পর্তুগালে তাক লাগাচ্ছে ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র
১ মার্চ ২০২৩পর্তুগালের আলকেভা জলাশয়ে ইউরোপের সবচেয়ে বড় ভাসমান সোলার পার্ক শোভা পাচ্ছে, যা প্রায় ছয়টি ফুটবল মাঠের সমান৷ একমাত্র নৌকোয় করে সেখানে পৌঁছানো যায়৷ এমন এক নৌকায় বসে ইডিপি কোম্পানির গ্রুপ ডিরেক্টর মিগেল পাতেনা অসংখ্য সাক্ষাৎকার দিয়ে চলেন৷
পাঁচ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎ ক্ষেত্র তৈরির কাজ শেষ করতে এই জ্বালানি কোম্পানির সাত বছর সময় লেগেছে৷ পাতেনা বলেন, ‘‘এটা পুরোপরি কাজ করছে এবং সবাই এর সম্ভাবনা পুরোপুরি উপলব্ধি করছে৷ শুধু জ্বালানি বিক্রিই আমাদের টিমের কাছে আসল লক্ষ্য নয়৷ যতটা সম্ভব কম সম্পদ ব্যবহার করে টেকসই প্রক্রিয়াই প্রধান বিষয়৷''
জ্বালানি কোম্পানি পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানিতে বিশাল বিনিয়োগ করছে৷ গোটা দেশের মাত্র ছয় শতাংশ জ্বালানির উৎস সৌরশক্তি৷ ভাসমান সোলার পার্কের একটা বাড়তি সুবিধা রয়েছে৷ কারণ সেগুলি এমন জায়গা দখল করে, যেটি অন্য কোনো ভাবে ব্যবহার করা সম্ভব নয়৷ পানিতে থাকার কারণে জমির তুলনায় আরও কার্যকরভাবে জ্বালানি উৎপাদন করা যায়৷ প্যানেল বেশি গরম হয় না, ফলে বেশিদিন টেকে৷
যতটা সম্ভব জ্বালানি উৎপাদন করতে হলে প্যানেলগুলি পরিষ্কার রাখা জরুরি৷ সেই কাজ করার সময়ে ব্যালেন্সের ক্ষমতা ও ধৈর্য্য অত্যন্ত জরুরি৷ মিগেল পাতেনা মনে করেন, ‘‘সৌরসক্তি এখনো পুরোপুরি বিকল্প হয়ে ওঠে নি, বরং অন্যান্য উৎসের পাশাপাশি সম্পূরক হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে৷ আরও অগ্রসর হয়ে পরিবর্তন ও কার্বন নির্গমন পুরোপুরি বন্ধ করার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে এটা একটা সমাধানসূত্র৷''
সারিবদ্ধ সৌর প্যানেলগুলি বাঁধের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত৷ উদ্বৃত্ত সৌরশক্তি ধারণ করা যায় অথবা পানি আবার উপরে আনার লক্ষ্যে পাম্প চালাতে ব্যবহার করা যায়৷ সেই পানি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে লাগে৷ আলকেভা জলাধারে ১২,০০০ প্যানেল ও ২৫,০০০ ফ্লোটার যে পানি, বাতাস ও রুক্ষ ঢেউ সামলাতে সক্ষম, আগেভাগেই তা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে৷
স্পেনের আলিকান্তে অঞ্চলে কাস্তালার এক কারখানায় ফ্লোটারগুলি তৈরি করা হয়েছে৷ খুয়ান কার্লোস অ্যারনান্দেস এই প্রযুক্তির নেপথ্যে অন্যতম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন৷ পুনর্ব্যবহৃত পলিথিন প্লাস্টিক দিয়ে সেগুলি তৈরি করা হয়েছে৷ এমন পণ্য হট কেকের মতো বিক্রি হচ্ছে৷ অ্যারনান্দেস বলেন, ‘‘আমরা ছোট এক কোম্পানি৷ কিন্তু গত কয়েক বছরে বিশাল বৃদ্ধি হয়েছে৷ এখন ২০ জন ডিজাইন, বাণিজ্যিক দিক ও ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কাজ করছেন৷ উৎপাদন ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪০ জন শ্রমিক নিয়োজিত৷''
অ্যার্নান্দেস ও এমিলিয়ো পন্সের জন্য সেটা সাফল্যের বিশাল এক কাহিনি৷ ২০০৮ সালে তাঁরা এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন৷ এখন তাঁরা ফ্লোটারগুলিকে অন্য ধরনের পরিবেশের জন্য প্রস্তত করে তুলছেন, যেমন পয়ঃনিষ্কাশন প্লান্ট বা কৃষি বর্জ্য পুনর্ব্যবহার কেন্দ্র৷
আলকেভার সৌর প্লান্ট ইউরোপের সবচেয়ে বড় কৃত্রিম হ্রদের এক শতাংশও ঢেকে দিচ্ছে না৷ ইডিপি হ্রদের উপর আরও বড় আকারের ভাসমান অ্যারে তৈরির পরিকল্পনা করছে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে পর্তুগাল শতভাগ পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে, এই উদ্যোগ তারই অংশ৷ মিগেল পাতেনা বলেন, ‘‘এটা পর্তুগালের জন্য একটা মাপকাঠি এবং বাকি বিশ্বের জন্যও একটা দৃষ্টান্ত বটে৷ আমাদের প্রকল্পই প্রথম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যবহার করছে এবং বিশেষ করে এশিয়ার জন্য মাপকাঠি হয়ে উঠছে৷ এশিয়ায় এমন প্রকল্পকে ঘিরে গভীর আগ্রহ রয়েছে, কারণ সেখানেও বিশাল বাঁধ রয়েছে এবং জ্বালানি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে৷ তারাও এমন ধরনের প্রকল্প বড় আকারে শুরু করবে৷''
অর্থাৎ গোটা বিশ্বজুড়ে এমন ভাসমান সোলার পার্ক ছড়িয়ে পড়বে, এমনটা প্রত্যাশা করা যায়৷
নিকোল রিস/এসবি