পর্তুগালকে হারিয়ে শেষ ষোলোয় দক্ষিণ কোরিয়া
২ ডিসেম্বর ২০২২তবে এশিয়ান জায়ান্টসের কাছে হারলেও গ্রুপসেরা হয়েছে রোনালডোর দল
আগেই প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত ছিল পর্তুগালের। গ্রুপ পর্বের শেষ রাউন্ডে দেশটির সঙ্গী হওয়ার দৌড়ে ছিল বাকি তিন দেশ— দক্ষিণ কোরিয়া, উরুগুয়ে ও ঘানা। পর্তুগালকে ২-১ গোলে হারিয়ে ‘এইচ’ গ্রুপের দ্বিতীয় স্থান পায় দক্ষিণ কোরিয়া। আরেক ম্যাচে ঘানার বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ও উরুগুয়ের বিদায় রুখতে পারেনি। দক্ষিণ কোরিয়া ও উরুগুয়ের সংগ্রহে ছিল ৪ পয়েন্ট। গোল গড়েও সমতায় ছিল দুই দেশ। বেশি গোল করার সুবাদে দ্বিতীয় স্থান পায় ২০০২-এর সেমিফাইনালিস্টরা। ৬ পয়েন্ট সংগ্রহ করা পর্তুগাল গ্রুপ সেরা।
এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে ম্যাচের পঞ্চম মিনিটে রিকার্ডো হোর্তার গোলে লিড নেয় পর্তুগাল। বাইলাইনের কাছ থেকে ফুলব্যাক দিয়েগো দালোতের কাট-ব্যাক বক্সের মধ্যে থেকে দূরের কোণা দিয়ে বল জালে পাঠান এ উইঙ্গার (১-০)। ২৭ মিনিটে ইয়াং-কিমের গোলে সমতায় আসে দক্ষিণ কোরিয়া। কর্নার থেকে আসা বল ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালডো; সামনেই থাকা ডিফেন্ডার কিম ভলিতে বল জালে জড়ান (১-১)। দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিতীয় বেশি বয়সি ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে গোল করলেন ইয়াং-কিম (৩২)। ২০০২ সালে পোল্যান্ডের বিপক্ষে গোল করা ওয়াং হন-সান (৩৩) বিশ্বকাপে দেশটির সবচেয়ে বেশি বয়সি ফুটবলার।
২৯ মিনিটে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালডো, ৩৩ মিনিটে দিয়েগো দালোত ও ৪২ মিনিটে ভিনিতহার প্রচেষ্টা রুখে দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়া গোলরক্ষক সিউং গাউয়ু-কিম। বিরতির আগে হিউং মিন সনের শট ফিরিয়ে দেন পর্তুগাল ডিফেন্ডার জোয়াও কানসালো। বিরতির পর দারুণভাবে জ্বলে ওঠেন টটেনহ্যাম তারকা হিউং মিন সন। এ সময় প্রতিপক্ষের গোলে পাঁচটি শট নেন এ ফরোয়ার্ড। ২০১৮ সালে জার্মানি ম্যাচের পর কোনো দক্ষিণ কোরিয়ান ফুটবলারের এটা ছিল সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে দলের দ্বিতীয় গোলের নেপথ্য কারিগর ছিলেন হিউং মিন সন। বল ধরে প্রায় ৭০ মিটার দৌড়ে যাওয়া এ তারকা ওয়াং হি চান-কে দিয়ে গোল করান (২-১)। শেষ পর্যন্ত এটিই ম্যাচ ও দক্ষিণ কোরিয়ার ভাগ্য নির্ধারক হয়ে দাঁড়ায়। ২০০২ সালের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার পথে পর্তুগালকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল এশিয়ান জায়ান্টরা। সেবার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালডোর দেশ গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল৷
পর্তুগাল-দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচের সময়েই দিনের আরেক ম্যাচে আল জানউব স্টেডিয়ামে উরুগুয়ের বিপক্ষে ২১ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েছিল ঘানা। একযুগ আগের বিশ্বকাপ স্মৃতি ফিরিয়ে আনা ম্যাচে আন্দ্রে আয়েউর স্পট-কিক বামদিকে ঝাঁপিয়ে রুখে দেন পর্তুগাল গোলরক্ষক সার্জিও রোশেত। ২০১০ সালে উরুগুয়ের বিপক্ষে ঘানার আসামোয়া জিয়ানেরজপজ পেনাল্টি ক্রসবারে প্রতিহত হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার সেই আসরের পর এবার কাতারে স্পট-কিক জালে গেলে ম্যাচের ভাগ্য ভিন্নও হতে পারতো!
২৩ মিনিটে ডারউইন নুনেজের সঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ান পাস খেলে দারুণ সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন ডি আরাসকায়েতা। গোলরক্ষক আতি-জিগি এগিয়ে আসার পর ফাঁকা পোস্টে নুনেজের প্রচেষ্টা রুখে দেন মোহাম্মদ সালিসু। দ্রুতই অবশ্য লিড পায় উরুগুয়ে। ২৬ মিনিটে ফুকুন্দু প্যালেস্ত্রির ক্রস থেকে লুইজ সুয়ারেজের শট ঘানা গোলরক্ষক আতি-জিগি প্রতিহত করেন; ফিরতি প্রচেষ্টায় হেড বল জালে পাঠান ব্রাজিলের ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গোয় খেলা ডি আরাসকায়েতা (১-০)। এটিই কাতার বিশ্বকাপে উরুগুয়ের প্রথম গোল। ৩২ মিনিটে সুয়ারেজের পাসে নিচু শটে বল আবার জালে পাঠান ডি আরাসকায়েতা (২-০)।
প্রথম দুই ম্যাচে ঘানার হয়ে দুর্দান্ত খেলা মোহাম্মদ কুদুসের দৌড়-ঝাঁপ এদিন সীমিত করে রেখেছিল উরুগুয়ে রক্ষণ। বিরতির পরও ২২ বছর বয়সি আয়াক্স উইঙ্গারকে আগের দুই ম্যাচের রূপে দেখা যায়নি। ৭০ মিনিটে ফেদেরিকো ভালভারদের জোরালো শট কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন ঘানা গোলরক্ষক আতি-জিগি। পরের মিনিটে দারুণ সুযোগ পেলেও বাইরে শট নিয়ে তা নষ্ট করেন মোহাম্মদ কুদুস। ৭৯ মিনিটে ঘানার দুটি প্রচেষ্টা প্রতিপক্ষের পোষ্টের নিশানা খুঁজে পায়নি। ৮৯ মিনিটে এডিসন কাভানির শট রুখে দিয়েছেন ঘানা গোলরক্ষক আতি-জিগি। ম্যাচের শেষদিকে প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হলেও গোল সংখ্যা বাড়াতে পারেনি উরুগুয়ে।