ভাষা শিক্ষায় বিশেষ সহায়তা
১২ জুলাই ২০১৩এমরে বেশ গর্বিত যে সে জার্মান ভাষার পাশাপাশি অনর্গল ফার্সি বলতে পারে৷ হ্যাঁ, জার্মান ভাষা শিখতে তেমন অসুবিধা হয়নি এমরের৷ যদিও প্রথম দিকে তাকেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে৷
এমরে, পাউলিনে, আলি এবং লেওর মতো নানা দেশ ও জাতির ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা করে এরিশ কেস্টনার স্কুলে৷ কিন্তু এ নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা দেখা দেয় না সেখানে৷ স্কুলটি শহরের এমন এক অংশে অবস্থিত, যেখানে সামাজিক ভাতার ওপর নির্ভরশীল মানুষের বসবাস বেশি৷ কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে রয়েছে এক রঙিন মিশ্রণ৷
বিশেষ করে বিদেশি বাচ্চাদের মধ্যে অনেকেই ডাক্তার, প্রফেসর বা পদস্থ ব্যক্তির সন্তান৷ স্কুলে গেলে লক্ষ্য করা যায়, একই দেশ থেকে এলেও বাচ্চারা পরস্পরের সঙ্গে তাদের মাতৃভাষায় কথাবার্তা বলছে না৷ অবশ্য টিফিনের সময় অনেক সময় ভিনদেশি ভাষায় কথাবার্তা বলে ছেলে-মেয়েরা৷ বিশেষ করে ‘গোপন' কোনো বিষয় থাকলে৷
আলাদা কোচিং-এর ব্যবস্থা
ভাষার কারণে যে সব বিদেশি বংশোদ্ভূত বাচ্চা ক্লাসের পড়া ঠিকমতো বুঝতে পারে না, তাদের জার্মান ভাষা শেখার জন্য বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে এরিশ কেস্টনার স্কুলে৷ যেখানে এই ধরনের প্রতিটি বাচ্চার জন্য আলাদা আলাদা কোচিং দেওয়া হয়৷ অভিবাসী শিশুদের জন্য দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে জার্মান পড়ানোর ব্যবস্থা প্রায় সব স্কুলেই রয়েছে৷ কিন্তু এরিশ কেস্টনার স্কুলের, বিশেষ করে জার্মান অভিভাবকরা মনে করেন, এই ব্যবস্থা যথেষ্ট ছিল না৷
আর তাই তো, ছেলে-মেয়েরা যেন শিক্ষায় সবচেয়ে ভালো সহায়তা পায়, সেজন্য অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করেন তারা৷ এই লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয় একটি সমিতি৷ যেটি স্কুল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় অর্থায়নের দিকটি দেখাশোনা করছে৷ অনেক বাবা-মা সমিতিতে মোটা অঙ্কের অর্থ দান করে থাকেন৷
এই সব অভিভাবক বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার ব্যাপারে চিন্তিত, নাকি সহপাঠীদের ভাষা সমস্যার কারণে সন্তানদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটতে পারে বলে শংকিত, তা নিয়ে মাথা ঘামান না শিক্ষিকা গাব্রিয়েলা শেফার৷ অল্প অর্থের বিনিময়ে ভাষার দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া বাচ্চাদের যে সাহায্য করা যাচ্ছে, এটাই তাঁর কাছে বড় কথা৷
জাতীয়তা নিয়ে মাথা ঘামানো হয় না
গাব্রিয়েলা শেফারের ক্লাস থ্রি-তে বাচ্চাদের জাতীয়তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না৷ যেমন শাংহাই থেকে আসা ভিক্টরকেও আলাদা করে চোখে পড়ে না৷ মাত্র দু'বছর আগে জার্মানিতে এসেছে সে৷ জার্মান ভাষা একটুও জানতো না৷ কিন্তু এখন বেশ ভালোই পারে৷ তাই এমরে ও অন্য আরো কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে সাধারণ ক্লাসের পর বইয়ে ভর্তি পাশের ছোট ক্লাসরুমটিতে নিয়মিত যেতে হয় তাকে৷ ভাষা শিক্ষক মার্কুস ভল্ফ এই সব বাচ্চাদের নিয়ে জার্মান ভাষা চর্চা করেন৷ ‘‘আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে মিলে প্রত্যেকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পাঠ্যক্রম তৈরি করেছি৷ কেননা একেক জনের চাহিদা একেক রকমের৷'' জানান এই শিক্ষাবিদ৷
ভিক্টর, লেও, আলির মতো অনেক বাচ্চাই জার্মানের পাশাপাশি দ্বিতীয় আরেকটা ভাষা জানে বলে বেশ গর্বিত৷ তাদের এই দক্ষতা মাঝে মাঝে ক্লাসে কাজেও লেগে যায়৷ ‘‘কোনো শব্দের ইংরেজি না জানা থাকলে লেওর কাছে সাহায্য পাওয়া যায়৷'' জানায় রাবেয়া৷ আর জার্মানির এলা বলে, ‘‘তারা নিজেদের ভাষায় কী যেন বলে, চীনা ভাষায় হাতের তালুতে লেখে৷ সত্যি কী সুন্দর্য''!
ঠিক পথেই এগুচ্ছে স্কুলটি
জার্মান ছাত্রছাত্রীদের হাবভাব দেখেই বোঝা যায় যে, এরিক ক্যাস্টনার স্কুল সঠিক পথেই এগুচ্ছে৷ জানান ক্লাস টিচার গাব্রিয়েলা শেফার৷ তাঁর কথায়, বাচ্চারা ‘‘অন্যান্য দেশের ছেলে-মেয়েদের স্বাভাবিক বলেই মনে করে৷ তাদেরকে সাহায্য করতে পেরে খুশিও হয়৷'' ভিক্টর, এমরে ও লেও তাদের পূর্ব পুরুষের দেশ ও পরিবার সম্পর্কে গল্পগুজব করতে থাকলে এলা জড়সড় হয়ে পাশে বসে থাকে৷ মনে হয় যেন একটু ঈর্ষাও অনুভব করে৷ আর তাই তো নিজেকেও ‘কিছুটা অভিবাসী' বলে পরিচয় দিতে পছন্দ করে মেয়েটি৷ বলে, ‘‘আমি এলা৷ আমি দক্ষিণ জার্মানি থেকে এসেছি৷''