নতুন হৃদযন্ত্র, নতুন জীবন
১৪ জুন ২০১৬...এসেছে সেই দিন, সেই মুহূর্ত৷ পেশেন্টের নতুন হৃদযন্ত্রটি তার স্পন্দন শুরু করেছে৷ পেশেন্টের নতুন জীবন শুরু হচ্ছে৷ কার্ডিয়াক সার্জন ড. মার্কুস বার্টেন বলেন, ‘‘হ্যাঁ, সকলেই সে কথা ভাবেন৷ সব হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট পেশেন্টের কাছে তাদের অপারেশনের দিনটা তাঁদের দ্বিতীয় জন্মদিন৷''
লাইপসিগের হার্ট সেন্টার বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট ক্লিনিকগুলোর মধ্যে পড়ে৷ কিন্তু সব রোগীর জন্য ডোনর হার্ট পাওয়া কঠিন৷ যত হৃদযন্ত্রের প্রয়োজন, তার মাত্র অর্ধেক দান করা হয়ে থাকে৷ কাজেই ডাক্তার ও গবেষকরা অন্য কোনো বিকল্পের খোঁজ চালাচ্ছেন৷
ডোনর হার্ট বা দান করা হৃদযন্ত্র দুষ্প্রাপ্য হওয়ার ফলে গবেষকরা বিজ্ঞানের পথ ধরেছেন৷ তাঁরা ইঁদুরের হার্টের স্টেম সেল কালচার করে এমন একটি টিস্যু সৃষ্টি করেছেন, যা হার্টের মতোই স্পন্দিত হয়৷
কার্ডিয়াক সার্জন প্রফেসর স্টেফান ডেইন বলেন, ‘‘এখানে যা দেখছেন, তা হলো একটি কৃত্রিম হার্ট টিস্যু৷ সেটা একটা গোল আধারে ফেলে বৈদ্যুতিক আর যান্ত্রিক ইমপালস দিলে ১৪ দিনের মধ্যে এ ধরনের একটা স্পন্দিত রিং পাওয়া যায়৷''
জন্তুজানোয়ারদের নিয়ে পরীক্ষা করে ভালো ফল পাওয়া গিয়েছে৷ ইলাস্টিক রিংটি একটি ইঁদুরের রুগ্ন হার্টের ওপর পরিয়ে দিলে হার্টের দুর্বল পেশিগুলো রিংয়ের স্পন্দন থেকে সাহায্য পায়৷
অন্য পন্থা
ইঁদুরের ক্ষেত্রে যা করা সম্ভব, মানুষের ক্ষেত্রে তা করা অতটা সহজ হবে না৷ জার্মান আইন অনুযায়ী ভ্রুণ পর্যায়ের ‘স্টেম সেল' সংগ্রহ করা নিষিদ্ধ৷ কিন্তু গবেষকরা অন্য পন্থা ধরছেন৷ প্রফেসর ডেইন বলেন, ‘‘মানুষের জন্য এ কাজ করার আগে মূল সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কোথা থেকে স্টেম সেলগুলো নেওয়া হবে – পরে সে স্টেম সেলগুলোর কোডও বদলে দেওয়া যেতে পারে৷ শরীরের মেদ বা চুল, এমনকি অণ্ডকোষ থেকেও তা নেওয়া যেতে পারে৷ সেটা করা সম্ভব হলেই এই প্রযুক্তি বেশ তাড়াতাড়ি মানুষের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে৷''
ড. বার্টেন বলেন, ‘‘পরে আরো কী হতে পারে, তা ভাবতে গেলে বলতে হয়: মানুষের হৃদযন্ত্রের জন্য এরকম একটা রিং সৃষ্টি করা যেতে পারে – যা হলে দারুণ হয়! তাহলে আর নানা ধরনের যান্ত্রিক পাম্প বসানোর প্রয়োজন পড়বে না, হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টের প্রয়োজন পড়বে না৷ তাহলে একটা বিরাট কাজ হবে৷ কাজেই এই গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে৷''
যতোই জরুরি হোক না কেন, মার্কুসকে গত তিন মাস ধরে একটি ডোনর হার্টের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে৷ অথচ যে কোনো দিন তার অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে, যে অপারেশন করাই হয়ত আর সম্ভব হবে না৷
হার্টের রোগী মার্কুস জানেন, ‘‘আমি আর এখান থেকে বেরতে পারব না; অথবা এখান থেকে বেরনোর আগে হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট করাতে হবে, নয়ত বেরনো যাবে না৷ এটা মেনে নিতে পারলে আর ততটা খারাপ লাগে না৷''
লাইপসিগে বছরে প্রায় ৩০টা হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট অপারেশন হয়, গোটা জার্মানিতে ৩৮০টি৷ কে জানে, হয়ত কালই মার্কুসের জন্যও একটি নতুন হৃদযন্ত্র পাওয়া যাবে৷