1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্যারিস শহরের দৈন্য যখন শূন্যে ভাসে

২০ ডিসেম্বর ২০১৮

নগরায়নের চাপে অনেক শহরেরই পুরানো রূপ লোপ পাচ্ছে৷ প্যারিসের এক ফটোগ্রাফার অভিনব পদ্ধতিতে প্রাচীন ভগ্রপ্রায় বাড়িগুলিকে বিমূর্ত রূপ দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য ধরে রাখছেন৷ দরিদ্র পাড়ার মানুষগুলিকেও ভুলে যাননি তিনি৷

https://p.dw.com/p/3AQ0T
Frankreich Nationalfeiertag in Paris
ছবি: Reuters/E. Laurent

লোরঁ শেয়ের একাধারে স্বপ্নদর্শক, টাইম ট্র্যাভেলার ও জাদুকর৷ কারণ, তাঁর বাড়িগুলি শূন্যে ভাসতে পারে৷ তিনি নিজে বলেন, ‘‘সময়ের ছাপ রয়ে গেছে৷ যেমন জং ধরা জানালার শাটার৷ মৃতপ্রায় বাড়ি অথবা যে বাড়ির পুনর্জন্ম হচ্ছে, সেগুলি নিয়ে আমার আগ্রহ বেশি৷ সংস্কারের ঠিক আগের মুহূর্ত আমি ধরে রাখার চেষ্টা করি৷ তারপর আমার আগ্রহ চলে যায়৷''

প্যারিসের নামিদামি রাজপথ থেকে দূরে সাধারণ মানুষের বাড়িঘর ফটোগ্রাফার হিসেবে তাঁর কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয়৷ ফটোশপের মাধ্যমে তিনি সেই বাড়ি শূন্যে ভাসিয়ে দেন৷ অসাধারণ সেই ছবির মধ্যে পরাবাস্তব জাদু ও হালকা, ওজনহীন এক মেজাজ রয়েছে৷ প্যারিসের লুপ্তপ্রায় রূপ তাতে ধরা পড়ে৷ লোরঁ বলেন, ‘‘রোব্যার দোয়ানো বা উইলি রোনিস-এর মতো ফটোগ্রাফার আমাকে অত্যন্ত প্রভাবিত করেন৷ তাঁদের ছবি বড় কাব্যময়৷ আমি ভাবতাম, কোথায় সেই কবিতা, আমার তো চোখে পড়ছে না! আমি তার সন্ধান শুরু করলাম৷ তারপর আগে দেখা পুরানো এক চিমনি, একটা ছাদ, পথের দৃশ্য চোখে পড়লো৷''

অতীত যুগের প্রতি আকুল আকাঙ্ক্ষার বশে লোরঁ শেয়ের প্যারিসের পূর্বদিকে মেলিনমোতঁ-বেলভিল নামের পাড়া ঘুরে দেখেন৷ সেখানে নানা সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস৷ তিনি বলেন, ‘‘এমন জায়গা সত্যি বিরল৷ দুই বছর পর আবার এখানে এলে দেখবেন, সবকিছু কেমন বদলে গেছে৷ সেই প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গেছে৷ ডানদিকে সংস্কার শেষ হয়েছে, ছোট বুটিক ও ডিজাইনার স্টুডিও খোলা হয়েছে৷''

দ্রুত উন্নয়নের মুখে লোরঁ শেয়ের এই পাড়ার চরিত্র ক্যামেরার লেন্সে ধরে রেখেছেন৷ স্থাপত্য, প্রাচীর, তার উপর লেখা, গ্রাফিটি – এসব নথিভুক্ত করা হয়েছে৷ প্রথমে পেন্সিলের আঁচড়ে তিনি নিজের তোলা ছবির অংশ জুড়ে বাড়ি সৃষ্টি করেন৷ সেই সৃষ্টি নিজস্ব এক সত্তা পেয়ে যায়৷ লোরঁ শেয়ের বলেন, ‘‘বাড়িটিকে তার চারিপাশের পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায় কিনা, এই স্কেচের মধ্যেই সঙ্গে সঙ্গে তা দেখা যায়৷''

চলচ্চিত্র জগতেও এমন দৃষ্টান্ত খুঁজে পেয়েছেন লোরঁ শেয়ের৷ যেমন, ফেডেরিকো ফিলেনি, ভিম ভেন্ডার্স বা আলবেয়ার লামোরিস-এর ছবিতে৷ ১৯৫৫ সালে বেলভিলে ‘লাল বেলুন' নামের একটি গোটা ছবির শুটিং হয়েছিল৷ তবে শিল্পী হিসেবে লোরঁ শুধু অতীতেই আবদ্ধ নেই৷

তাঁর তৈরি ফটোমন্টাজে সেইসব মানুষের কাহিনিও তুলে ধরা হয়, যাঁরা সেই এলাকায় বসবাস করেন৷ লোরঁ বলেন, ‘‘আফ্রিকা, আলজেরিয়া, চীনসহ গোটা বিশ্বের মানুষ এখানে এসেছেন৷ এ যেন বাবেল টাওয়ার৷ এটাই এই পাড়ার শক্তি, তার সমৃদ্ধির কারণ৷ খুব নিজস্ব মনে করি বলে আমি শুধু সুখ্যাতিই করছি, যদিও আমি মোটেই সরল নই৷ এই বাঁকা বাড়িটির নাম রেখেছি ‘বিশাল বিভ্রম'৷ যেসব শরণার্থী ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে এখানে আসেন, তাঁদের স্বপ্ন ও আশা নিয়েই এই সৃষ্টি৷ প্যারিসের দারিদ্র্য ও দৈন্য লুকিয়ে রাখার জন্যও বেলভিলের প্রয়োজন রয়েছে৷''

কখনো কখনো প্রায় ৩০০ ফটোর সমন্বয়ে লোরঁ তাঁর বাড়ি সৃষ্টি করেন৷ কম্পিউটারে পাজল খেলার মতো সৃষ্টিকর্ম চূড়ান্ত রূপ পায়৷ এবার বইয়ের আকারেও তাঁর ছবির সংগ্রহ প্রকাশিত হয়েছে৷ তার মধ্যে বেলভিল পাড়ার একটি বাড়িও স্থান পেয়েছে৷ প্যারিস শহরের পুরানো রূপ কখনো লোপ পাবে না৷ লোরঁ শেয়ের আগেভাগেই সেই সম্পদ নিরাপদে আকাশে ভাসিয়ে দিয়েছেন৷

সুসানা শ্যুরমান্স/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান