নারীদের মুষ্টিযুদ্ধে স্বর্ণ জয়ের স্বপ্ন আফগান মেয়েদের
২ জানুয়ারি ২০১২২০০৭ সালে আফগানিস্তানের জাতীয় অলিম্পিক কমিটির উদ্যোগে শুরু হয় নারীদের জন্য মুষ্টিযুদ্ধ প্রশিক্ষণ৷ সেখানে মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন মুষ্টিযুদ্ধে সাবেক চ্যাম্পিয়ন মোহাম্মাদ সাবের শারিফি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বকে দেখিয়ে দিতে চাই যে, আফগান নারীরাও সেরা হতে পারে৷ তারা সবকিছুই পারে, এমনকি মুষ্টিযুদ্ধও৷'' দেশটির অলিম্পিক কমিটি ছাড়াও স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘কো-অপারেশন ফর পিস অ্যান্ড ইউনিটি' নারী মুষ্টিযোদ্ধাদের এই দলটিকে আর্থিকভাবে সহায়তা করছে বলে জানান শারিফি৷
তবুও মুষ্টিযোদ্ধাদের জন্য সরবরাহকৃত সরঞ্জামাদির অবস্থা বেশ করুণ৷ একটি সাদামাটা শরীরচর্চা কেন্দ্রের মধ্যে তারা অনুশীলন করছেন৷ সেখানে থাকা আয়নাগুলো ভাঙাচোরা৷ দেয়ালের প্রলেপও কিছু কিছু জায়গায় খসে গেছে৷ শক্ত মেঝের উপর রং চটা কার্পেট৷ এমনকি অনুশীলনের সময় এতোটা ধুলা ওড়ে যে, কেউ কেউ সেটা থেকে বাঁচতে নাকের উপর মুখোশ বা ঢাকনা পরেন৷ তবুও সকল সীমাবদ্ধতা মোকাবিলা করে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন সাহসী আফগান নারীরা৷
১৮ বছর বয়সি সাদাফ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘এটা আমার স্বপ্ন যে আমি মুষ্টিযোদ্ধা হবো৷ প্রথম দিকে আমার বাবা তাতে রাজি হননি৷ তিনি বলতেন যে, মেয়েদের মুষ্টিযুদ্ধ করা উচিত নয়৷ তবে আমি প্রথম পদক জয়ের পর তিনি তাঁর মত পাল্টান৷''
সপ্তাহে তিন দিন মেয়েরা গাজি স্টেডিয়ামে যান মুষ্টিযুদ্ধ অনুশীলনের জন্য৷ অথচ এই স্টেডিয়ামটি তালেবান শাসনামলে প্রকাশ্য শাস্তি দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো৷ তাদের দৃষ্টিতে অবৈধ যৌন সম্পর্কের জন্য নারীদের এখানে এনে প্রকাশ্যে পাথর ছুঁড়ে মারা হতো৷ সেই কথা স্মরণ করে সাদাফ বলেন, ‘‘তালেবান সরকারের আমলে আমাদের পরিবার ইরান পালিয়ে গিয়েছিল৷ তবে আমি শুনেছি, এখানে নারীদের হত্যা করা হতো৷ তাই আমি যখন এখানে একা অনুশীলন করি তখন সেই নির্মম নির্যাতনের কথা ভেবে আতঙ্কিত হই৷''
যাহোক, এমন অবস্থায়ও অনুশীলন চালাচ্ছেন এবং তাঁরা স্বপ্ন দেখছেন ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিক আসর থেকে স্বর্ণ পদক জয়ের৷ অবশ্য লন্ডন আসরে লড়াই করার আগে তাদেরকে আগামী মে মাসে চীনে অনুষ্ঠিতব্য বাছাই পর্বে উত্তীর্ণ হতে হবে৷ অবশ্য শবনম গত বছরে তাজিকিস্তানে আন্তর্জাতিক আসরে স্বর্ণ পদক লাভ করেন এবং ছোট বোন সাদাফ জিতেছিলেন রৌপ্য পদক৷ তাই লন্ডন আসরের ব্যাপারেও তারা বেশ আশাবাদী৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক