পাঁচ দিনে সাত সাধারণ মানুষ খুন কাশ্মীরে
৮ অক্টোবর ২০২১শ্রীনগরের একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল ছিলেন সুপুন্দর কাউর। ওই একই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন দীপক চন্দ। বৃহস্পতিবার তারা দুইজনেই স্কুলে ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পিস্তল নিয়ে স্কুল চত্বরে ঢুকে পড়ে সন্ত্রাসীরা। খুব কাছ থেকে প্রিন্সিপাল এবং এক শিক্ষককে গুলি করা হয়। নিহত দুইজনেই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। সুপুন্দর পাঞ্জাবী এবং দীপক হিন্দু। দুই শিক্ষকের হত্যার ঘটনায় রীতিমতো উত্তেজনা ছড়িয়েছে শ্রীনগরে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অনলাইন ক্লাস চলছে বলে ওইদিন ক্লাসে ছাত্ররা ছিল না। নইলে আরো বড় অঘটন ঘটতে পারত।
এর আগে এক ওষুধের দোকানের মালিককে খুন করেছিল সন্ত্রাসীরা। মঙ্গলবার তিনজন সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে গত পাঁচদিনে সাতজন সাধারণ মানুষকে খুন করল সন্ত্রাসীরা। যাদের সঙ্গে সরকার বা প্রশাসনের কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পূর্ণ নিরস্ত্র অবস্থায় তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই পিস্তল ব্যবহার করা হয়েছে হত্যার জন্য।
কাশ্মীর পুলিশের দাবি, দ্য রেসিসট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তবে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এখনো পর্যন্ত দায় স্বীকার করেনি।
বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরে সব মহল থেকেই নিন্দা করা হয়েছে। কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ঘটনার নিন্দা করে বলেছেন, ''এই হলো ডবল ইঞ্জিন সরকারের প্রশাসন।'' বস্তুত, কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বানানোর পরে কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছিল, এবার সরাসরি কেন্দ্র কাশ্মীরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করবে। পরিসথিতির উন্নতি হবে। আরেক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ বলেছেন, কাশ্মীর নব্বই দশকের ভয়াবহতায় ফিরে যাচ্ছে। এর দায় কেন্দ্রকে নিতে হবে।
বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরে দিল্লির নর্থ ব্লকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডাকেন। সেখানে উপস্থিতি ছিলেন এনএসএ অজিত ডোভাল, র এবং গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান। কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। কাশ্মীরের সীমান্তে নজরদারি আরো বাড়ানোর কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বস্তুত, গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, এই ঘটনার পিছনে পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসীদের হাত আছে। অদূর ভবিষ্যতে আরো সাধারণ মানুষকে টার্গেট করা হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
কেন এই হত্যা
ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর এক সাবেক কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে জানিয়েছেন, গত কয়েকমাসে কাশ্মীরের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষ হয়েছে। বহু সন্ত্রাসীর মৃত্যু হয়েছে পুলিশ এবং সেনার তল্লাশি অভিযানে। ফলে কয়েকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে হতাশা ছড়িয়েছে। বড়সড় ধামাকার মাধ্যমে সেই হতাশা কাটাতে চাইছে তাদের নেতারা। সে কারণেই সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ চালিয়ে উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। তার মতে, ''নিরস্ত্র মানুষের উপর আক্রমণ চালানো সহজ। কিন্তু তাদের হত্যা করতে পারলে সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে হইচই হয় অনেক বেশি।'' এই তত্ত্বেই সাধারণ মানুষকে টার্গেট করছে সন্ত্রাসীরা।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, সাধারণ মানুষের উপর যে হামলা হবে, গোয়েন্দাদের কাছে সে রিপোর্ট আগেই এসে পৌঁছেছিল। তা সত্ত্বেও কেন হত্যা আটকানো গেল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের আরো বক্তব্য, গত দুই বছরে কাশ্মীর নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে সেখানকার তরুণ সমাজের একাংশ হতাশ হয়ে পড়েছে। তাদের সেই হতাশা ব্যবহার করছে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলি। ফলে সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগদানের পরিমাণ বেড়েছে। তারই জেরে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ শুরু হয়েছে বলে তারা মনে করছেন।
সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী গত এক বছরে কাশ্মীরে ২৮ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। তার মধ্যে সাতজনের হত্যা হয়েছে গত পাঁচ দিনে।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, পিটিআই)