1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নাগরিকপঞ্জি ও জনসংখ্যাপঞ্জি নিয়ে ধোঁয়াশা ইচ্ছাকৃত?‌‌

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
২ জানুয়ারি ২০২০

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পর ভারতে আম জনতার মধ্যে মুখ্য আলোচ্য বিষয় এনপিআর এবং এনআরসি। এই দুই-‌কে এক করে দেখছেন বিরোধীরা। সরকার বলছে, সম্পর্ক নেই। তা সত্ত্বেও রয়ে গেছে অস্পষ্টতা।

https://p.dw.com/p/3VbPF
Indien, Neu-Delhi: Protestierende Jamia Milia Islamia Studenten
ছবি: DW/A. Ansari

ভারতজুড়ে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি(‌এনআরসি)‌ এবং জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জি(‌এনপিআর)‌ নিয়ে ধোঁয়াশা চলছেই। জিইয়ে রাখা হচ্ছে ধন্দ। তবে সবটাই ইচ্ছাকৃত।

একদিকে সরকার ও শাসক দলের অভিযোগ, বিরোধী দলগুলো আম জনতা এবং সংখালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করছে। আন্দোলনের নামে হিংসা ছড়িয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে বিরোধীদের অভিযোগ, সরকারের মন্ত্রী থেকে শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির নেতারাই জনগণকে বোকা বানাচ্ছেন। সবমিলিয়ে ধন্দ রয়েছে ধন্দের জায়গাতেই।

‘‌মোদী-‌ওয়ান'‌ সরকারের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, কিরণ রিজিজুরা পরপর ন'‌বার সংসদে বলেছেন, ‘‌‘‌এনপিআর-‌ই এনআরসি'‌র প্রথম ধাপ।'‌'‌ পরে ‘‌মোদী-‌টু'‌ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদের দুই কক্ষ লোকসভা ও রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে জোর গলায় বলেছেন, ‘‘‌সারা দেশে নাগরিকপঞ্জি চালু করবে সরকার।'‌'‌ এমনকী, সম্প্রতি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভ, আন্দোলনের আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর দিল্লির রামলীলা ময়দানে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বললেন, ‘‌‘‌এনআরসি নিয়ে কোনও আলোচনা শুরুই হয়নি। মানুষকে বিভ্রান্ত করছে বিরোধীরা।'‌ পরদিন আবার অমিত শাহ টিভির পর্দায় এলেন। জানালেন, ‘‌‘‌জনসংখ্যাপঞ্জির তথ্য এনআরসি-‌তে ব্যবহার করা হবে না।'‌'‌ এতকিছুর পর আবার এলেন এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। বললেন, ‘‌‘‌জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি তৈরির সময় জনসংখ্যাপঞ্জি বা এনপিআর-‌এর তথ্য ব্যবহার করা হতে পারে,‌ আবার না-ও হতে পারে।'‌'‌ স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে জল্পনা, ধোঁয়াশা বা ধন্দ জিইয়ে রাখছে কারা।কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ববান মন্ত্রীদের একের পর এক এ হেন ভাষণ ও ঘোষণায় যারপরনাই বিভ্রান্ত সাধারণ মানুষ। বিরোধীদের অভিযোগ, আম জনতাকে বিভ্রান্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে বিজেপি।

সুগত হাজরা

ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুগত হাজরা বলেছেন, ‘‌‘‌বিরোধীদের দিকে আঙুল তুলে সরকার তার দায় এড়াতে পারে না। বিরোধিরা তো বিরোধিতা করবেনই। ধোঁয়াশা দূর করার দায়িত্ব সরকার ও শাসক দলের। তা না করে সরকার পক্ষ ধর্মীয় মেরুকরণ চাইছে। আরও হতাশাজনক ব্যাপার হল, সরকার জ্বলন্ত আগুনে জল ‌ঢালার পরিবর্তে ঘি-ঢালছে!‌'‌'‌

এখন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পর দেশজুড়ে যেভাবে তার বিরোধিতা চলছে, তাতে পিছপা হওয়ার পরিবর্তে বিতর্কে এনআরসি এবং এনপিআর ইস্যু জুড়ে দিয়ে বিজেপি বিভিন্ন রাজ্যে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টায় আরও সক্রিয় হবে। এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের। এনপিআরে বায়োমেট্রিক নেওয়া হবে কিনা তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। সরকার সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গ, কেরল-‌সহ কয়েকটি রাজ্যে জনসংখ্যাপঞ্জি তৈরির সময় বায়োমেট্রিক নেওয়া হবে। কিন্তু, তা কেন?‌ সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর মেলেনি।

অপরদিকে নিজের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে ‘‌ইন্ডিয়া সাপোর্টস সিএএ'‌ হ্যাশট্যাগ চালু করেছেন নরেন্দ্র মোদী। লিখেছেন, ‘‌কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে এই আইন নয়। বরং ধর্মীয় কারণে বিতাড়িত ও উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দিতেই এই আইন।'‌ আরও লিখেছেন ‘‌এই হ্যাসট্যাগ থেকে নমো অ্যাপে গিয়ে সিএএ সংক্রান্ত বিষয় দেখুন। শুনুন। ব্যাপক প্রচার করুন। সিএএর-‌র সমর্থনে এগিয়ে আসুন।'‌ অর্থাৎ, একটা বিষয় আপাতত স্পষ্ট, তা হল এনপিআর-‌এনআরসি বিতর্ক জিইয়ে রেখেই সিএএ নিয়ে ব্যাপক ভাবে প্রচার চালাতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার ও বিজেপি। অথচ, এই আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে শুধু উত্তরপ্রদেশেই ১৯জনের মৃত্যু হয়েছে।