প্লাস্টিক বর্জ্যে দূষিত ভূমধ্যসাগর, মানুষ ও জীব হুমকির মুখে
১৫ মার্চ ২০১১বিজ্ঞানীরা সতর্কতাবাণী উচ্চারণ করে বলছেন, মাছেরা অনেক সময় এই সব প্লাস্টিক বর্জ্য খেয়ে ফেলে৷ ফলে এদের মাধ্যমে আমাদের খাবারের প্লেটে চলে আসতে পারে এই বিষাক্ত পদার্থ৷ জাহাজ এবং উপকূলের প্লাস্টিকের আবর্জনা বাতাসে ভেসে আসে সাগরে৷ বিশেষ করে স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবর্তী প্রদেশ আলমেরিয়াতে প্লাস্টিক বর্জ্যের আধিক্য দেখা যায়৷ জেলেরা মাছ ধরতে গেলে প্রায়ই প্লাস্টিক বর্জ্য উঠে আসে তাঁদের জালে৷ এ প্রসঙ্গে জেলে এনরিকে বলেন, ‘‘আমরা প্রচুর প্লাস্টিকের জিনিসপত্র, ব্যাগ, গাছপালার আবর্জনা ইত্যাদি পাই৷ বৃষ্টি পড়লে ছোট ছোট নদী বাহিত হয়ে অনেক বর্জ্য এসে পড়ে সাগরে৷ বিশেষ করে সাগরে যখন প্রচণ্ড ঢেউ ওঠে৷''
আলমেরিয়ার সামুদ্রিক অঞ্চলের নাম দেয়া হয়েছে প্লাস্টিকের সাগর৷ সর্বত্রই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্লাস্টিক৷ পরিবেশ ও স্বাস্থ্যরক্ষা সমিতির পাকো টলেডানো ও তাঁর সহকর্মীরা এই সমস্যাটি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন বেশ কয়েক বছর ধরে৷ চাষিদের ফসল উৎপাদনের গ্রিন হাউস থেকে অনেক প্লাস্টিকের ঢাকনা বা পাত সাগর তীরে এসে পড়ে৷ সেখানে থেকে চলে আসে সাগরে, গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়৷ পাকো টলেডানো জানান, ‘‘এটাকে রীতিমত কেলেঙ্কারি, বিশেষ করে মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে বিরাট এক ঝুঁকি বলা যায়৷''
শুধু মানুষেরই নয় সামুদ্রিক প্রাণীদের জন্যও প্লাস্টিক বর্জ্য ডেকে আনে ভয়ংকর বিপদ৷ একটি সামুদ্রিক কচ্ছপ এই বর্জ্য খেয়ে ফেলে৷ তাকে সাগর পারে পাওয়া যায় মৃত অবস্থায়৷ বাহ্যিক দিক দিয়ে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই৷ ময়না তদন্ত করে বোঝা যাবে কী হয়েছিল এই প্রাণীটির৷ এ প্রসঙ্গে পাকো টলেডানো বলেন, কচ্ছপকে বলা যায় সুবিধাবাদী জীব৷ বিরাট হাঁ করে যা সামনে পায়, সব কিছুই গিলে ফেলে৷ সম্ভবত সমুদ্রের আবর্জনাও কচ্ছপটি গিলে ফেলেছে, যা হজম করতে না পেরে দ্রুত মারা গেছে প্রাণীটি৷''
এই ভাবে প্লাস্টিকের আবর্জনা প্রকৃতি ও জীবজন্তুকে ধ্বংস করছে৷ যারা এসব ঘটাচ্ছে, তাদের সহজে ধরা যাচ্ছেনা৷ ধরা পড়লেও কথা বলতে নারাজ তারা৷ আলমেরিয়ার প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ এই সমস্যাটিকে ছোট করে দেখার চেষ্টা করছেন৷ কৃষি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খুয়ান ডয়েস বলেন, ‘‘সব রকম কাজ কর্মেই কিছু না কিছু ক্ষতি হয়ে থাকে৷ প্লাস্টিকের আবর্জনার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে, ভাল ইমেজটা যাতে নষ্ট না হয়৷''
গ্রিনহাউসের ঢাকনাগুলি প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর বদলাতে হয়৷ চাষিরা পুরানো ঢাকনাগুলিকে এখন নিখরচায় রিসাইক্লিং করাতে পারেন৷ যে সব চাষি এ ব্যাপারে এগিয়ে আসেন, তারা অন্যদের গাফিলতিতে ক্ষুব্ধ হন৷ সবজি চাষি খুয়ান লোপেজ বলেন, ‘‘বছরের পর বছর ধরে প্লাস্টিকের ঢাকনা এখানে সেখানে পড়ে থাকতে দেখেছি৷ মনে প্রশ্ন জেগেছে, এগুলিকে রিসাইক্লিং না করে ফেলে দেয়া হয়েছে কেন? অবশ্য তখনও রিসাইক্লিংএর পদ্ধতিটা তেমন করে চালু হয়নি এখানে৷ ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, এখন এটা সম্ভব৷''
কৃষি প্রযুক্তিবিদ দিয়েগো ভালেরা মার্টিনেস ও তাঁর সহকর্মীরা গ্রিনহাউসগুলি ঢাকার জন্য বিকল্প কোনো সামগ্রী তৈরির চেষ্টা করছেন৷ গ্লাসের দাম বেশি পড়ে যায় এবং এই এলাকায় খুব একটা খাপ খায় না৷ তাই বিজ্ঞানীরা শক্ত পোক্ত এক ধরনের প্লাস্টিক তৈরিতে মন দিয়েছেন, যা সূর্যের বেগুনি রশ্মিতে তাড়াতাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়না৷ দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারবে এই প্লাস্টিক, যা হবে পরিবেশ ও চাষিদের জন্যও সুবিধাজনক৷ তবে এখনও নতুন ধরনের প্লাস্টিক তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়নি৷ তাই আজও চারিদিকে পড়ে থাকতে দেখা যায় প্লাস্টিকের ঢাকনাগুলিকে৷ বাতাসে ভেসে সমুদ্রে পড়ে এগুলি৷
বেআইনিভাবেও দূর করা হয় এসব প্লাস্টিক বর্জ্য৷ তবে শুধু কৃষিজীবীরাই নয়, পর্যটক ও সাধারণ নাগরিকরাও এক্ষেত্রে কম দায়ী নয়৷ তাই সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে এক্ষেত্রে৷ জেলে এনরিকো বলেন, ‘‘আমার মনে হয় ধীরে ধীরে মানুষ পরিবেশ সচেতন হয়ে উঠছে৷ আশা করি এরকমটি চলতে থাকবে৷''
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন