নাগরিকত্ব নির্ধারণই এখন মূল কাজ
৩১ আগস্ট ২০১৭অবৈধ বাংলাদেশিদের নিয়ে ঢাকায় বাংলাদেশ ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে দু'দিনের বৈঠক ছিল মঙ্গল ও বুধবার৷ তবে প্রথম দিনের বৈঠকের শেষ পর্যায়েই এসওপি চূড়ান্ত হয়ে যায়৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইউরোপ (পশ্চিম) অনুবিভাগের মহাপরিচালক খোরশেদ খাস্তগীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এসওপি চূড়ান্ত করেছি৷ তবে এর কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নাই৷ এখন একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করবো, যার আওতায় আমাদের প্রথম কাজ হবে তালিকা অনুয়ায়ী ন্যাশনালিটি নিশ্চিত হওয়া৷ তারপরই ফিরিয়ে আনার বিষয়টি সামনে আসবে৷''
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দাবি, ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৯৩ হাজার ৪৩৫ জন বাংলাদেশিকে অবৈধভাবে প্রবেশের সময় আটক করা হয়েছে৷ চলতি বছর আটক হয়েছেন আট হাজার৷ তাঁরা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশে এক লাখ অবৈধ বাংলাদেশি আছেন৷ এর আগে এঁদের ফেরত না নিলে বাংলাদেশিদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের কথা বলেছিল ইইউ৷ সবাংলাদেশও তাঁদের ফেরত আনতে সম্মত হয়৷ তবে কী প্রক্রিয়ায় তাঁদের ফেরত আনা হবে, সেটাই নির্ধারিত হয়েছে ঢাকার এই বৈঠকে৷
খোরশেদ খাস্তগীর বলেন, ‘‘জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আগে থেকেই আমাদের নাগরিকরা আছেন৷ সেটা নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল না৷ মূলত লিবিয়া থেকে সাম্প্রতিক সময়ে ইটালিতে বেশ কিছু বাংলাদেশি অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছে৷ সে কারণেই চাপ সৃষ্টি হয়েছে৷ নয়ত এত বেশি চাপ সৃষ্টি হতো না৷''
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ‘ইইউ-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬ সালে ৮ হাজার ২০০ জন এবং ২০১৭ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ৮ হাজার ৫০০ জন বাংলাদেশি ইটালিতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন৷'
অন্যদিকে ২০১৬ পর্যন্ত ১৭ হাজার ৩০০ বাংলাদেশি ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন এবং এর মধ্যে ১১ হাজার ৮০০ জনের আবেদন খারিজ করা হয়েছে৷ বাকি ছয় হাজার আবেদনের অধিকাংশ খারিজ হবার সম্ভাবনা আছে৷ খারিজ হওয়া এই আবেদনকারীদের ইউরোপে অবস্থান করার কোনো অধিকার নেই এবং তাঁদের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাইয়ের প্রেক্ষিতে এঁদের সবাইকে ফেরত নিয়ে আসা হবে বলে জানা গেছে৷
নাগরিকত্ব বা ন্যাশনালিটি নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ একটি অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানান খোরশেদ খাস্তগীর৷ এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনও নেয়া হবে৷ প্রক্রিয়াটি কেমন হবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘‘দেশের অভ্যন্তরে একাধিক মন্ত্রণালয়কে নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে৷ নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই করার জন্য নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেস, ইমিগ্রেশন অফিস, পাসপোর্ট অফিসের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বিশেষ সেল গঠনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে এই এসওপিতে৷''
খোরশেদ খাস্তগীরের কথায়, ‘‘আমরা আমাদের দেশের স্বার্থ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিচেনায় রেখে কাজ করছি৷ এটা করতে গিয়ে আমাদের অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে৷ আমরা প্রতিটি বিষয় সঠিকভাবে চেক করে দেখবো৷''
ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনো সময়সীমা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয় নিয়ে কাজ করছি৷ তাই সবকিছু এখনই বলতে পারছি না৷''
২০১৬ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্য বাদে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য ২৭টি দেশে প্রায় দু'লাখ বৈধ ভিসাধারী বাংলাদেশি অবস্থান করছেন যাঁদের সেখানে থাকার এবং কাজ করার অনুমতি আছে৷ ইউরোপে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি অবস্থান করছেন যুক্তরাজ্যে৷
২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি ইউরোপীয় দেশগুলোতে বৈধভাবে কাজের জন্য ‘ওয়ার্ক পারমিট' বা স্থায়ীভাবে থাকার জন্য ‘রেসিডেন্সি পারমিট' পেয়েছেন৷
ঢাকায় স্ট্যান্ডার্ড অফ প্রসিডিওর নিয়ে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয়) কামরুল আহসান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে নেতৃত্ব দেন এশিয়া প্যাসিফিক বিভাগের ডেপুটি ম্যানাজিং ডিরেক্টর পলা পামপোলানি৷
বন্ধু, প্রতিবেদনটি নিয়ে আপনার কোনো মন্তব্য থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷