পুটিন রাজত্বের ২০ বছর
৩০ ডিসেম্বর ২০১৯সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন পুটিন৷ তাই ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ইয়েলৎসিন রাজনীতি থেকে বিদায় নিলে অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি৷
ইয়েলৎসিনের বিদায় অনুষ্ঠানের পর টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে পুটিন বলেছিলেন, ‘‘নতুন বছরের আগের দিন সন্ধ্যায় স্বপ্ন সত্য হয়৷ বিশেষ করে এবার৷ নতুন শতাব্দীর সাফল্য কামনা করে আপনারা গ্লাস তুলুন৷''
ওই বছর মার্চে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন তিনি৷ ২০০৪ সালে আবারও প্রেসিডেন্ট হিসেবে চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন৷
কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরপর দুই বারের বেশি নির্বাচিত হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় ২০০৮ সালে আর নির্বাচন করেননি পুটিন৷ বরং নিজের জায়গায় নিয়ে আসেন তাঁর দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সহচর দিমিত্রি মেদভেদেভকে৷
২০১২ সালে আবারও প্রসিডেন্ট নির্বাচন করে ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন পুটিন৷ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকলেও তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি৷ বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, বেড়েছে বিশ্ব রাজনীতিতে তার প্রভাব৷ বিরোধীরা তাঁর মেয়াদকালকে রাশিয়ার জার বা সম্রাটের রাজত্বের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন৷
দেখা যাক এই ২০ বছরে প্রতিশ্রুতি পূরণে কতটা সফল ছিলেন পুটিন৷
প্রভাবশালী রাষ্ট্র:
ক্ষমতা গ্রহণের সময় পুটিন লিখেছিলেন, ‘‘রাশিয়াকে ক্ষমতাধর দেশ বলার সময় এখনো আসেনি৷'' তিনি রাশিয়াকে সেই অবস্থানে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং এক্ষেত্রে তাকে অনেকটাই সফল বলা যায়৷
যদিও রাশিয়ার উপর পশ্চিমা বিশ্বের নানা নিষেধাজ্ঞা আছে এবং দেশটিকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশেগুলোর জোট (জি৮) থেকেও বেরিয়ে যেতে হয়েছে, তারপরও সিরিয়া বা ইউক্রেনে গৃহযুদ্ধ বা ইরানের পরমাণু প্রকল্পে রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছে৷
২০০০ সালে ভোটের আগে ভোটারদের প্রতি এক খোলা চিঠিতে পুটিন বলেছিলেন, ‘সেনবাহিনী ও অস্ত্র শিল্পকে ঢেলে সাজিয়ে' রাশিয়াকে আরো শক্তিশালী দেশে পরিণত করবেন৷ এমন দেশে পরিণত করবেন, যে দেশ নিজের জিডিপির চাইতে শক্তিশালী হবে, যার সক্ষমতা বিচার করা কঠিন হবে৷
পুটিন ক্ষতায় আসার পর রাশিয়ার শক্তি যে বেড়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷
উন্নয়নের গতিতে য‘পর্তুগালকে ধরা:
পুটিন যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন রাশিয়ার দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার স্মৃতি তখনও তাজা৷ ১৯৯৮ সালের ওই ঘটনায় রাতারাতি পথের ফকিরে পরিণত হয়েছিলেন অনেক রুশ৷
ক্ষমতা গ্রহণের পর পুটিন, জনগণের ‘জীবনযাত্রার মান বাড়ানো' এবং ‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নাটকীয় গতি সঞ্চারের' প্রতিশ্রুতি দেন৷
পুটিনের হিসাব ছিল, যদি রাশিয়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশে নিয়ে যেত পারে, তবে ১৫ বছরে দেশটির জিডিপি পর্তুগালের সমান হবে৷ আর ১০ শতাংশ হলে তারা ফ্রান্স বা যুক্তরাজ্যকেও ধরে ফেলতে সক্ষম হবে৷ পুটিনের ওই বিবৃতি ‘ক্যাচ আপ পর্তুগাল' নামে পরিচিতি পেয়েছিল৷
২০১৩ সাল নাগাদ রাশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি পর্তুগালকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলে৷ অবশ্য বিষয়গুলো মোটেও অতটা সহজ ছিল না৷ তাছাড়া পর্তুগাল ইউরোপের উন্নত দেশে মধ্যেও পড়ে না এবং পুটিন নিজেও খুব ভালো করে সেটা জানতেন৷
তারপরও রাশিয়ার প্রবৃদ্ধি উল্লেখ করার মতো৷ ২০১৪ সালে এসে বাধার মুখে পড়ে বলে মত অনেকের৷ কারণ, সেবছর ক্রাইমিয়া দখলের পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার উপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷ কিন্তু যত নিষেধাজ্ঞাই আরোপ করা হোক, পুটিন ক্রাইমিয়ার দখল ছাড়তে রাজি নন৷
গত বছরের মার্চে আবারও বিপুল ভোটে জয়লাভ করে চতুর্থ মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন পুটিন৷
রাশিয়ায় প্রেসিডেন্টের মেয়াদকাল এখন ছয় বছর৷ ২০২৪ সালে চতুর্থ মেয়াদ শেষ করতে পারলে ২৪ বছর রাশিয়ার ক্ষমতায় থাকার গৌরব অর্জন করবেন তিনি, যা হবে সোভিয়েত আমলের নেতা জোসেফ স্টালিনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সময় ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড৷
মিখায়েল বুশুয়েভ/এসএনএল