পুলিশে অসন্তোষ, জোড়া খুনের তদন্তে তৎপর সিআইডি
৮ সেপ্টেম্বর ২০২২বাগুইআটির দুই কিশোরের হত্যা নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। আগেই পুলিশি ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছিল নিহতদের পরিবার। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পুলিশের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন। নিহত কিশোরদের দেহ সপ্তাহ দুয়েক বসিরহাটের মর্গে পড়ে থাকলেও বাগুইআটির পুলিশ কার্যত চুপচাপ বসেছিল। নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী বিধাননগর কমিশনারেট ও বাগুইআটি থানার ভূমিকায় খুবই অসন্তুষ্ট। বৈঠকে রাজ্য পুলিশের ডিজি-র কাছে প্রশ্ন করেছেন, মর্গে এতো দিন দেহ পড়ে থাকলেও কেন পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে ছিল? কেন পুলিশের কাজে সমন্বয় নেই?
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই বাগুইআটির ‘ক্লোজড’ আইসি কল্লোল ঘোষকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সাসপেন্ড হয়েছেন তদন্তকারী আধিকারিক প্রীতম সিনহাও। কল্লোলের স্থানে কাজ করছেন বিমানবন্দর থানার আইসি শান্তনু সরকার। বুধবারের প্রশাসনিক বৈঠকের পরই রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী ঘোষণা করেন, জোড়া খুনের তদন্তভার সিআইডি-র হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। সেদিন রাতেই সিআইডি-র চারজনের প্রতিনিধিদল ভাঙড় থানায় যায়। বাসন্তী হাইওয়ের পাশে অতনু দে ও অভিষেক নস্করের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। থানায় গিয়ে তদন্তকারীরা সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেন। আততায়ীরা কোন পথে গাড়ি নিয়ে এসে দুই কিশোরের দেহ ফেলে রেখে যায়, তার হদিশ পাওয়ার চেষ্টা করেন।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সিআইডি-র তৎপরতা আরো বেড়েছে। একাধিক দলে ভাগ হয়ে তদন্তকারীরা জোরকদমে কাজ করছেন। একটি দল বাগুইআটি থানায় পৌঁছয়।
অতনু-অভিষেক খুনে ব্যবহৃত গাড়িটি সেখানে রাখা রয়েছে। ওই গাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। তার আগে সকালে নিউটাউনের গেস্ট হাউসে যায় সিআইডি-র দল। এখানে বসেই অভিযুক্তরা খুনের পরিকল্পনা করে বলে সূত্রের খবর। এখানকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্ন ওঠায় সিআইডি এখন ময়দানে। ২৪ আগস্ট থানায় নিখোঁজ ডায়েরি হওয়ার পরেও পুলিশ কেন কোনো উদ্যোগ নেয়নি? ১৪ দিন ধরে বসিরহাটের পুলিশ মর্গে দেহ পড়েছিল। তাও কেন পুলিশ জানতে পারল না? খুনের পর ১৭ দিন কেটে গেলেও এখনো মূল অভিযুক্ত সত্যেন্দ্র চৌধুরীর নাগাল পায়নি তারা। শুধু তাই নয়, নিহতদের পরিবার অভিযোগ করেছে, পুলিশ শুরুতে ডায়েরি নিতে চায়নি। অভিযোগকারীদের নাকি বলা হয়, কয়েকদিন পর ছেলেরা নিজেরাই বাড়ি ফিরে আসবে! এতে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সঙ্গে অমানবিকতার দিকটিও উঠে এসেছে।
বিরোধীরা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করছে। নিহতের বাড়ি গিয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। প্রতিবাদ সভা করেছেন বিরোধী দলনেতা, বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী। এতে শাসক দলের অস্বস্তি বাড়ছে। বিভিন্ন অনিয়মের তদন্তে রাজ্যের তদন্তকারীদের প্রতি বরাবরই বিরোধীরা অনাস্থা প্রকাশ করে এসেছে। নবান্ন পাল্টা রাজ্যের সংস্থার পক্ষে সওয়াল করেছে। জোড়া হত্যাকাণ্ডে পুলিশের অকর্মণ্যতা প্রমাণিত হয়ে যাওয়ায় বিরোধীরা সুর চড়িয়েছে। সাধারণভাবে অভিযোগ ওঠে, পুলিশ রাজনৈতিক প্রভাবে কাজ করে। কিন্তু বাগুইআটির ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনো যোগই এখনো উঠে আসেনি।
যদিও একে রাজনীতির সঙ্গে জুড়ে দেখছেন সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান, অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস ড. নজরুল ইসলাম। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, “পুলিশকে দৈনন্দিন যে ডিউটি করতে হয়, সেটা তারা না করলে কোনো সমস্যা হয় না। পুলিশ মনে করে, শাসক দলের নেতাদের সন্তুষ্ট রাখা, ফরমায়েশ খাটাই তাদের কাজ। নইলে যখন এলাকার দুটি ছেলে নিখোঁজ, তখন মর্গে দেহ পড়ে থাকার খবর শুনেও পুলিশ কেন বসে থাকল? তারা জানে, এই কাজটা না করলেও চলবে!” ড. ইসলামের বক্তব্য, “পরিবারের মানুষজনও এটা জানেন বলে পুলিশের কাছে কম এসেছেন, বিধায়কের কাছে গিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তিনবার দরবার করেছেন। তাঁরা জানেন, পুলিশকে বলে কাজ হবে না, রাজনীতির লোকজনকে বলতে হবে।”