1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌নাট্যচর্চায় যৌন নিগ্রহ, উদাসীন প্রশাসন

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৬ অক্টোবর ২০১৭

সরকার পরিচালিত মিনার্ভা রেপার্টরির নাট্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যৌন হেনস্থার অভিযোগ৷ কিন্তু সরকারের তরফে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেই কেন?‌

https://p.dw.com/p/2ltTW
Symbolbild Kindesmisshandlung Bestrafung
ছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul

অপরাধ কার্যত মেনে নেওয়া হলেও মিনার্ভা রেপার্টরির নাট্য প্রশিক্ষক, নাট্য কর্মশালার ছাত্রীদের যৌন হেনস্থার দায়ে অভিযুক্ত প্রেমাংশু রায়ের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো উদ্যোগই নেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের৷ অথচ এই সরকারই মমতা ব্যানার্জিকে জড়িয়ে একটি ব্যাঙ্গচিত্র চালাচালির অপরাধে এক অধ্যাপককে বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে তুলে এনে হাজতবাস করায়, তাঁর বিরুদ্ধে অশালীনতার মামলা দায়ের করে৷ তাই এবার প্রশ্ন উঠছে, কেন এমন গুরুতর এক অভিযোগের ক্ষেত্রে সরকার শুধুমাত্র অভিযুক্ত প্রশিক্ষককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েই নিশ্চিন্ত, নিশ্চেষ্ট রইল?‌ কেন স্থানীয় বা রাজ্য প্রশাসন আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হলো না?‌ কেনই বা রাজ্যের একজন মন্ত্রী, যিনি নিজেও একজন নাট্য ব্যক্তিত্ব, এবং যাঁর নাম করে অভিযুক্ত প্রশিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের হুমকি দিতেন বলে শোনা গেছে, তিনি কেন নাট্যচর্চার এই কলঙ্কমোচনে এগিয়ে এলেন না?

Panchali Kar - MP3-Stereo

এমনকি যে নাট্যকর্মীরা মানবিক তাগিদে, বিবেকের তাড়নায় আইনি সাহায্য চাইতে এগিয়ে গেছেন, তাঁদের সম্প্রতি যে অভিজ্ঞতা, তা-ও আদৌ স্বস্তিজনক নয়৷ বর্ধমানে মিনার্ভা রেপার্টরি পরিচালিত নাটকের ওয়ার্কশপ করতে গিয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা হলো যে সব তরুণ-তরুণীর, তাঁরা চেয়েছিলেন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক অভিযুক্ত প্রশিক্ষকের৷ কারণ নিজের পদের এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে যিনি নোংরামি করতে পারেন, তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়াই যথেষ্ট নয়৷ এই ছাত্র-ছাত্রীরা কর্মশালার অন্য প্রশিক্ষকদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তাতে ওই প্রশিক্ষককে আর ক্লাস না নিতে বারণ করা হয়েছিল মাত্র৷ তাতে ক্ষিপ্ত প্রশিক্ষক রাজ্যের এক মন্ত্রীর সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠতার কথা বলে সবাইকে ‘‌দেখে নেওয়া'‌-র হুমকি দিয়েছিলেন৷ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের অভিযোগ তুলে ধরেন৷ তখন রাজ্য সচিবালয় থেকে এক প্রতিনিধিদল বর্ধমান গিয়ে অভিযুক্ত প্রেমাংশু রায়কে প্রশিক্ষকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়৷ কিন্তু আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না৷ এবার ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়া এক ছাত্র এবং বাংলার গ্রুপ থিয়েটারের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত একজন নাট্যকর্মী নিজেরাই বর্ধমান থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন৷

পাঞ্চালী কর নামে যে নাট্যকর্মী স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তিনি ডয়চে ভেলেকে জানালেন, প্রথমদিন বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়েরের সময় পুলিশের তরফ থেকে যথেষ্ট উৎসাহ দেখানো হয়৷ কিন্তু থানার ইন্সপেক্টর ইন চার্জ সেদিন না থাকায় ডায়েরির কপি তাঁদের দেওয়া হয়নি৷ পরদিন আবার যখন থানায় যান ওঁরা, পুলিশের দিক থেকে সহযোগিতার অভাব এবং আপাত ঔদাসীন্য ওঁদের অবাক করেছে৷ অথচ আইনের পথে লড়বেন বলেই ওঁরা পুলিশে গেছেন, যে নাট্যকর্মী ন্যায়বিচারের দাবিতে কলকাতার অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের সামনে অনশন শুরু করেছিলেন, তাঁকে অনুরোধ করে অনশন উঠিয়ে নিয়েছেন৷ কিন্তু অন্যদিকে প্রশাসনের তরফে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার যে অনাগ্রহ, তাতে তাঁরা আহত৷ পাঞ্চালী জানালেন, তাঁরা এখনও আশায় আছেন যে সরকার এক্ষেত্রে সদর্থক ভূমিকা নেবে৷ কিন্তু তা যদি না হয়, তা হলে নাট্যকর্মীরা আরও বেশি সংখ্যায় বিক্ষোভ, অনশনে সামিল হবেন৷

এদিকে অভিযুক্ত নাট্য প্রশিক্ষক প্রেমাংশু রায় কি এই ঘটনার পর এতটুকু অনুতপ্ত?‌ আদৌ নয়৷ রবিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবের ফটকের সামনে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে করা এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বরং জানিয়েছেন, বহু নাটকের নির্দেশক তিনি, চারটি সিনেমাও বানিয়েছেন৷ তাঁর এই সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়েই তাঁকে অপদস্থ করা, তাঁর বদনামের এই চক্রান্ত৷ এর বিরুদ্ধে তিনি আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ দাবি করেছেন, নাট্য কর্মশালা চলাকালীন মদ্যপান করা বা ছাত্রীদের ফোনে, মেসেজে কুপ্রস্তাব দেওয়ার যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে, সেগুলি একটিও প্রমাণ করা যাবে না৷ না, দোষ স্বীকার, দুঃখপ্রকাশ, ক্ষমাপ্রার্থনা — কোনো লক্ষণই ছিল না এই বক্তব্যে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য