পথশিশুদের জীবনকথা
বেসরকারি এক হিসেব মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে পথশিশুর সংখ্যা ১১ লাখেরও বেশি৷ তাদের অর্ধেকেরও বেশির বাস ঢাকা শহরে৷ এই শহরের পথে-প্রান্তরে থাকা কয়েকজন পথশিশুর জীবনের গল্প নিয়ে এই ছবিঘর৷
বাস স্টেশনই আনোয়ারের জগৎ
পথশিশু আনোয়ার হোসেনের বেড়ে ওঠা সায়দাবাদ বাস স্টেশন এলাকায়৷ মা ভিক্ষা করে বেড়ান শহরের বিভিন্ন এলাকায়৷ বন্ধুদের সঙ্গে রাস্তার পাশেই খেলাধুলায় কেটে যায় তার দিন৷ এর বাইরে নিজের বাড়ি ও বাবা সম্পর্কে আর কিছুই জানে না সে৷
বড় হয়ে বাসচালক হতে চায় রকিব
মালিবাগ এলাকায় সড়কের পাশেই পলিথিন দিয়ে বানানো ছোট্ট এক ঘরে মায়ের সঙ্গে থাকে রকিব৷ রকিবের মা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে প্লাস্টিক কুড়িয়ে বিক্রি করেন৷ বড় হয়ে বড় বড় বাস চালানো রকিবের স্বপ্ন৷
খেলাধুলায় দিন কাটে সম্রাটের
বাবা-মায়ের সঙ্গে খিলগাঁওয়ে রাস্তার পাশের এক খুপড়ি ঘরে থাকে সম্রাট৷ বাবা কোনো কাজ-কর্ম না করলেও মা দিনমজুরের কাজ করেন৷ কাজ না পেলে ঠিক মতো তিনবেলা খাবার জোটে না তার৷ ফুটপাথে খেলাধুলা করে কাটে যায় তার দিন৷
ঠিক মতো খেতে পায় না মরিয়ম
মরিয়মের জন্মের পর থেকে তার মায়ের আর খোঁজ নেয় না তার বাবা৷ মা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করে বিক্রি করেন৷ খিলগাঁও এলাকার সড়কের পাশেই মায়ের সঙ্গে থাকে মরিয়ম৷ মা সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় বোতলের সন্ধানে থাকায় তিনবেলা ঠিকমতো খাবারও খেতে পায় না মরিয়ম৷
বন্ধুর টানে ঢাকায়
বাবা-মায়ের মধ্যে অশান্তিতে ঘর ছেড়েছিল সামির৷ কিছুদিন খুলনা রেলস্টেশনকেই বেছে নিয়েছিল ঠিকানা হিসেবে৷ একবার ট্রেনে চড়ে চলে এলো ঢাকায়৷ জুটে গেল কিছু বন্ধুও৷ এখন খুলনা আর কমলাপুর রেল স্টেশনই সামিরের ঠিকানা৷ যতদিন ভালো লাগে, সে থাকে খুলনা রেল স্টেশনে৷ তারপরে আবার ট্রেনে চড়ে সোজা কমলাপুর৷
বাবা-মায়ের কথা জানে না সাহান
কমলাপুর রেল স্টেশনেই থাকে পথশিশু সাহান৷ বাবা-মা কোথায়, জানা নেই তার৷ স্টেশনে যাত্রীদের লাগেজ বহন করে যে টাকা পায়, তা দিয়ে খাবার কিনে খায় সে৷ রাতে ঘুমায় স্টেশনের প্লাটফর্মেই৷
কমলাপুরে থাকে হৃদয়
বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর আবার বিয়ে করেছেন হৃদয়ের মা৷ মায়ের দ্বিতীয় স্বামীর অত্যাচার সইতে না পেরে বাড়ি ছেড়েছে সে৷ কমলাপুর রেলস্টেশনেই অনেক পথশিশুর সঙ্গে রাত কাটে তারও৷
বাবা-মা নেশাগ্রস্ত
হাসান আলীও থাকে ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে৷ নেশাগ্রস্ত বাবা-মা থাকেন গোপিবাগের রেল লাইনের পাশের বস্তিতে৷ বাবা-মা ঠিকমতো খাবার দিতে পারেন না বলেই কমলাপুরে চলে এসেছে সে৷ এখন ভিক্ষা করে খাবার কিনে খায় হাসান৷
সদরঘাট থেকে কমলাপুর
বাড়ি থেকে পালিয়ে ভোলা থেকে লঞ্চে চড়ে ঢাকায় আসে মাহফুজ৷ ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বেশ কিছুদিন থাকার পর পরিচয় হয় আরেক পথশিশু জলিলের সঙ্গে৷ তার সাথে ঘুরতে ঘুরতে সে চলে আসে কমলাপুর৷ এখানেই এখন দিনরাত কাটে তার৷
ভাগ্যবান হিরা
মোহাম্মদ হিরার বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে৷ বাবা-মা মারা যাবার পর বছর দশেক আগে ট্রেনে চড়ে চলে আসে কমলাপুর৷ কমলাপুর স্টেশনেই দীর্ঘ সময় কেটেছে তার৷ তবে গত বছর থেকে মুগদাপাড়ার ইনসিটি বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি সংস্থার শেল্টার হোমে রাত কাটানোর সুযোগ পেয়েছে সে৷
জুমা বেগম
জুম্মার নামাজের দিন জন্ম হয়েছিল বলে বামা-মা নাম রেখেছিল জুমা বেগম৷ তার জন্মের পর বাবা-মায়ের সম্পর্ক বেশি দিন স্থায়ী হয়নি৷ দু’জনেই আবার বিয়ে করায় জুমার ঠাঁই হয়েছিল এক খালার কাছে৷ কিন্তু অভাব-অনটনের কারণে একসময় ঘর ছাড়ে সে৷ গত ছয়-সাত বছর ধরে তার ঠিকানা কমলাপুর রেল স্টেশন৷
নেশায় বুঁদ পথ শিশু
জামাল, সোহেল ও হানিফের মতো অনেক পথশিশু নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে ঢাকা শহরে৷ পথশিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ‘ড্যান্ডি’-র নেশায়৷ জুতা কিংবা ফোমে ব্যবহৃত সলিউশন (আঠা) পলিথিনে ভরে কিছুক্ষণ পরপর মুখের সামনে নিয়ে শ্বাস টেনে নেয়া – এই নেশার নামই ড্যান্ডি৷