1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পানি সংকটে সারা বিশ্ব

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মানবসৃষ্ট বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণেই শুধু বিশ্বে এই পানি সংকট তৈরি হয়নি৷ বরং তার অনেক আগে থেকেই এই সংকট শুরু হয়েছে বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক৷ এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সামনে অপেক্ষা করছে ভয়াবহ বিপদ৷

https://p.dw.com/p/2soPA
ছবি: Getty Images/AFP/S. Kanojia

সম্প্রতি বিশ্বের পানি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফ্রান্সের বার্তা সংস্থা এএফপি, যেখান উঠে এসেছে আফ্রিকা ও বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের চিত্র৷

দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে পানি সংকট এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কর্তৃপক্ষ বলছে, খুব সহসাই ‘ডে জিরো' বা যে দিন থেকে শুধু জরুরি প্রয়োজনে পানি সরবরাহ সম্ভব, সে দিনটি এসে যেতে পারে৷ আগামী মে মাস থেকেই বাসাবাড়ির ট্যাপে পানি হয়তো আর থাকবে না৷ বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হারে কমে যাচ্ছে ভূগর্ভের পানির স্তর৷

বলা হচ্ছে, এসব ঘটনা জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেবার জন্য ঘটেনি৷ এসব কারণ হয়তো পরে যোগ হয়েছে৷ কিন্তু এগুলো ঘটছে অনেক আগে থেকেই৷

অনেক নদী এখন আর সমুদ্রে পৌঁছায় না৷ সেগুলোর দিক পরিবর্তিত হয়েছে, বাঁধ দেয়া হয়েছে এবং অতিমাত্রায় ব্যবহৃত হয়েছে৷

বলা হচ্ছে, যুগে যুগে বিশ্বে পানি সংকট বাড়ছে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হারে৷ এর মধ্যে পানি সংকটে সবচেয়ে বেশি এখন আফ্রিকার দেশগুলো৷ সেখানে খরা বাড়ছে৷

২০১৫ সাল থেকে ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের গ্লোবাল রিস্ক রিপোর্টে পানি সংকটকে বৈশ্বিক হুমকির তালিকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শরণার্থী সংকট ও সাইবার আক্রমনের উপরে স্থান দেয়া হচ্ছে৷ কানাডার ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরেটাস গ্রাহাম কোগলি বলেন, ‘‘ইন্দো-গাঙ্গেয় সমতলে, অর্থাৎ, ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রায় ৬০ কোটি মানুষের বাস, খুবই অনিয়ন্ত্রিত ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ হারে মাটির নিচের পানি তুলে ফেলা হচ্ছে৷''

সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, এই বেসিনের ভূ-গর্ভস্থ পানির প্রায় অর্ধেক আবার ব্যবহারের অযোগ্য৷ কারণ, এতে লবণাক্ততা ও আর্সেনিকের মাত্রা অনেক বেশি৷ তাই এগুলো পান করা বা কৃষিকাজে ব্যবহারের অনুপযোগী৷

ভূ-গর্ভস্থ পানি অন্তত বিশ্বের ৫০ ভাগ পান করা ও ৪০ ভাগ কৃষিতে ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয়৷কিন্তু সেই পানি প্রাকৃতিকভাবে মাটির নিচে একই হারে সেসব ভূগর্ভস্থ অ্যাকুইফায়ারে যুক্ত হয় না, যেমনটা বৃষ্টিতে মাটির উপরিভাগের জলাশয়ে ভরাট হয়৷

তাই ভূ-গর্ভস্থ পানিকে আর নবায়নযোগ্য বলা যায় না৷

‘দ্য ওয়ার্ল্ডস ওয়াটার' বইয়ের লেখক পিটার গ্লাইক এএফপিকে বলেন, ‘‘মানুষ যেভাবে সময়ের আগেই এসব পানি ব্যবহার করে ফেলছে, তাতে এই পানি এখন অনবায়নযোগ্য হয়ে গেছে৷''

বছর জুড়ে বিশ্বের অন্তত ৫০ কোটি মানুষ প্রচণ্ড পানি সংকটে ভোগে বলে জানান বিশ্লেষকরা৷ গবেষণা বলছে, এর মধ্যে তিন জনের এক জনই ভারতে৷ এছাড়া পাকিস্তান, মিশর, মেক্সিকো, সৌদি আরব ও ইয়েমেনও এই সংকটপূর্ণ দেশের তালিকায় আছে৷ 

ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হোয়েকস্ট্রা বলেন, ‘‘এরপর এসব কারণের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা৷''

জলবায়ু বিষয়ক জাতিসংঘের প্যানেলের গবেষণা বলছে, প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য ২০ ভাগ বিশুদ্ধ পানি কমে যাচ্ছে৷

এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে ৪০ ভাগ পানি সংকট দেখা দেবে৷ 

তারওপর এ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে পানির চাহিদা বাড়বে ৫৫ ভাগ৷ তাই একটি সমন্বিত পদক্ষেপের প্রয়োজন দেখছেন বিশেষজ্ঞরা৷

জেডএ/এসিবি (এএফপি)