নতুন প্রতিরক্ষা জোট
১৪ নভেম্বর ২০১৭ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব সদস্য দেশ সব ক্ষেত্রে বাড়তি সহযোগিতার পথে সাধারণত এগোয় না৷ শেঙেন থেকে শুরু করে অভিন্ন মুদ্রা ইউরো – বার বার এই বাস্তব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷ নতুন প্রতিরক্ষা জোটের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায়নি৷ আপাতত ২৩টি দেশ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতাকে নতুন মাত্রা দিতে রাজি হয়েছে৷ ফলে অদূর ভবিষ্যতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে নিরাপত্তা ও সামরিক সহযোগিতা কাঠামো সৃষ্টি হবে৷ এই কাঠামোর পোশাকি নাম পার্মানেন্ট স্ট্রাকচার্ড কোঅপারেশন বা ‘পেসকো'৷ আগামী ডিসেম্বর মাসেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবার কথা৷
আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল ও মাল্টা এই প্রতিরক্ষা জোটে যোগ দেবে কিনা, সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে৷ ব্রেক্সিট না ঘটলেও ব্রিটেন এমন জোটে অংশ নিত না, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ ডেনমার্কও এই জোটের বাইরে থাকবে বলে ধরে নেওয়া যায়৷
অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম কিনতে পেসকো-র আওতায় ৫০০ কোটি ইউরোর এক প্রতিরক্ষা তহবিল গঠন করা হবে৷ এছাড়াও আর্থিক সহযোগিতা ও প্রতিরক্ষা গবেষণার জন্যও আলাদা তহবিল থাকবে৷ সদস্য দেশগুলি তাদের জাতীয় পরিকল্পনা পেসকো-র কাছে পেশ করবে৷ ইইউ-র নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাঠামোয় দুর্বলতা কাটাতে সম্মিলিতভাবে কাজ করবে দেশগুলি৷
ইইউ পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান এই পদক্ষেপকে ‘ঐতিহাসিক' আখ্যা দিয়েছেন৷
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেন, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেইউরোপের নিজের পায়ে দাঁড়ানো অত্যন্ত জরুরি৷ তাঁর মতে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর বিষয়টি আরও গুরুত্ব পাচ্ছে৷ ইউরোপের প্রতিবেশী অঞ্চলে সংকট দেখা দিলে ইইউ-কে প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে৷
বর্তমান অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতে সামরিক জোট ন্যাটোর উপর নির্ভর করতে চাইছে না ইইউ দেশগুলি৷ তবে ন্যাটোর ২৮টি সদস্য দেশের মধ্যে ২২টি ইইউ সদস্য হওয়ায় পেসকো-কে ন্যাটোর প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং সম্পূরক হিসেবে তুলে ধরছে ইউরোপীয় দেশগুলি৷
ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এর ফলে ন্যাটোর মধ্যে ইউরোপীয় স্তম্ভ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠলো৷ তাঁর মতে, পেসকো গঠন হলে ইউরোপে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় আরও বেড়ে যাবে৷ ফলে ন্যাটোর মধ্যে আরও ভালোভাবে দায়দায়িত্ব বণ্টন করা সম্ভব হবে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে চালিকা শক্তি হিসেবে পরিচিত দুই দেশ ফ্রান্স ও জার্মানির উদ্যোগেই অবশেষে পেসকো গঠন করা সম্ভব হয়েছে৷ সেই ১৯৫০-এর দশক থেকেই ব্রিটেন এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে আসছিল৷ এবার ব্রেক্সিটের কারণে এই জোট সম্ভব হলো৷
এসবি/ডিজি (ডিপিএ, রয়টার্স)