নারীর প্রতি সম্মান দেখালে কী হয়?
১৬ অক্টোবর ২০২০বেগমগঞ্জে নিজের মেয়ের সামনে মাকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হলো৷ ধর্ষকরা কি মানুষ না পশু? সুস্থ মস্তিষ্কের কোনো মানুষ এমন কাজ করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস হয় না৷ অভিনেতা, ব্যবসায়ী, স্যোশাল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব অনন্ত জলিলের মতো মানুষও ধর্ষণের কারণ হিসেবে মেয়েদের পোশাকের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন,যেন মেয়েরা পোশাকের কারণে বা নিজের দোষেই ধর্ষিত হয়৷
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের কথা না-ই বা বলালম, তিনি তো ধর্ষণের অভিযোগ তোলা নারীকে ‘দুশ্চরিত্রহীন' বলেছেন৷ এতে তিনি সমালোচনার মুখে পড়ে এখন গোঁজামিল দিয়ে তা কাটানোর চেষ্টা করছেন ৷ হায়রে! মেয়েদের প্রতি সম্মান দেখাতে কি খুব বেশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন হয়? মোটেই না, কারণ, পারিবারিক শিক্ষাই মানুষের জীবনের শিক্ষার মূল ভিত্তি গড়ে দেয়, যাকে আমরা জীবনের প্রথম স্কুলও বলে থাকি৷ আর সেই গোড়াতেই যদি গলদ থেকে যায় তাহলেআর কখনো মনে হয় শোধরানো হয়ে ওঠে না৷
বাঙালি হিসেবে আমরা কে না জানি যে, পরিবারের ভেতর ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের আলাদা চোখে দেখা হয়৷ পরিবারের ছেলেরা তো ‘বংশের বাতি', তারা মা-বাবাকে রোজগার করে খাওয়াবে, দেখাশোনা করবে আর মেয়েরা তো চলে যাবে পরের বাড়ি! কাজেই খাওয়া-দাওয়া, লেখাপড়া সব ব্যাপারেই সকলের মনোযোগ থাকে ছেলেদের প্রতি৷ আজকাল যদিও পরিস্থিতি অনেক বদলেছে,ছেলে এবং মেয়ে উভয়েই সমানভাবে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে৷ আমার ছেলেবেলায় দেখা পরিবারের ভেতর ছেলে-মেয়েদের মধ্যে অন্য কোনো বিষয়ে বৈষম্য না থাকলেও লেখাপড়া ব্যাপারে কিন্তু ঠিকই বৈষম্য করা হয়েছে৷ ভাইদের উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড, অ্যামেরিকায় পাঠানো হয়েছে আর মেয়েদের বেলায় শুনেছি উচ্চশিক্ষিত পাত্রের কাছে বিয়ে দিতে হবে৷
যা-ই হোক, ছেলেকে বেশি সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে এরকম অনেক মা-বাবাকে বুড়ো বয়সে ছেলেদের বাড়িতে না থেকে মেয়েদের সংসারে থাকতে দেখা যায় আজকাল৷ কিন্তু এতে কি মানুষের মানসিকতায় তেমন পরিবর্তন এসেছে? আমার কিন্তু মনে হয় না৷ নানাভাবে নারীদের প্রতি পুরুষদের অসম্মান আর বৈষম্য দেখে মনে হয়, আমরা এখনো অ-নে-ক পিছিয়ে আছি৷
নারীর প্রতি সম্মানবোধের অভাব কিন্তু কম-বেশি সব দেশেই রয়েছে৷ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মতো পরিবারের মধ্যে ছেলে আর মেয়ের মধ্যে পার্থক্য করা জার্মানির মতো উন্নত দেশেও ছিল অনেক আগে৷ আর সেটা জার্মান প্রবীণদের সাথে কথা বললে বেশ ভালোভাবে বোঝা যায়৷ ধর্ষণ আর গৃহ নির্যাতনের ঘটনা এদেশেও একেবারে কম নয়! তবে এখন সময় পাল্টেছে , বদলে গেছে পরিস্থিতি৷
যেহেতু এরকম একটি দেশে সমাজ ব্যবস্থা আলাদা, আইনের প্রতি মানুষ শ্রদ্ধাশীল, তাই অপরাধীরা কোনো ক্ষেত্রেই সহজে পার পেতে পারে না৷
আমরা বাঙালিরা বিদেশিদের পোশাক-আশাক, সাজগোজ, আধুনিকতা কত কী-না ফলো করি, কিন্তু আমাদের মনটাকে কি পেরেছি বিদেশিদের সাথে মেলাতে? অ্যামেরিকায় বহু শিক্ষিত বাঙালির বাস৷ জার্মানিতে জন্ম ও বড় হওয়া আমাদের একমাত্র মেয়ে সন্তান অ্যামেরিকায় পড়াশোনাকালীন বাঙালিদের কাছ থেকে ওকে শুনতে হয়েছে, ওর কোনো ভাই নেই কেন কিংবা ওর ভেতরে ভয়ভাব নেই কেন- এরকম নানা প্রশ্ন৷ আমরাও কি পারি না বিদেশিদের মতো আমাদের মনটাকেও কিছুটা পরিস্কার করে মেয়েদের আরো একটু বেশি সম্মান জানাতে? পারিনা নারীকেও পুরুষের মতো শুধু মানুষ ভাবতে? আমার মনে হয়, শুধু পোশাক বা আধুনিকতায় নয় , পরিবর্তন আনতে হবে আমাদের মগজে আর হৃদয়ে!