নানা রঙে উদ্ভাসিত বইমেলা
বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলা চলছে ঢাকার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। শুধু বই কেনাবেচা নয়, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির নানান দিক উদ্ভাসিত হচ্ছে এই আয়োজনে। ছবিতে দেখুন বইমেলার নানান রঙ।
গ্রামীণ ঘরের আবহ
বাঁশের বেড়া ও ছন দিয়ে বানানো গ্রামীণ ঘরের আকৃতিতে আকাশ প্রকাশনীর নান্দনিক প্যাভিলিয়ন জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাইরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ছোট ছোট হারিকেন। সেলফি ও ছবি তুলতে এখানে দিনভর পাঠক-দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে।
বইমেলায় কার্জন হল!
ইউরোপ ও মোগল স্থাপত্য রীতির দৃষ্টিনন্দন সংমিশ্রণে সাজানো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক কার্জন হলের আদলে কালচে লাল রঙের প্যাভিলিয়ন বানিয়েছে অন্যপ্রকাশ। ওপরে বহির্ভাগের চারদিকে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের কাটআউট রয়েছে।
বাঁশের বইঘর
এবারের বইমেলায় বাঁশ দিয়ে বানানো বেশকিছু স্টল চোখে পড়ছে। বাঁশের বেড়া দিয়ে বানানো শ্রাবণ প্রকাশনীর স্টলে প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি দরজা। দুই পাশে দুটি কাঁচের জানালা। ভোরের শিশির এবং কোয়ান্টাম স্টল দুটিতেও ব্যবহার হয়েছে বাঁশ ও বেত।
রিকশাচিত্রের লোকশিল্প
নবান্ন প্রকাশনীর বাংলাদেশ রিকশা আর্ট সোসাইটির সৌজন্যে স্থান পেয়েছে বাংলা সিনেমা ও প্রকৃতির বিভিন্ন ধরনের ছবি। এছাড়া রয়েছে রিকশায় বসে একটি ছেলের বই পড়ার পেইন্টিং। লোকশিল্পকে তুলে ধরতেই এই আয়োজন।
বইয়ের মতো প্যাভিলিয়ন
বেশ কিছু বইয়ের আদল দিয়ে সুন্দর প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। দেখলে মনে হবে যেন কয়েকটি বইয়ের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এটি৷ ওপরে একপাশে কিছু বই দাঁড় করিয়ে রাখা। আরেক পাশে খোলা বইয়ে লেখা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিপাদ্য।
কচিকাঁচাদের কলকাকলী
প্রতি শুক্র ও শনিবার সকাল ১১টায় শুরু হয় বইমেলা। শেখ রাসেল চত্বরে এই দুই দিন থাকে শিশু প্রহর। এ সময় শিশু-কিশোরদের কলকাকলীতে মুখর হয়ে ওঠে মেলা। হাতেখড়ি মঞ্চে ছবি তুলতে দেখা যায় অনেককে। সপ্তাহের অন্যান্য দিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে অমর একুশে বইমেলা।
বই অনুদান
মেলায় আসা দর্শনার্থীরা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য বই অনুদান দিচ্ছেন। কেউ কেউ বই কিনে দান করছেন, কেউবা বই কেনার জন্য নগদ টাকা দিচ্ছেন। অনুদান হিসেবে পাওয়া বই বুকসেলফে সাজিয়ে রাখা হয়।
আঁকিয়ে নিন স্কেচ
মেলার বিভিন্ন স্থানে দর্শনার্থীদের স্কেচ এঁকে দিচ্ছেন বেশ কয়েকজন চিত্রশিল্পী। প্রতিটি স্কেচের জন্য নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। দর্শনার্থীরা চাইলে নিজেদের মুখাবয়ব আঁকিয়ে নিতে পারেন। পুকুরপাড়ে দুই শিল্পীকে স্কেচ আঁকতে দেখা যায় প্রতিদিন।
কবির আঁকা চিত্রকর্ম
তরুণ কবি জাহিদ সোহাগ লেখালেখির পাশাপাশি ছবিও আঁকেন। কাগজ প্রকাশনের স্টলে নিজের আঁকা চিত্রকর্ম বিক্রির জন্য রেখেছেন তিনি। প্রতিটির মূল্য ৫ হাজার টাকা।
দেয়াল ক্যানভাস
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল ফটকের একপাশে হরেক রকম দেয়াল বোর্ড বিক্রি হচ্ছে। পিভিসি বোর্ডের ওপর বিখ্যাত তারকাদের মুখাবয়ব, সিনেমা ও ওয়েব সিরিজের পোস্টার, কবিতার লাইনসহ নানান বিষয় দিয়ে সাজানো হয়েছে এগুলো।
ইতিহাসে ফিরে তাকানো
পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্সের স্টলের সাজে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা। এর মধ্যে রয়েছে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও অগ্নিঝরা মার্চসহ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ।
বঙ্গবন্ধুর বাড়ি
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর প্যাভিলিয়ন একটি বাড়ির আদলে সাজানো হয়েছে। দেখলে মনে হবে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়িটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মেলায়! নীচে বেশ কিছু টবে গাদা ফুলের সমারোহ।
মাতৃদুগ্ধ কেন্দ্র
শিশু সন্তান নিয়ে আসা মায়েদের সুবিধার্থে মেলায় রয়েছে মাতৃদুগ্ধ পান কেন্দ্র। এর দরজায় পর্দা টানানো। শ্রী শ্রী কালীমন্দির অংশে এটি রেখেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
পুকুরপাড়ে কিছুক্ষণ
বইমেলায় দর্শনার্থীদের অনেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পুকুরপাড়ে বসে সময় কাটান। সামনে দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীনতা স্তম্ভ। পুকুরে এর প্রতিবিম্ব বেশ মনোরম।
স্টল বিন্যাস
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশমুখের পাশে এবং তথ্যকেন্দ্রের একপাশেসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বইমেলার স্টল বিন্যাস। এখান থেকে কোন স্টল কোথায় এবং পার্কিং, খাবারের দোকান, টয়লেটসহ কোথায় কী আছে সেসব জেনে নেওয়া যাচ্ছে।
আগুন নেভানোর গেমস
গতবারের মতোই ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তিতে আগুন নেভানোর গেমস দেখাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। বইমেলায় অস্থায়ী ফায়ার স্টেশন বসিয়েছে এই সংস্থা। তাদের বুক স্টলে অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কিত কয়েকটি বই রয়েছে। সেইসঙ্গে অগ্নিনির্বাপক গাড়িও রেখেছে ফায়ার সার্ভিস।
প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা
মাথা ব্যথা, অল্প কাটা-ছেঁড়াসহ প্রাথমিক অসুস্থতা সারিয়ে তুলতে সিভিল সার্জন অফিস থেকে একজন চিকিৎসক সার্বক্ষণিক আছেন। তিনি প্রথম ১৪ দিন থাকবেন। পরের ১৪ দিন অন্য আরেকজন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করবেন।