পারল না ব্রাজিলও, হোঁচট খেল জার্মানি
১৭ জুন ২০১৮নামটা তাঁর জমার, ইংরেজিতে যাকে বলে সামার আর বাংলায় গ্রীষ্ম৷ এতদিন গ্রীষ্মের উত্তাপ কতটা টের পেয়েছেন তা জানা নেই, তবে রোববারের খেলায় শুরুতেই যে টের পেয়েছেন সুইস গোলরক্ষক, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷
ফিফার বাছাই তালিকায় ছয় নম্বরে সুইজারল্যান্ড, আর দুইয়ে ব্রাজিল৷ তাই কাগজে কলমে ব্যবধান কিন্তু তেমন একটা নয়৷ এমনকি শেষবার ব্রাজিলের মাটিতে বিশ্বকাপের মুখোমুখিতে ২-২ গোলের ড্র নিয়েই ফিরেছিল সুইসরা৷ যদিও তা ৬৮ বছর আগের কথা৷
কিন্তু শুরুটা একটু ঢিমেতালে করলেও কয়েক মিনিটের মধ্যেই মাঠের খেলায় ব্যবধানটা পরিষ্কার করে দেখিয়ে দিলেন নেইমার, কৌটিনিয়োরা৷ একের পর এক আক্রমণ ঠেকাতেই ব্যস্ত সুইস ডিফেন্স৷ কৌশলি গোলরক্ষক জমারও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন কয়েকবার৷ তাই প্রথম গোলের জন্য ব্রাজিলকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০ মিনিট ৷ তবে প্রথম পরিষ্কার সুযোগটি এসেছিল ১১ মিনিটে৷ ব্রাজিল তারকা নেইমারের ছোট্ট একটি পাস বাম পায়ে ঠিকমতো লাগাতে পারেননি পাউলিনিয়ো৷
তবে ২০ মিনিটে কৌটিনিয়ো কোনো ভুল করেননি৷ ডি-বক্সের বাইরে থেকে চমৎকার শটে পরাস্ত করেন জমারকে৷ বলটি বেঁকে গিয়ে দ্বিতীয় বারের ভেতর দিক ছুঁয়ে প্রতিপক্ষের জাল স্পর্শ করে৷ বিশ্বকাপে ডি-বক্সের বাইরে থেকে করা ব্রাজিলের ৩৭-তম গোল এটি৷ আর কোনো দল এতগুলো গোল করতে পারেনি৷
এরপর বারবারই ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছেন সুইসরা৷ কিন্তু মারসেলো-থিয়াগো সিলভারা যেভাবে দেয়াল তৈরি করে দাঁড়িয়েছিলেন তাতে সম্ভব হয়নি৷ প্রথমার্ধে এরপর অবশ্য তেমন জৌলুস চোখে পড়েনি কারো খেলাতেই৷ ব্রাজিল বারবার আক্রমণে গেলেও সেগুলোর কোনোটিকেই একেবারে পরিষ্কার সুযোগ বলা যাবে না৷ এমনকি কৌটিনিয়োর গোলটিও ছিল তাঁর ব্যক্তিগত নৈপুণ্য৷
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই যেন সিন্দাবাদের ভূতের মতো ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডারদের ঘাড়ে চেপে বসেন সুইস ফরোয়ার্ডরা৷ ফলও পান৷ পাঁচ মিনিটের মধ্যেই শাকিরির ইনসুইং কর্নারকে ছয় গজের মধ্যে পেয়ে হেড করে দলকে সমতায় ফেরান সুইস স্ট্রাইকার সুবার৷
গোল পেয়ে দারুণ উজ্জীবিত সুইজারল্যান্ড আক্রমণের ধার বাড়ানোর চেষ্টা করে৷ অন্যদিকে, ব্রাজিলও মরিয়া হয়ে ওঠে ব্যবধান বাড়াতে৷ কিন্তু সুইসদের কড়া ডিফেন্স ভেদ করা কিছুতেই সম্ভব হচ্ছিল না৷
৭০ মিনিটে আবারো চমৎকার সুযোগ আসে ব্রাজিলের সামনে৷ নেইমারের একটি ক্রস থেকে ডি-বক্সের ভেতর বল পেয়েও নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোলটি করতে ব্যর্থ হন কৌটিনিয়ো৷ ৭৩ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড জেসুসকে ডি-বক্সের ভেতর বাজেভাবে টেনে ধরে ফেলে দিলেও রেফারির চোখে তা পেনাল্টির অপরাধ হিসেবে ধরা পড়েনি৷
৮৮ মিনিটে আবারো সুযোগ৷ উইঙ্গার উইলিয়ানের ক্রসকে দৌঁড়ে এসে হেড করে গোলের চেষ্টা করেন নেইমার৷ কিন্তু তা কেবল জমারের তালুবন্দিই হয়৷ ৯০ মিনিটে এবার নেইমারের ফ্রি-কিক থেকে বদলি খেলোয়াড় ফিরমিনিয়ো চমৎকারভাবে হেড করেন৷ এবারো বাধা হয়ে দাঁড়ায় জমারের দুই হাত৷
সব মিলিয়ে ম্যাচ জুড়ে কেবল আক্ষেপই বাড়িয়েছে ব্রাজিল৷ ১৯৭৮ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটি জিততে পারলো না তারা৷
হার দিয়ে শুরু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের
এদিকে, আগের ম্যাচে মেক্সিকোর কাছে ১-০ গোলের পরাজয় দিয়েই বিশ্বকাপে ট্রফি বাঁচানোর মিশন শুরু করেছে জার্মানি৷ চরম উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ভালো খেলেও পয়েন্ট বাঁচাতে পারেনি তারা৷
কৃতিত্ব অবশ্য মেক্সিকোকে দিতেই হবে৷ বিশেষ করে গোলরক্ষক ওচোয়াকে, যিনি খেলার ৩৯ মিনিটে বাঁদিকে অনেকটা উড়ে গিয়ে টনি ক্রুসের একটি অনবদ্য ফ্রি-কিক ফিরিয়ে দেন৷
অন্যপ্রান্তে মানুয়েল নয়ারও ছিলেন বেশ ব্যস্ত৷ ভেলা-লোৎসানোরা তাঁকে রীতিমতো পায়ের গোড়ালি মাটিতে ফেলতে দেননি৷ কী ডিফেন্স, কী মিডফিল্ড সব জায়গাতেই জার্মানিকে পেছনে ফেলেছে মেক্সিকো৷
বিশেষ করে প্রথমার্ধটি ছিল তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ৷ এগার মিনিটের মধ্যে দু'বার প্রতিপক্ষের জাল প্রায় স্পর্শ করেই ফেলেছিলেন সবুজসাদা জার্সি পড়া উত্তর অ্যামেরিকানরা৷
জার্মানরাও আক্রমণ করে যাচ্ছিলেন৷ তাদের আক্রমণ থেকে বল চুরি করে পাল্টা আক্রমণে বারবারই সুযোগ তৈরি করছিল মেক্সিকো৷ হার্নান্দেজ ও ভেলার নৈপুণ্যে বোয়েটাং-খেদিরাদের ফাঁকি দিয়ে ৩৫ মিনিটের মাথায় লেফট উইং থেকে বল কুড়িয়ে নয়ারকে পরাস্ত করেন লোৎসানো৷
এরপর ডয়েচরা বেশ কয়েকবার গোল শোধের সুযোগ পেলেও ঠিক যেন হয়ে উঠছিল না৷ এভাবেই ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে শেষ হয় প্রথমার্ধ৷
দ্বিতীয়ার্ধ্বে খেলার কৌশল একটু বদলায় দু'দলই৷ প্রথমার্ধে যতটা আক্রমণাত্মক খেলা হয়েছে, দ্বিতীয়ার্ধে কম ছিল গতি৷ সেখানে জার্মানরা ছিল আক্রমণে এগিয়ে৷ কিন্তু শতভাগ পরিষ্কার না হলেও ৬০-৭০ ভাগ পরিষ্কার সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি ড্রাক্সলার-ভের্নার-ম্যূলাররা৷
শেষের দিকে বেশ চাপিয়ে খেলেছে জার্মানি৷ বেশ কিছু অস্পষ্ট সুযোগও তৈরি হয়েছিল৷ কিন্তু ভাগ্যও কেন যেন মুখ ফিরিয়ে ছিল তাদের প্রতি৷ শেষ দিকে গোলরক্ষক নয়ার পর্যন্ত উঠে আসেন৷ কিন্তু সবাই মিলেও ওচোয়া আর তাঁর প্রতিরক্ষার সবুজ দেয়াল ভেদ করতে পারেননি চ্যাম্পিয়নরা৷
একে একে হোঁচট খাচ্ছে বড় দলগুলো৷ ভাগ্যই জানে, আরো কী দেখতে হবে এবারের বিশ্বকাপে৷
এর আগে দিনের প্রথম ম্যাচে কোস্টারিকাকে হারায় সার্বিয়া৷ প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে অনেকগুলো সুযোগ তৈরি করতে পারলেও শেষ পর্যন্ত সার্বদের ১-০ ব্যবধানের জয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়৷ ফ্রি-কিক থেকে সার্বিয়ার একমাত্র গোলটি করেন রোমা ডিফেন্ডার আলেক্সান্ডার কোলারভ৷
ম্যাচ নিয়ে আপনার মতামত লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷