‘পৃথিবীর সবচেয়ে অপেশাদার ক্রিকেট বোর্ড আমাদের’
২৬ মার্চ ২০২১ডয়চে ভেলে : সম্প্রতি সাকিব আল হাসানের এক সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ক্রিকেটে বেশ আলোচনা হচ্ছে৷ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও এর এক ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে৷ পুরো ব্যাপারটি আপনি কিভাবে দেখছেন?
শফিকুল হক হীরা : আমি মনে করি, এটি দুর্ভাগ্যজনক৷ আমাদের ক্রিকেট বোর্ড পৃথিবীর সবচেয়ে অপেশাদার ক্রিকেট বোর্ড, এতে কোনো সন্দেহ নেই৷ সাকিব তো ই-মেইল করেছে৷ সে আইপিএল খেলতে চেয়েছে৷ এ বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যেহেতু ভারতে হবে, সেখানে আইপিএলে বিশ্বমানের খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেললে ওর উপকার হবে৷ বোর্ড ওকে ছুটি দিয়েছে৷ সাকিব যে ই-মেইল দিয়েছে, সেটি কেউ পড়েনি৷ এটি পড়ার সামর্থ্য আকরামের আছে কিনা, আমি তা-ও তো জানি না৷ আমি জানি না, ও কতটা শিক্ষিত৷ সাকিব যেটা বলেছে, সেটি আমি পাঁচ বছর ধরে বলে আসছি৷ আমাদের ক্রিকেট বোর্ড পেশাদার না৷ এখানে প্রতিটি বিভাগের চেয়ারম্যানের (সপ্তাহে) তিন-চারদিন তিন-চার ঘন্টা করে অফিস করা দরকার৷ প্রোগ্রামগুলো কী অবস্থায় আছে, সেগুলো দেখভাল করবে৷ দুর্ভাগ্যজনকভাবে, কোনো বোর্ড সদস্য আসে না৷ এলেও আড্ডাবাজি করে৷ বোর্ড প্রেসিডেন্ট যদি ক্রিকেট পছন্দ করেন, সেই পছন্দ করা দিয়ে তো কোনো লাভ হবে না৷ উনি কি দেখছেন না, বোর্ড সদস্যদের কাছ থেকে কী পাচ্ছেন? বেশিরভাগ বোর্ড সদস্যের ক্রিকেট খেলা সম্পর্কে ধারণা কম৷ তারা বেশিরভাগই ব্যবসায়ী৷ আর বোর্ডের মিটিংও কম হয়৷
বোর্ডের পরিচালক হিসেবে তো এখন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়কই আছেন তিন জন৷ সাবেক ক্রিকেটারও আছেন আরো কয়েকজন...
সাবেক অধিনায়ক মানে কিন্তু এটা নয় যে, সে টেকনিক্যাল দিক ভালো জানবে৷
বোর্ড পরিচালকদের বিপক্ষে সাকিবের যে অভিযোগ, সেটি কিন্তু মূলত আকরাম খানের ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগ এবং নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের হাই পারফর্ম্যান্স ইউনিট৷ মানে জাতীয় দলের সাবেক দুই অধিনায়কের অধীনে থাকা কমিটি নিয়ে৷
ঠিক তাই৷ আগে ওরা চুক্তিভুক্ত ছিল৷ সে কারণে বলার সুযোগ পায়নি৷ এখন যেহেতু ওরা বোর্ডের চুক্তির বাইরে, সে কারণে বলতে পারছে৷
সাকিব ফেরার পর তো কেন্দ্রীয় চুক্তি হয়নি৷ কিন্তু যখন চুক্তি হবে, সেটি তো ব্যাকডেটে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে৷
ঠিক আছে, সেটি বোঝা গেল৷ সাকিব চালাক ছেলে৷ বিভিন্ন বড় বড় খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলেছে, ও ক্রিকেট বিষয়ে অনেক কিছু জানে৷ আমি নিশ্চিত যে, ও যেদিন সই করবে, সেদিন থেকে চুক্তিভুক্ত বলে নিজেকে ধরবে৷ যদি ২৯ মার্চ চুক্তি হয়, ও সেদিন থেকে কথা বলা বন্ধ করে দেবে৷
শুধু সাকিব তো নন, মাশরাফিকেও আমরা দেখি মাঝেমধ্যে বোর্ডের বিপক্ষে কথা বলেন৷ তাদের রাগ-ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ এবং তারা যেসব বলেন, এর বেশিরভাগই যৌক্তিক বলে বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন৷ এই যে বোর্ড ও ক্রিকেটারদের অবস্থান, তা আমাদের ক্রিকেটের জন্য কতটা দুর্ভাগ্যজনক?
খুবই দুর্ভাগ্যজনক৷ এর কারণ হচ্ছে, আমাদের ক্রিকেট বোর্ড পেশাদার না৷ এসব আমি পাঁচ-ছয় বছর ধরে বলে আসছি৷ কিন্তু কেউ শোনে না৷ এখন ওরা বলছে৷ ওদের পুরো দেশ চেনে, ওদের কারণে বাংলাদেশকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ চেনে৷ এখন ওরা যদি কোনো কথা বলে, সেটির গুরুত্ব অনেক বেশি৷ কারণ, সাকিব এটা বলেছে৷ ও অহেতুক কিছু বলবে না৷ সাকিব মনের কথা বলেছে৷ সেখানে একটু ভুল হতে পারে, একটু বাড়তি বলতে পারে, কিন্তু ও মনের কথা বলেছে৷
এখন সাকিব-মাশরাফিরা যখন বোর্ডকে নিয়ে নানা কথা বলছেন, তাতে চিত্রটা কি একটু হলেও পাল্টাবে বলে মনে করেন?
সাকিব নিজের অ্যাকাডেমি করে দেখিয়ে দিয়েছে ও ক্রিকেট ভালোবাসে৷ ও চায়, ক্রিকেটটা যেন পেশাদারভাবে পরিচালিত হয়৷ যেভাবে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ড চলে; অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড চলে৷ আমাদের বোর্ড কেন সেভাবে চলতে পারে না? এখন ওরা বলার পর অবস্থান পরিবর্তন অবশ্যই হবে৷ প্রত্যেক ক্রিকেটার সাকিব হবে না৷ ও আউটস্ট্যান্ডিং৷ তবে ও চায়, অন্য ক্রিকেটাররা যেন ওর কাছাকাছি পর্যায়ে উঠে আসে৷ তাহলেই কেবল আমাদের একটি ভালো দল হবে৷ আমি অবশ্যই আশা করছি, এখন সাকিব কথা বলার পর তা কার্যকর হবে৷ মাশরাফীর কথা কার্যকর হবে৷ এখন নিশ্চয়ই বোর্ড দেখবে, তারা কোথায় ভুল করেছে৷ সেগুলো শোধরানোর সুযোগ এখন আছে৷