আরব নারীদের সাফল্য
১৭ অক্টোবর ২০১২ফিলিস্তিনি এলাকার হেব্রন শহরে পৌর নির্বাচন৷ আপাতদৃষ্টিতে এর মধ্যে কোনো অভিনবত্ব নেই৷ কিন্তু একটি নির্বাচনী কেন্দ্রে সব প্রার্থীরাই যদি নারী হয়, তাহলে অবশ্যই সেটা চাঞ্চল্যকর খবর বটে৷ পুরুষতান্ত্রিক ফিলিস্তিনি সমাজে এমন ঘটনা সত্যি বিরল৷ ফলে নির্বাচনে হার-জিতের চেয়ে প্রার্থী তালিকার গুরুত্বই আচমকা বেড়ে গেছে৷
আগামী ২০শে অক্টোবর পৌরসভা নির্বাচনে ১৫টি আসনে প্রার্থীর সংখ্যা ৬৬৷ তার মধ্যে একটি আসনে ১১ জন প্রার্থীই নারী৷ প্রার্থীদের মধ্যে মাইসুন কাওয়াসমে সাংবাদিক৷ বাকিরা ইঞ্জিনিয়ার, অ্যাকাউন্টেন্ট, সামাজিক কর্মী, গৃহকর্ত্রী ইত্যাদি৷ হেব্রন শহরে কোনো নারীই কখনো পৌরসভায় নির্বাচিত হন নি৷ এবার সেই পরিস্থিতি বদলাতে চলেছে৷ নির্বাচনী প্রচারে মাইসুন বলছেন, ‘‘সারা জীবন ধরে পুরুষরাই আমাদের জীবনের উপর কর্তৃত্ব করে গেছে৷ অথচ আমাদের জীবনযাত্রার মান ও পৌর কর্তৃপক্ষের পরিষেবার মানের শুধু অবনতি ঘটে চলেছে৷ এবার আমাদের, মানে নারীদের জিতিয়ে দেখুন৷ আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা অন্য রকম হবো, আরও ভালো কাজ করবো৷''
হেব্রনের নারীদের এই উৎসাহ দেখে মুগ্ধ হানান আশরাভি৷ ফিলিস্তিনি রাজনীতিতে অন্য কোনো নারী এমন পরিচিতি পান নি৷ মাইসুনের কথা শুনে তিনি মনে করেন, এ যেন এক প্রাচীর ভেঙে পড়ছে৷ সংবাদ সংস্থা ডিপিএ'কে তিনি বলেন, ‘‘মাইসুন একটি বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করছেন৷ বলছেন, আমরা আছি, আমরা অবশ্যই পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবো৷''
মাইসুন কাওয়াসমে হেব্রনের বেশ নাম করা পরিবারের মেয়ে৷ যার ফলে তাঁর কিছুটা সুবিধাও হচ্ছে৷ ১৯৭৬ সালে শহরের প্রথম মেয়র তাঁরই আত্মীয় ছিলেন৷ পরিবারের অনেক সদস্য সাংসদ বা মন্ত্রী হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন৷ তবে তাঁরা সবাই পুরুষ৷ এছাড়া শহরে মাইসুনকে বেশি লোক চেনে না৷ নির্বাচনী প্রচারের সময় সকলে তাঁর নাম-ধাম, পরিবারের কথা জানতে চায়৷ প্রার্থীদের চাচা-নানা-স্বামী কে, তা ভোটারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ তারপর তাঁরা স্থির করেন, কাকে ভোট দেবেন৷
আরব সমাজের মানদণ্ডের হিসেবে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি এলাকা বেশ উদার ও খোলামেলা হিসেবে পরিচিত৷ কার্যনির্বাহী প্রধানমন্ত্রী সালাম ফায়াদের মন্ত্রিসভার ২৩ জন সদস্যের মধ্যে ৬ জন নারী৷ এ ছাড়া আইন করে নারীদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে৷ যে কোনো নির্বাচনে প্রতি ৫টি আসনের মধ্যে একটিতে কোনো নারীকে থাকতে হবে৷ তার পরেও রক্ষণশীলতার গণ্ডী পেরিয়ে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি নারীদের পক্ষে সক্রিয় হয়ে ওঠা সহজ নয়৷
এসবি/ডিজি (ডিপিএ)