নারী সৌন্দর্য যখন ক্যামেরায় বন্দি
১ ডিসেম্বর ২০১৬মিহায়েলা নোরোক প্রতিদিন বেরোন তাঁর কাজে, বড় রাস্তায়, খোলামেলা পাবলিক চত্বরে৷ তাঁর কাজ হলো মহিলাদের ছবি তোলা৷ ২০১৩ সাল যাবৎ তিনি ৫০টির বেশি দেশ সফর করেছেন এই কাজে৷ তাঁর লক্ষ্য হলো, তিনি সত্যিকারের সৌন্দর্যকে ক্যামেরার লেন্সে ধরে রাখবেন৷ এমন সব মহিলা যাদের তিনি মিয়ানমারে দেখেছেন, অথবা রুমেনিয়ার বুখারেস্টে, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায়, ফিনল্যান্ডে, ইকুয়েডরে....মিহায়েলা বলেন, ‘‘মেয়েদের মুখ একটা রহস্য৷ আমি আজও জানি না, রাস্তাঘাটে আমি তাদের মুখে কী দেখি, যা আমাকে মুগ্ধ করে৷ যদি কেউ আমার চোখে পড়ে, আমি তার ভেতরে কিছু একটা অনুভব করি, কোনো ধরনের রসায়ন কিংবা শক্তি, যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়৷ তখন আমি সেই মেয়েটির ছবি তোলার চেষ্টা করি৷''
২৭ বছর বয়সে রুমেনিয়ার মেয়ে মিহায়েলা বুখারেস্টের একটি টিভি প্রোডাকশন কোম্পানিতে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে, যা কিছু সঞ্চয় ছিল, তা সঙ্গে নিয়ে বেরোন তাঁর একটি আইডিয়াকে বাস্তবে পরিণত করতে৷ ‘দ্য অ্যাটলাস অফ বিউটি' বা সৌন্দর্যের মানচিত্র, এই হলো তাঁর প্রকল্প৷ এ-কাজে শত শত মহিলাদের ছবি তুলেছেন তিনি৷ কেপটাউনের বস্তিতে এক মাংস-বিক্রেতা মহিলার ছবি; এক ভারতীয় মহিলার ছবি, যার বয়স একশ' ছুঁই ছুঁই করছে; এক জার্মান মহিলার ছবি, যিনি দু-দু'বার ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে জিতেছেন...৷
মিহায়েলা নোরোক তাঁর ফটোগ্রাফিতে মহিলাদের প্রশান্তি, আনন্দ আর শক্তিকে ধরে রাখতে চেয়েছেন৷ মিহায়েলা বলেন, ‘‘মিডিয়া ঘাঁটলে দেখবেন যুদ্ধের মানচিত্র, সমস্যার মানচিত্র৷ আমি যেটা দেখানোর চেষ্টা করছি, সেটা হলো এই যে, তা দিয়ে পরিস্থিতি বদলানো যাবে না৷ আমাদের মেনে নিতে হবে যে, সব সত্ত্বেও জীবন সুন্দর৷''
‘অ্যাটলাস অফ বিউটি'
মিহায়েলা নোরোক তাঁর ছবি আর কাহিনিগুলি অনলাইনে দেন৷ ফেসবুকে তাঁর প্রকল্পের ফ্যান আজ ন'লাখের কাছাকাছি৷ টামব্লর-এ তাঁর ব্লগ আজ এই প্ল্যাটফর্মে যে সব ব্লগ সবচেয়ে বেশি শেয়ার করা হয়, তাদের মধ্যে পড়ে৷ ৩০ বছর বয়সি মিহায়েলা তাঁর প্রকল্পের কাজ চালান প্রধানত ক্রাউডফান্ডিং-এর মাধ্যমে৷ মিহায়েলা জানালেন, ‘‘আমি এমন সব মানুষের খোঁজ করছি, যারা আমাদের আশা দেবার ক্ষমতা রাখে, অন্যদের প্রেরণা দেবার ক্ষমতা রাখে৷ যারা তাদের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যকে দেখাতে পারে, যা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ মহিলাদের মধ্যে যে শক্তি আছে, সেটাই আমি তুলে ধরার চেষ্টা করছি৷''
মিহায়েলা নোরোক উত্তর কোরিয়া সফর করেন ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে৷ অসাধারণ সফর! তিনি উত্তর কোরিয়ার মহিলাদের দৈনন্দিন জীবন দেখাতে চেয়েছিলেন৷ এমন একটি বিচ্ছিন্ন দেশ, যা শুধু তার রাজনীতির মাধ্যমে সারা বিশ্বে আগ্রহের সঞ্চার করে৷ মিহায়েলা এখানে বিশজনের বেশি মহিলার ছবি তোলেন, যা তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি৷ মিহায়েলার ভাষ্যে, ‘‘উত্তর কোরিয়া সফর করার সময় সবসময় আমার সঙ্গে একজন গাইড থাকত, কাজেই অভিজ্ঞতা কিছুটা ফিলটার্ড ছিল বলতে হয়৷ তবুও আমি আশ্চর্য হই যে, আমি মহিলাদের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি, তাদের রাস্তায় থামিয়ে আমার প্রকল্পের জন্য তাদের ছবি তুলতে পেরেছি, যা আমার খুবই ইন্টারেস্টিং লেগেছে৷''
মিহায়েলা নোরোক তাঁর প্রকল্পে নানা ধরনের মহিলাদের ছবি তুলেছেন৷ কিন্তু তাঁর কাছে সৌন্দর্য বলতে কী বোঝায়? মিহায়েলা বললেন, ‘‘সৌন্দর্য খুবই বিচিত্র৷ একবার তাকানো, হাত মেলানো, একটি হাসির মধ্যে সৌন্দর্য থাকে৷ আমি জানি না, হয়ত একটা শক্তি, আমাদের চারপাশে৷ শুধু মনোযোগী হতে হবে, দেখার জন্য মন খোলা রাখতে হবে, কেননা সৌন্দর্য তো সর্বত্র, হয়ত পাশ দিয়ে চলে যাবে অথচ আপনি খেয়ালই করবেন না৷''
মিহায়েলাকে তাঁর প্রকল্প আরো অনেক জায়গায় নিয়ে যাবে, সামনে পরিকল্পনা আছে সুইজারল্যান্ড, জাপান ও মেক্সিকো যাত্রার৷ তাঁর ‘অ্যাটলাস অফ বিউটি', সৌন্দর্যের মানচিত্র বই হিসেবেও ছাপা হয়ে বেরোতে চলেছে৷৷
কিয়র্স্টিন শুমান/এসি