ক্যানসারের চিকিৎসায় ইমিউন-থেরাপি
২৮ আগস্ট ২০১৮যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্যানসার বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র৷ ফুসফুস-ক্যানসারের চিকিৎসায় তারা যুগান্তকারী সাফল্য লাভ করেছে বলে সম্প্রতি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দাবি করেছেন৷ গবেষকদের দাবি, ইমিউনথেরাপির মাধ্যমে ফুসফুস ক্যানসারের সেলকে ধ্বংস করা সম্ভব, যা ক্যানসার সেলের বিস্তার রোধে সাহায্য করবে৷ নতুন আবিষ্কৃত এ ইমিউন-থেরাপি ব্যবহার করা হলে রোগীকে কেমোথেরাপি দেয়ার প্রয়োজন হবে না৷ ইমিউনথেরাপি রোগীর দেহে একদিকে যেমন ক্যানসারের সেলটিকে ধ্বংস করতে সহায়তা করবে, অন্যদিকে এটি কেমোথেরাপির ভয়াবহতা থেকেও রোগীকে রক্ষা করবে৷
বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার রোগের মধ্যে ফুসফুসে ক্যানসার অন্যতম৷ বিশ্বব্যাপী ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি৷ হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় প্রাপ্ত ফল ফুসফুস-ক্যানসারের চিকিৎসায় আরো কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে৷
গবেষণায় প্রাপ্ত এ ফলাফলকে ‘অত্যন্ত চমকপ্রদ’ বলে মন্তব্য করেন অ্যামেরিকার ইয়েল ক্যানসার সেন্টারের গবেষক ড. রে হার্বস্ট৷ ফুসফুস-ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হলে সুফল পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷
ইমিউনথেরাপি প্রাথমিকভাবে ২০ জন রোগীর উপর প্রয়োগ করা হয়৷ এক বছর পর দেখা গেছে, ১৬ জন রোগীর শরীরে এটি বেশ কার্যকর ভূমিকা রেখেছে৷গবেষকরা তাই ইমিউনথেরাপি আবিষ্কারকে ফুসফুস ক্যনসার নিরাময়ের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী অর্জন বলেই মনে করছেন৷
এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত আরেক গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষকরা দাবি করেছেন যে, তাঁরা এমন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন যেটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই রোগীর শরীরে ক্যানসারের উপস্থিতি নির্ণয় করতে পারবে৷ ‘ক্যানসার-সিক’ নামে এ পরীক্ষাটি মূলত শরীরে জিন ও প্রোটিনের পরিবর্তন চিহ্নিতকরণে সাহায্য করবে, যার মাধ্যমে মানুষের শরীরে ক্যানসারের উপস্থিতির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে৷
প্রাথমিকভাবে ১০০৫ জন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর উপর এ পরীক্ষাটি করা হয়৷ শতকরা ৭০ ভাগ পরীক্ষাই সফলতার মুখ দেখেছে৷ দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে. ওভারিয়ান ক্যানসার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে নতুন আবিষ্কৃত এ পরীক্ষাটির সফলতার হার ছিল শতকরা ৯৮ ভাগ৷ অন্যদিকে ব্রেস্ট ক্যানসার নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এ পরীক্ষাটির সফলতার হার ছিল শতকরা ৩৩ ভাগ৷
বিজ্ঞানীদের দাবি, প্রাথমিক অবস্থায় চিহ্নিত করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব৷ নতুন আবিষ্কৃত এ ‘ক্যানসার-সিক’ পরীক্ষাটির মাধ্যমে কিভাবে প্রাথমিক অবস্থাতেই শরীরে ক্যানসারের উপস্থিতি চিহ্নিত করা যায় এ নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা৷
ক্যানসার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
জন হপকিন্স হাসপাতালের গবেষকরা জানান:
১) প্রতিটি মানুষের শরীরে ক্যানসার সেল রয়েছে৷ এ সেলগুলো সংখ্যায় কয়েক বিলিয়ন না হওয়া পর্যন্ত শরীরে ক্যানসারের উপস্থিতি ধরা পড়ে না৷ডাক্তাররা যখন বলেন, যে শরীরে ক্যানসারের লক্ষণ নেই, তার মানে দাঁড়ায়, শরীরে ক্যানসার সেলের উপস্থিতি লক্ষণীয় মাত্রায় নেই৷
২) মানুষের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা যত বেশি, ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তত কম, কেননা, একটি শক্তিশালী রোগপ্রতিরোধব্যবস্থা ক্যানসার সেলের বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে ও তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়৷
৩)কোনো ব্যক্তির শরীরে ক্যানসারের উপস্থিতির মানে হলো রোগীর শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির ঘাটতি রয়েছে৷ এই ঘাটতি বিভিন্ন কারণে দেখা দিতে পারে, যেমন জেনেটিক কিংবা খাদ্যাভ্যাসজনিত৷
৪) খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাথ্যমে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করা যায়, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যানসার সেলের বৃদ্ধিকে রোধ করে৷
৫) কেমোথেরাপি যে শুধু ক্যানসার সেল ধ্বংস করে তা-ই নয়, এটি শরীরে অন্যান্য জৈবিক কাজের প্রয়োজনীয় সেলকেও ধ্বংস করে ফেলে৷ কেমোথেরাপির ফলে শরীরের কোনো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যেমন কিডনি, লিভার কিংবা হার্ট’ও অকেজো হয়ে যেতে পারে৷
৬) অতিরিক্ত কেমোথেরাপি কিংবা রেডিয়শন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে, যা রোগীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে সারা বিশ্বে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীর সংখ্যা ছিল ৮ দশমিক ৮ মিলিয়ন বা ৮৮ লক্ষ৷ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেশি বলে দাবি করছে সংস্থাটি৷ বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত আট ধরনের ক্যানসার চিহ্নিত করেছেন৷ এর মধে উল্লেখযোগ্য হলো ফুসফুস ক্যানসার, লিভার ক্যানসার, কলোরেকটাল ক্যানসার, স্টমাক ক্যানসার ও ব্রেস্ট ক্যানসার৷