‘আই অ্যাম মালালা’
১৭ নভেম্বর ২০১৩১৬ বছর বয়সি মালালার বইটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ সাড়া ফেলেছে৷ তবে তাঁর নিজের দেশ পাকিস্তানে এটি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে৷ রক্ষণশীলদের দাবি, আত্মজীবনীমূলক বইটিতে ইসলাম ধর্মের মহানবী মোহাম্মদ এবং পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মর্যাদাহানি করা হয়েছে৷ ডানপন্থিরা আরো দাবি করেছে, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পাওয়া মালালা তাঁর বাইয়ে সালমান রুশদি এবং সংখ্যালঘু আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন৷ আহমেদিয়াদের পাকিস্তানে ‘অমুসলিম' হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷
প্রসঙ্গত, গত বছরের অক্টোবরে সোয়াত ভ্যালিতে বন্দুকধারীদের গুলিতে মালালাসহ আরো তিন মেয়ে আহত হন৷ তালেবান জঙ্গিরা সেই হামলার দায় স্বীকার করে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতাকে' উৎসাহ দেওয়ায় মালালার উপর হামলা চালানো হয়েছে৷ সেসময় পাকিস্তানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে যুক্তরাজ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়৷ বর্তমানে মালালা যুক্তরাজ্যে স্বপরিবারে বাস করছেন৷
তালেবানের হামলার শিকার হওয়ার আগে মালালা সোয়াতে নারী শিক্ষার পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন৷ তালেবানের কঠোর সমালোচক ছিলেন তিনি৷ উগ্র ইসলামপন্থীদের নিষ্ঠুরতা নিয়ে বিবিসি উর্দূতে ব্লগ লিখে আন্তর্জাতিক স্তরে সুনাম কুড়ান এই কিশোরী৷
পাকিস্তানের আইনজীবী আলী জাফর ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘মালালার বইয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা বাকস্বীধানতার লঙ্ঘন৷ অথচ পাকিস্তানের সংবিধানেই বাকস্বাধীনতা রক্ষায় বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে৷'' একই বিষয়ে ইসলামাবাদের কায়েদ-ই-আযম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওম্যানস স্ট্যাডিজ বিভাগের প্রধান ফারজানা বারী বলেন, ‘‘বইটি নিষিদ্ধ করা হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত শুধু সরকার নিতে পারে৷''
ইসলামাবাদ সরকার বইটির বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত না নিলেও ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লিগের সদস্য রফিক রাজওয়ানা জানিয়েছেন, আত্মজীবনীটি ‘বিতর্কিত' এবং সরকার প্রয়োজন মনে করলে সেটি নিষিদ্ধ করবে৷
তিনি বলেন, ‘‘বইটিতে পাকিস্তান এবং ইসলামের মানহানিকর কিছু বিষয় রয়েছে৷ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ‘আই অ্যম মালালা' একটি বড় ষড়যন্ত্রের অংশ৷ বইটির মাধ্যমে পাকিস্তানের তরুণ সমাজকে উদার হতে এবং নিজের দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে৷ আমরা এটা মানতে পারিনা৷''
উল্লেখ্য, পাকিস্তানে অনেকেই বিশ্বাস করেন, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অল্পবয়সি সমাজকর্মী মালালাকে নিয়ে অপ্রয়োজনীয় ‘হাইপ' তৈরি করছে৷ ডানপন্থিদের মতে, মালালাকে নিয়ে এসব প্রচারনা থেকে বোঝা যায় পুরো ঘটনার পেছনে ‘আন্তর্জাতিক লবি' কাজ করছে৷ তবে মালালার সমর্থকরা মনে করেন, মালালাকে যারা সহ্য করতে পারে না, মূলত তারাই তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন কুৎসা রটাচ্ছে৷