ফুটবলের উপনায়ক
২৬ জুন ২০১৪তাতেই কাজ হয়ে গেল৷ গ্রুপ স্টেজের তিনটি খেলায় তিনটি জয়: নয় পয়েন্ট৷ মেসি এই নিয়ে তিনবার ম্যান অফ দ্য ম্যাচ৷ কিন্তু সেটা বড় কথা নয়৷ ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো ব্যাকফায়ার করার পর ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের সুপারস্টার কে হবেন, নেইমার না মেসি, সেটাই হলো প্রশ্ন৷ গ্রুপ স্টেজ যেন প্রাইমারি, আসল প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যামপেইন শুরু হবে তার পর৷ কোন স্টেজে কে কিরকম করছেন, তা দেখতে গেলে, বলতে হবে: নেইমার-মেসি দু'জনেরই তিনটি ম্যাচে চারটি গোল; দু'জনেই সর্বাধিক গোলদাতার তালিকার শীর্ষে৷ হাতে রইল নক-আউট স্টেজ৷
জিনিয়াস ও যুগসত্তা, দল ও দলনেতা, ঘোড়া আর ঘোড়সওয়ারের দৃষ্টান্ত দিলে বলতে হয়: রোনাল্ডো চড়েছিলেন একেবারে বেতো একটি ঘোড়ায়৷ ওই ঘোড়ায় চড়ে বিশ্বকাপের প্রাঙ্গণে নামা যেন ডন কুইক্সোটের উইন্ডমিল আক্রমণ৷ মেসির ঘোড়া মোটামুটি একটি সাধারণ ঘোড়া, মেসি লাগাম ছেড়ে দিলে সওয়ার ছাড়াও লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বটে, কিন্তু একটু দেরিতে, ধুলোকাদা মেখে৷ ওদিকে মেসির ছত্রছায়ায় আর একটি অসম্ভব রকম দ্রুত, সৃজনীশীল, অক্লান্ত পরিশ্রমী খেলোয়াড় নীরবে তাঁর কাজ করে যাচ্ছেন: তিনি হলেন আনহেল ডি মারিয়া৷ আর কেউ না জানুক, আর্জেন্টিনার কোচ আলেহান্দ্রো সাবেইয়া ছাড়া লিওনেল মেসি-ও জানেন, এই লম্বামুখো, ঢ্যাঙা মানুষটির দাম – ও অবদান – কত৷
কোথায় বলছিলাম লিওনেল মেসির কথা, উঠে পড়ল ডি মারিয়ার কথা৷ এভাবেই হয়ত মহাকাব্যের উপনায়করা মানুষের হৃদয়ে তাদের জায়গা করে নেন৷ ব্রাজিলের যেমন অস্কার৷ অথবা জার্মানির যেমন মারিও গোয়েটৎসে৷ কিন্তু মহাকবি হোমার-এর আকিলিসের মতো এই বিশ্বকাপের কোন নায়ক কিংবদন্তি হয়ে যাবেন, সে প্রশ্ন – অথবা বিতর্কের নিষ্পত্তি যদি এত সহজে হয়ে যেত, তাহলে বাকি বিশ্বকাপটা দেখার প্রয়োজনই থাকত না৷ ট্রফি হাতে পাওয়া অবধি ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনা, দু'টি দলকেই খেলতে হবে আরো চারটি করে ম্যাচ৷
আর্জেন্টিনাকে যদি সেই চারটে ম্যাচে জিততে হয়, তাহলে ডি মারিয়া ছাড়া উপায় নেই – যিনি রেয়াল মাদ্রিদের হয়ে সাধারণত রোনাল্ডোকে বল যুগিয়ে থাকেন – বার্সেলোনার লিওনেল মেসির বিরুদ্ধে! আবার জাতীয় দলে তিনিই মেসির যোগানদার৷ বুধবার নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার প্রথম গোলটাই প্রমাণ করে, আর্জেন্টিনা কিভাবে খেলছে এবং খেলবে: ডি মারিয়ার শট গোলপোস্টে লেগে ফেরৎ আসার পর মেসি ভলি করে গোল করেন৷
ঠিক এভাবেই, বুধবার ফ্রান্স ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে খেলায় একটাও গোল করতে পারল না, যদিও তারা এর আগের দু'টি ম্যাচে মোট আটটি গোল করেছে৷ এটা কেন, সে প্রশ্নের জবাবে বলতে হয়: কোচ দিদিয়ের দেশঁ জনা ছ'য়েক নতুন প্লেয়ার নামিয়েছিলেন বলে৷ ওদিকে অলিভার জিরুকে বেঞ্চে বসিয়ে রেখে করিম বেনজেমাকে নামানোর অর্থ, বেনজেমার একটা পা কেটে তাঁকে মাঠে নামানো৷ অবশ্য দেশঁ সেটা জেনেশুনেই করেছিলেন৷ ফ্রান্সের এই দলের যে সামনে আরো কয়েকটা খেলা রয়েছে, সেটা বাকি বিশ্বের মতো তিনিও জানেন৷ আর বিশ্বকাপ জিততে হলে যে সব খেলায় জিততে হবে, তা-ই বা কে বলেছে?