আরো অনেক পাওয়া গেছে৷''

তিনি জানান, ‘‘আইস এখন মিয়ানমার থেকেও আসা শুরু করেছে৷ আমার দেখতে পাচ্ছি যারা ইয়াবার কারবার করে তারাই আবার আইস কারবারের সাথে জড়িয়ে পড়ছে৷ আর এক গ্রাম আইস এখানে ১০-১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়৷ ফলে এটা উচ্চবিত্তদের সন্তানরাই বেশি সেবন করছে৷ মাদক কারবারিরা এখন নতুন রুট ও কৌশল কাজে লাগচ্ছে৷''

‘‘মাদক কারবারিরা এখন নতুন রুট ও কৌশল কাজে লাগাচ্ছে’’: মেহদি হাসান

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমাদের দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে মাদক সেবীরা তাদের স্বাদের পরিবর্তন চায়৷ ফলে তারা নতুন মাদক চায়৷ তেমনি ব্যবসায়ীরাও মূল উপাদান ঠিক রেখে নতুন নামে এবং স্টাইলে মাদক বাজারে ছাড়ে৷'' আর করোনার কারণে ঘরে থাকায় অনলাইনে মাদকসেবীরা এইসব নতুন নতুন মাদকের খোঁজ বের করে বলে জানান মশিউর রহমান৷

তবে এই দুইজন কর্মকর্তার কেউই মাদকের ব্যবহার বেড়েছে তা বলছেন না৷ তাদের কথা এটা গবেষণা করে বের করতে হবে৷

মাদক দ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার(মানস) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা এখন ৭৫-৮০ লাখ৷ কয়েক দুই বছর আগে যেটা ৭০ লাখের নিচে ছিলো৷ মাদকাসক্তদের ৯০ ভাগের বয়সই ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে৷

মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গত বছর মোট ৫৭ হাজার ১৩৪টি মাদক মামলা করেছে৷ গ্রেপ্তার করেছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৪৩ জনকে৷ তারা এই সময়ে উদ্ধার করেছে ৯ ধরনের মাদক৷ এর বাইরে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করে৷