পৃথক তেলেঙ্গানা কি সমস্যা বাড়াবে?
১ আগস্ট ২০১৩তেলেঙ্গানা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় আজ থেকে ৬০ বছর আগে৷ তা নিয়ে কেন্দ্রের কোনো সরকারই তেমন মাথা ঘামায়নি৷ সাড়ে তিন বছর টালবাহানার পর অবশেষে ভারতের দক্ষিণী রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশকে ভেঙে আলাদা তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের সবুজ সংকেত দেয় কেন্দ্রের কংগ্রেস-জোট সরকার৷ কিন্তু কেন? কারণটা সহজবোধ্য৷ ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের ভোটব্যাংক৷
প্রশ্ন হলো সেটা কি পূরণ হবে? হলে কতটা? অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশে ৪২টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২০০৯ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছিল ৩৩টি আসন৷ বিভাজনের পর তেলেঙ্গানা-বিরোধী শিবিরের ভোট কি ধরে রাখতে পারবে কংগ্রেস? অন্যান্য রাজ্যে আলাদা রাজ্য গঠনের সমর্থকদের ভোটব্যাংক কী ধরে রাখতে পারবে কংগ্রেস? তাহলে লাভের গুড় তো পিঁপড়েই খাবে৷ রাজ্য কংগ্রেসের অনেক সাংসদ ও বিধায়ক পৃথক তেলেঙ্গানা গঠনের প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই ইস্তফা দিয়েছেন৷
দ্বিতীয়ত, পৃথক তেলেঙ্গানা গঠনের সিদ্ধান্ত অনুঘটকের ভূমিকা নিতে চলেছে৷ বিভিন্ন রাজ্য থেকে স্লোগান উঠছে আরো রাজ্য চাই৷ দাবি উঠছে গোর্খাল্যান্ড, বোড়োল্যান্ড, বিদর্ভ, বুন্দেলখন্ড, হরিৎপ্রদেশ ও জম্মু৷ সেটা কি সামলাতে পারবে কেন্দ্রীয় সরকার? পৃথক রাজ্যের দাবিতে আবহাওয়া ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে৷ সহিংসতার অশনিসংকেত স্পষ্ট৷ বিভিন্ন রাজ্যে গন্ডগোলের আশঙ্কায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে, বিশেষ করে অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মহারাষ্ট্র ও উত্তরপ্রদেশে৷
গোর্খাল্যান্ডের দাবি তেলেঙ্গানা থেকে পুরানো৷ প্রথম দাবি উঠেছিল ইংরেজ আমলে আজ থেকে ১০৭ বছর আগে৷ দার্জিলিং এবং ডুয়ার্স অঞ্চলে নেপালি ভাষাভাষী গোর্খা জনগোষ্ঠী নিজেদের জন্য স্বতন্ত্র রাজ্যের দাবি করেছিল৷ ৮০-দশকে সুভাষ ঘিসিং-এর নেতৃত্বে গোর্খাল্যান্ড নামে পৃথক রাজ্যের আন্দোলন সহিংসতার চেহারা নেয়৷ দেশের ২৯-তম রাজ্য হিসেবে তেলেঙ্গানার জন্ম হলে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিমল গুরুং ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকে নতুন করে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের ডাক দেন৷ এর পরিণাম কী হবে জানা নেই৷
আসামকে টুকরো করে পৃথক বোড়োল্যান্ডের দাবিতে জোরেসোরে আওয়াজ তুলেছে বোড়োল্যান্ড পিপলস ফ্রন্ট এবং বোড়ো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন৷ দাবি উঠেছে মহারাষ্ট্রের কয়েকটি জেলা নিয়ে আলাদা বিদর্ভ রাজ্য গঠনের৷ আন্দোলনকারীদের যুক্তি বিদর্ভ কার্যত শুখা অঞ্চল৷ বিকাশ থেকে বঞ্চিত এই অঞ্চলের নিত্যসঙ্গি দারিদ্র্য৷ ঐ অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য তাই পৃথক রাজ্য গঠন জরুরি৷ উল্লেখ্য ১৯৫৬ সালে মধ্যপ্রদেশের মারাঠি ভাষাভাষী ৮টি জেলাকে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠন নীতিতে মহারাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল৷
প্রস্তাব উঠেছে উত্তরপ্রদেশকে ভেঙে চারটি রাজ্য করার৷ সবথেকে জোরালো দাবি রাজ্যের ২২টি জেলা নিয়ে হরিৎপ্রদেশ গঠনের৷ পৃথক বুন্দেলখন্ড রাজ্যের স্বপ্ন বিএসপি নেত্রী মায়াবতীর৷ তাঁর শাসনকালে ঐ দিশায় কিছুটা কাজও উনি করেছিলেন৷ ক্ষমতা হারানোর পর শাসকদল এসপি তাতে কান দেয়নি৷ কংগ্রেস অবশ্য বুন্দেলখন্ডের সমর্থক৷ অন্যদিকে জম্মু এবং কাশ্মীরকে দুটি আলাদা রাজ্য করার দাবি তুলেছে শিবসেনা৷ পাশাপাশি লাদাখের বৌদ্ধ সম্প্রদায় চাইছে স্বশাসন৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বলা বাহুল্য তার বিরোধী৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা রসিকতা করে বলেছেন, কংগ্রেস যতটা খেয়ে হজম করতে পারবে, তার চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলেছে৷ ফল, বদহজম৷