নিউরোডার্মাটাইটিস
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩জার্মানির প্রায় ১৫ শতাংশ শিশু ও তিন শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ নিউরোডার্মাটাইটিসে আক্রান্ত৷ সাধারণত শিল্পোন্নত দেশগুলিতেই রোগটির প্রকোপ দেখা যায়৷ এটি একটি ক্রনিক অসুখ৷ আক্রান্ত জায়গা লাল হয়ে ফুসকুড়ির মতো দেখা যায়৷ শুরু হয় চুলকানো, যা রীতিমতো এক অত্যাচার৷ রোগীকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে এই অসুখ৷ আর চুলকানোর ফলে ঘা ও সংক্রমণের সৃষ্টি হয়৷ বিস্তৃত হয় রোগটি৷ আস্তানা গাড়ে ব্যাকটেরিয়ারা৷
সাময়িক প্রশমন হয় মলমে
চিকিত্সার জন্য সাধারণত কর্টিসন মলম দেওয়া হয়৷ এই ওষুধের আবার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম নয়৷ এতে ত্বক পাতলা হয়ে যায়৷ শরীরের কোষ সংবেদনশীল হয়ে পড়ে৷ তাই দীর্ঘস্থায়ী কোনো সমাধান হতে পারে না কর্টিসনের প্রয়োগ৷ তবে জরুরি অবস্থায় এই ওষুধ কাজে লাগে৷
নিউরোডার্মাটাইটিস মাঝে মাঝে চাড়া দিয়ে ওঠে৷ তখন চুলকানি বাড়ে, সেই সাথে সংক্রমণও৷ এই অবস্থা কতদিন থাকে, তা বলা যায় না৷ অনেক সময় বয়স হওয়ার সাথে সাথে রোগের প্রকোপ কমে যায়৷ খুব কম ক্ষেত্রেই রোগটি পুরোপুরি ভালো হয়৷
‘‘নিউরোডার্মাটাইটিস জিনগত কারণে হয়ে থাকে৷ আমাদের জিনেই তা প্রোথিত থাকে৷ তবে রোগটি আদৌ দেখা দেবে কিনা এবং দিলেও কখন কোন পরিস্থিতিতে তা আগে থেকে বলা যায় না৷ শরীরের এই প্রকৃতি আমরা বদলাতে পারি না৷'' বলেন ডুসেলডর্ফ ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ শ্টেফান মিলার৷
রোগটি আদতে সংক্রামক নয়
নিউরোডার্মাটাইটিস সংক্রামক রোগ নয়৷ কিন্তু লাল ও রক্তাক্ত চামড়া দেখলে অনেকের মনে ভয় ও ঘৃণার সৃষ্টি হয়৷ রেনে ফাইফারও এই রকম একজন ভুক্তভোগী৷ তিনি জানান, ‘‘কিন্ডারগার্টেনে তো রীতিমত অত্যাচার মনে হতো৷ বিশেষ করে খেলাধুলার সময়৷ অন্য বাচ্চারা রক্তাক্ত ত্বক দেখলে বুঝতে পারতো না, কী রকম আচরণ করবে আমার সাথে৷''
আজ ৩০ বছর বয়সি ফাইফার সেইসব রোগীদের একজন, যাদের অসুখটি ভালো হয়ে গেছে৷ অবশ্য ছয় বছর বয়স থেকেই রোগমুক্ত তিনি৷ কোনো উপসর্গ নেই৷
তিন মাস বয়সে প্রথম দেখা দেয় রোগটি৷ একদিন টিকা দেওয়ার পর বিছানায় শোয়ানো হয় তাকে৷ পরদিন মা বাচ্চাকে ওঠাতে গিয়ে যেন এক রক্তাক্ত বান্ডিল দেখতে পান৷ সারারাতে চুলকাতে চুলকাতে ঘা হয়ে গেছে শিশুটির৷ সেই থেকে শুরু৷ এরপর চলে ডাক্তারের কাছে ছোটাছুটি ও চিকিৎসার পালা৷ পরে মা বাবা ভুক্তভোগীদের নিয়ে একটি ‘সেল্ফ হেল্প' গ্রুপ গড়ে তোলেন৷ আজ সেই সংস্থার প্রধান রেনে ফাইফার৷
প্রকোপটা শৈশবে কিন্তু বেশি
নবজাত শিশুদের সাধারণত মুখ, বাহু ও পায়ে দেখা দেয় নিউরোডার্মাটাইটিসের লক্ষণ৷ মাঝে মাঝে পিঠে, খুব খারাপ হলে সারা শরীরে ছেয়ে যায় অসুখটি৷ একটু বড় হয়ে স্কুলে যাওয়ার বয়স হলে কিছু কিছু লক্ষণ দূর হয়ে যায়৷ কিন্তু সব ক্ষেত্রে নয়৷ ‘‘সঠিক কারণ ঠিকমতো জানা না থাকলেও স্ট্রেস, ব্যাকটেরিয়া, অ্যালার্জি, ছত্রাক এসব থেকে হতে পারে নিউরোডার্মাটাইটিস'', বলেন স্টেফান মেলার৷
এছাড়া গাড়ির গ্যাস ও শিল্পকারখানার বিষাক্ত ধোয়া থেকেও হতে পারে এই অসুখ৷ রোগীদের জন্য মূল সমস্যা আক্রান্ত জায়গার ব্যথা বেদনা নয় বরং অসহনীয় চুলকানি৷ এ ব্যাপারে নানা সমীক্ষা চলছে৷ এ জন্য চুলকানোর মাত্রা পরিমাপ করা হয়৷ এক থেকে দশ পর্যন্ত স্কেলে রোগীরা চিহ্ন দিয়ে এই মাত্রা জানাতে পারেন৷ এছাড়া চুলকানোর তীব্রতাও বিবেচনা করা হয় সমীক্ষার জন্য৷ এইভাবে এই চর্মরোগটি সম্পর্কে আরো জানতে চান গবেষকরা৷ বের করতে চান ওষুধপত্র৷ যাতে করে নিউরোডার্মাটাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের জীবনটা সহনীয় করে তোলা যায়৷