ভর্তির সময় কেন পরীক্ষা দিতে হবে?
১৪ মার্চ ২০১৭স্কুলগুলোর লেখাপড়ার মান নিয়ে যখনই ভাবি, তখনই মাথায় আসে কোচিংয়ের কথা৷ আমার মনে হয়, স্কুলে পড়ার পর আবার কোচিংয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে কেন? তার মানে, স্কুলে পড়ানোর পরেও অভাব রয়ে যাচ্ছে৷ এ অভাবটা যেন না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷ আমি চাই, এমন একদিন আসবে যখন কাউকে কোচিংয়ে দৌড়াতে হবে না৷ স্কুলগুলোতে প্রতি পাঠের পর কোনো শিক্ষার্থীর সমস্যা থাকলে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত৷ সিলেবাস শেষ করার তাড়া থাকে কিংবা কখনো শিক্ষকরা বাধ্য করেন কোচিং করতে৷ এ সংস্কৃতি দূর করতে হলে স্কুলে পড়ালেখার মান আরো বাড়াতে হবে৷
বর্তমানে ইট-পাথরের এ শহরের স্কুলগুলো অনেক যান্ত্রিক৷ আগের দিনের স্কুলের মতো নেই খোলা মাঠ৷ শুধু তাই নয়, এখন কোনটি ভালো স্কুল তা শুধু পরীক্ষার ফলের ওপরেই যেন ঠিক করি আমরা৷ স্কুলগুলো হয়ে উঠেছে পাখির খোপের মতো৷ পড়ালেখার পরিবেশের পাশাপাশি স্কুলগুলোতে চাই সহশিক্ষা কার্যক্রম৷ পূর্ণাঙ্গ মানসিক বিকাশে খেলাধুলা, বিতর্ক, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম থাকা উচিত স্কুলগুলোতে৷
শিক্ষার উদ্দেশ্য তো শুধু বইয়ের পড়া গেলানো নয়! অন্যান্য গুণাবলীর পূর্ণাঙ্গ বিকাশের জন্যও কার্যক্রম দরকার৷
শিক্ষকদের পড়ানোর পদ্ধতিতেও চাই পরিবর্তন৷ অনেক পরীক্ষায় শিক্ষকরা গাইড থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দেন৷ এ কারণে শিক্ষার্থীরাও হয়ে যাচ্ছে গাইডনির্ভর৷ তাই শিক্ষকদের উচিত মৌলিক প্রশ্নপত্র প্রণয়ণ করা৷ পাঠদানের বিষয়টিকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা উচিত৷ বিভিন্ন স্কুলে প্রজেক্টরের সাহায্যে পাঠদান করা হলেও আমার স্কুলে এখনো তা চালু হয়নি৷ পাশাপাশি পাঠের বিষয়বস্তু ব্যবহারিকভাবে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরার ব্যবস্থা করা উচিত৷ কিন্তু স্কুলগুলোতে ব্যবহারিক পাঠদানের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অপ্রতুলতা রয়েছে৷
পাশাপাশি শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের এক প্রতিযোগিতায় ঠেলে দিচ্ছেন৷ আমরা যতটুকু না শিক্ষার্থী, তার চেয়ে বেশি পরীক্ষার্থী৷ শিক্ষকদের উচিত, শিক্ষার্থীদের মন থেকে এ পরীক্ষাভীতি দূর করা৷ বিশেষ করে পঞ্চম শ্রেণইতে সমাপনী পরীক্ষার কারণে ছোট্ট শিশুগুলোর কাঁধে থাকে পাহাড়সম চাপ৷ যে চাপ সামলাতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয় তারা৷ পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রস্তুতি হিসেবে স্কুলে হরেক রকমের পরীক্ষা দেয়৷ বাসার স্যারের কাছে পরীক্ষা দেয়৷ কোচিংয়ে পরীক্ষা দেয়৷ একটুখানিও অবসর মেলে না এ ছোট্ট শিশুদের৷
আমি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছিলাম, তখন দেখেছিলাম প্রশ্ন ফাঁসের হিড়িক৷ অষ্টম শ্রেণির জেএসসি আর এবারের এসএসসিতেও দেখলাম৷ এ প্রশ্নফাঁস আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মেরুদণ্ডকে ভেঙে দিচ্ছে৷ প্রশ্নফাঁস বন্ধে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপও দেখিনি৷ বিষয়টা সাংবাদিকদের প্রশ্ন আর তার জবাবে শিক্ষামন্ত্রীর তদন্তের আশ্বাসেই আটকে আছে৷
এছাড়া শিশুদের যখন শিক্ষার হাতেখড়ি হয়, তখন পরীক্ষার প্রয়োজন আমি দেখি না৷ প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তির সময় কেন পরীক্ষা দিতে হবে? এটা কি তাদের যোগ্যতা প্রমাণের সময়? এ সময়টা শিশুরা মাত্র পড়াশোনা শুরু করে৷ সংখ্যা গণনা কিংবা বর্ণ পরিচয়ে সীমাবদ্ধ থাকে তাদের পড়ালেখা৷ এত ছোট্ট বয়সে এ জ্ঞান নিয়ে তারা কী প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে? কী যোগ্যতা প্রমাণ করবে?
বেশ কয়েক বছর ধরে বছরের প্রথম দিনই বই হাতে পাওয়ার আনন্দ পায় আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা৷ কিন্তু এবারের পাঠ্যবইয়ে বেশ কিছু ভুল ছিল চোখে পড়ার মতো৷ কিছু কবিতার শব্দবিন্যাস ঠিক ছিল না৷ পাঠ্যবই বছরের প্রথম দিন হাতে তুলে দেওয়ার পাশাপাশি বইয়ে যেন ভুল না থাকে সেদিকেও সতর্ক থাকতে হবে৷
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত পাঠ্যবই তিনটি৷ কিন্তু কিন্ডারগার্টেনগুলোতে দেখছি এগুলোর সাথে আরো অনেক বই পড়ানো হয়৷ এত অল্প বয়সেই বইয়ের ভারে শিশু কুঁজো হয়ে গেলে তার মনে পড়ালেখা নিয়ে ভয় জন্মাবে৷ আমি মনে করি, পাঠ্যবই ছাড়া অন্য কিছু পড়ানো ঠিক হবে না৷ এ সময়টাতে তাদের পড়ালেখা হতে হবে মজার ছলে৷
প্রতিটি স্কুলে একটি পাঠাগার থাকা উচিত৷ প্রমথ চৌধুরী তার ‘বই পড়া' প্রবন্ধে তুলে ধরেছেন পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা৷ স্বেচ্ছায় জ্ঞান অর্জনের জন্য পাঠাগারের চেয়ে সেরা জায়গা আর নেই৷ অথচ অনেক স্কুলে পাঠাগার দেখা যায় না৷ পাঠাগারের সংস্কৃতি চালু হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি৷
এই লেখাটি লিখেছেন ঢাকার ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলের ছাত্র আজমল তানজীম সাকির (১৩)
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷