নারীশিক্ষার দাবিতে আফগানিস্তানে বিক্ষোভ
২৩ ডিসেম্বর ২০২২সম্প্রতি নোটিস জারি করে নারীদের শিক্ষার অধিকার রদ করেছে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার৷ নোটিস দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা তাদের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি আরেকটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ষষ্ঠ শ্রেণির পর মেয়েরা আর স্কুলে যেতে পারবে না৷ এরপর থেকেই আফগানিস্তানজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে৷
পশ্চিম আফগানিস্তানে ঘোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নাজিফা জাকি ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘আমি অবাক৷ একটা গোটা প্রজন্মের অর্ধেক মানুষকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে৷’’ কাবুলের মাসুদা জানিয়েছেন, ইসলামিক এমিরেটস মেয়েদের সঙ্গে অন্যায় করছে৷ ন্যূনতম অধিকারটুকুও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে৷
খাতায় কলমে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্য়ন্ত নারীশিক্ষার অধিকার দেওযা হলেও গত দুইদিনে দেখা গেছে, বহু স্কুল থেকে সমস্ত নারী ছাত্রীকে বের করে দেওযা হযেছে৷ কাজ হারিযেছেন বহু শিক্ষিকা৷ বিভিন্ন এলাকায় স্কুলের অধ্যক্ষদের নিযে বৈঠক করেছেন মসজিদের প্রধানেরা৷ সেখানে বলা হযেছে, নারীরা স্কুলে শিক্ষকতার কাজ করতে পারবেন না৷ তাদের মসজিদেও যেতে দেওয়া হবে না৷ যদিও এই সিদ্ধান্তের কথা এখনো তালেবান প্রশাসন সরকারিভাবে জানায়নি৷ কিন্তু বাস্তবে তেমনটা ঘটতে শুরু করে দিযেছে৷
আফগানিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের সাবেক প্রধান শাহারজাদ আকবর ডিডাব্লিউকে জানিযেছেন, ‘‘যে দেশে সমাজের অর্ধেক মানুষকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হয, সে দেশ কখনোই সাবলম্বী হতে পারে না৷ আফগানিস্তানে অনাহার আরো বাড়বে৷’’ বস্তুত, গত দুইবছর ধরে প্রবল খাদ্যসংকটে ভুগছে আফগানিস্তান৷ পরিস্থিতি এমনই যে এ বছর শীতে দুই কোটি ৩০ লাখ আফগান খাদ্যসংকটে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে৷
তালেবানের এই সিদ্ধান্তের পর গোটা দেশজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে৷ বহু জায়গায় পরীক্ষার হল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন পুরুষ ছাত্ররা৷ নানগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে প্রতিবাদ করেছেন ছাত্ররা৷ তাদের পিটিয়ে তুলে দেওয়া হয়েছে৷ বহু জায়গায় নারীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন৷
বেশ কিছু জায়গায় পুরুষ শিক্ষকেরা কাজ ছেড়ে দেয়ার নোটিস দিয়েছেন৷ কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক ওবাইদুল্লাহ ওয়ারদক জানিয়েছেন, তিনি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। ‘‘নিজের বিবেকের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ মেনে নিতে পারছিলাম না এই সিদ্ধান্ত৷ তাই পদত্যাগ করেছি,’’ ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন গণিতের শিক্ষক৷ তার মতো আরো অনেক শিক্ষক চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন বলে জানা গেছে৷
বস্তুত, আন্তর্জাতিক মহলেও এনিয়ে আলোড়ন শুরু হয়েছে। জাতিসংঘ এর তীব্র প্রতিবাদ করেছে৷ অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য-সহ একাধিক দেশ প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করেছে৷ অ্যামেরিকা জানিয়েছে, তালেবানকে এর ফল ভোগ করতে হবে৷
ওয়াসলাত হাসরাত-নাজিমি/এসজি