আইইডিসিআর-এর তথ্য অনুসারে ৮ মার্চ দেশের প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকে এই ২২ দিনে দেশে মোট আক্রান্ত ৪৯ জন, এর মধ্যে পাঁচজন মারা গেছেন, ১৯ জন সুস্থ হয়েছেন৷ গত তিনদিনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন একজন৷
কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, সামনের দুই সপ্তাহে বাংলাদেশে আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ এদিকে চৈত্রের গরম বেড়েই চলেছে, দুনিয়ার বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে চাইছেন যে, এই তাপমাত্রায় ভাইরাসের জীবিত বা কর্মক্ষম থাকা সম্ভব কিনা৷
প্রতিবেশী ভারত একবারে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে তবুও সেখানে আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে৷ তবে কি ভারতের শিক্ষা নেওয়া উচিত আমাদের কাছ থেকে? কেউ কেউ বলছেন, অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে দৃষ্টি সরাতে নরেন্দ্র মোদী ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছেন, বেশি প্রতিক্রিয়া বা ওভাররিঅ্যাক্ট করছেন৷
১০ বা ১৫ দিনের ছুটি আর আতঙ্ক মিলে আয় রোজগারহীন সাধারণ মানুষের কষ্ট সীমা ছাড়িয়ে যাবে যে কোনো সময়৷ দুর্যোগের সঙ্গে লড়াইয়ে অভ্যস্ত হলেও এই করোনা ভাইরাসের আক্রমণ আমাদের কাছে তার নামের মতোই নতুন৷ এর প্রভাবে আমরা সবাই বিচিত্র আচরণ করছি৷ সরকারি ছুটি ঘোষণা, ট্রেনে-বাসে-লঞ্চে উপচে পড়া ভিড়, রাস্তায় দেখা গেলে কানধরে উঠবোস বা পেটানো, কবরস্থানে করোনা রোগীদের না, বা হাসপাতাল বসাতে বাধা- সবই চলছে৷ সামাজিক মাধ্যমে পাশাপাশি চলছে সরকার মৃতদেহ লুকিয়ে রাখছে বা আইইডিসিআর রোগীর সংখ্যা কমিয়ে রাখছে জাতীয় আলোচনা৷ বাংলাদেশ যে কোনো মুহূর্তে গোরস্থানে পরিণত হবে একথা বলতে এবং আঁক কষে দেখিয়ে দিতেও ব্যস্ত আছেন অনেকে৷
কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, সরকার এখন কী করবে? আইইডিসিআরকে আমলে নিলে ৪ এপ্রিলের পর আর ছুটি বাড়ানো উচিত হবে না৷ বেলারুশের মতো সব কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার ঘোষণা দিতে হবে তাকে৷ আর এই ঘোষণা আসতে হবে আজ-কালকের মধ্যেই৷ নইলে রোববারের আগে কর্মজীবী মানুষ কী করে ফিরবেন? অনেকের মতো সরকার যদি মনে করে, করোনা পরীক্ষা হয়েছে কম, অনেক মানুষের মধ্যে তা ছড়িয়ে গিয়ে থাকতে পারে, পরে যার ভয়ঙ্কর আউটব্রেক হতে পারে, তবে তা-ও জনগণকে স্পষ্ট ভাষায় জানানো উচিত৷ ছুটি বা অলিখিত লকডাউনের সময়সীমা কতদিন পর্যন্ত বাড়ানো হবে তা-ও জানাতে হবে শিগগিরই৷
আমরা ধরে নেই, সরকার সেফসাইডে থাকার জন্য আরো ১৫ দিনের লকডাউন নীরবে বা চিৎকার করে ঘোষণা করলেন৷ সেক্ষেত্রে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সূচক ও নিয়ামকগুলো সরকারের নীতিনির্ধারকেরা ভেবেছেন তো? আমাদের অর্থনীতি কিন্তু ঠিক সিলেবাসের বইগুলোর মতো নয়, এটাও কিন্তু মনে রাখতে হবে৷ অর্থমন্ত্রী কি একটি রূপরেখা দেওয়ার কথা ভাববেন? ব্যথা কিন্তু সারা গায়েই, ওষুধ আগে কোথায় দেবেন তা আগেভাগেই ভাবতে হবে৷