নির্ঘুম ব্যস্ততায় পতাকা নির্মাতারা
২৩ মে ২০১৮বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ব্যস্ততম দিন কাটছে বাংলাদেশের পতাকা নির্মাতাদের৷ নিজ দেশের পতাকা নয়, নেইমারের ব্রাজিলবা মেসির আর্জেন্টিনার পতাকা বানাচ্ছেন তাঁরা৷
ছোট একটা টেক্সটাইল কারখানা চালান কামাল হোসেন৷ ঢাকার মেরাজনগরে তার সেই কারখানায় গিয়ে দেখা গেল দারুণ ব্যস্ততা৷ রাশিয়ার বিশ্বকাপকে সামনে রেখে দম ফেলানোর সময় নেই কারখানার কারিগরদের৷
কাজের ফাঁকে পতাকা বানানোর মেশিন থেকে মাথা না তুলেই তিনি বলেন, ‘‘গত দু’মাস ধরে কাজ করে যাচ্ছি৷ কোনো কোনো দিন দুই ঘণ্টার জন্যও ঘুমাতে পারি নাই৷’’
ক্রিকেট সবচেয়ে জনপ্রিয় হলেও প্রতি চার বছর পরপর ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনায় মেতে উঠে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ৷ মেরাজনগরের ঘরে ঘরে পতাকা নির্মাণের ব্যস্ততা রয়েছে৷ ১৪ জুন শুরু হতে যাওয়া রাশিয়া বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল সমর্থকদের রয়েছে বিপুল পতাকার চাহিদা৷ মেরাজনগরের প্রতিটি বাড়ি যেন পতাকা তৈরির ছোট কারখানা এখন৷
কামাল হোসেন বলেন, ‘‘প্রতিদিন আমরা হাজার হাজার পতাকা তৈরি করছি৷ আজ যেমন আর্জেন্টিনার ১১ হাজার ছোট পতাকা তৈরি করেছি৷’’
ইতিমধ্যে বিভিন্ন দলের সমর্থকরা নিজ নিজ দলের পতাকা হাতে মিছিল করেছে৷ গত সপ্তাহে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মাদারগঞ্জে ২০০ মিটার বিশাল পতাকা নিয়ে আর্জেন্টাইন সমথর্কদের একটি মিছিলের ভিডিও ভাইরাল হয়৷
১৯৮২ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রথমবারের বাংলাদেশে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়৷ কিন্তু ১৯৮৬ সালে আজের্ন্টিনাকে যে বিশ্বকাপটি ম্যারোডোনা প্রায় একক নৈপুণ্যে জেতান, সে ঘটনাই বাংলাদেশের বিপুল আর্জেনটাইন সমর্থক তৈরির ভিত্তি বছর ছিল৷
নারায়ণগঞ্জের পতাকা বিক্রেতা ফারুক মিয়ার কথায়, ‘‘এখনও আর্জেন্টাইন সমর্থক বেড়েই চলেছে৷ ম্যারাডোনা খেলা ছেড়ে দিয়েছেন, কিন্তু নতুন সুপারস্টার মেসি তো রয়েছেন!’’
তিনি জানান, গেল সপ্তাহে ৫০০ পতাকা নিয়ে গিয়েছিলেন৷ এক সপ্তাহে ফেরি করে সেই পতাকা বিক্রি করেছেন প্রচুর মুনাফায়৷ আরও ৫০০ পতাকা কিনতে এসেছেন৷
কারখানা মালিক সেলিম হাওলাদার মনে করছেন, লাখ লাখ পতাকা বিক্রি হবে বিশ্বকাপের ঠিক আগ দিয়েই৷
তিনি বলেন, ‘‘২০১৪ সালে আমি ৮০ হাজারেরও বেশি পতাকা বিক্রি করেছি৷ বেশিরভাগই বিক্রি হয়েছে বিশ্বকাপ শুরুর অল্প কয়েকদিন আগে বা বিশ্বকাপ চলার সময়৷’’
হাসিমুখে ৩৩ বছর বয়স্ক হাওলাদার বলেন, ‘‘এখন আমি দুই থেকে আড়াই হাজার বড় পতাকা এবং ১০ হাজার ছোট পতাকা বিক্রি করছি প্রতিদিন৷’’
তাঁর নিজের কারখানায় ২৫ জন কর্মী এবং মেরাজনগরে প্রায় ২ হাজার মানুষ পতাকা বানানোর কাজে ২৪ ঘণ্টা ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানান সেলিম হাওলাদার৷
তিনি আরও জানান যে তাঁর তালিকাতেও ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার পতাকারচাহিদাই সবচেয়ে বেশি৷
‘‘আমি আর্জেন্টিনার ৫০ ফুট লম্বা পতাকা বানানোরও অর্ডার পেয়েছি৷ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থক ছাড়াও জার্মানি, পর্তুগাল এবং স্পেনের সমর্থক’’, বলেন হাওলাদার৷
প্রচুর পতাকার চাহিদা থাকায় দরিদ্র সেলাই কর্মীদের হাতেও এসেছে বাড়তি কাজ এবং বাড়তি আয়ের সুযোগ৷
নার্গিস আক্তার এবং তাঁর স্বামী মোহাম্মদ ইকবাল হাওলাদারের কারখানায় কাজ করেন৷
মোহাম্মদ ইকবালের কথায়, ‘‘প্রতিদিন গড়ে আমরা ৩ হাজার টাকা করে আয় করছি৷’’
সারা মাস কাজ করে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিক পান মাত্র ৬ হাজার টাকা৷ সে কথা মাথায় রেখেই কিনা জানি না, পাশ থেকে মৃদু হেসে মোহাম্মদের স্ত্রী নার্গিস বললেন, ‘‘ইস্, পতাকা তৈরির এই ধুম যদি আরও অনেক মাস চলতো!’’
এইচআই/ডিজি (এইপিই)