ফেলানী হত্যার বিচার
৫ আগস্ট ২০১৩আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই বিচার গুরুত্ব পাবে, আর দায়মুক্তি হবে ভারতেরও৷
সীমান্ত হত্যার ঘটনায় গত ১৪ই জুলাই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশের একটি পরিবারকে ৫ লাখ রুপি (বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা) ক্ষতিপূরণ দেয়৷ ২০১০ সালের ৯ই এপ্রিল বাংলাদেশের বাঘা উপজেলার আলিপুর সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিতে নিহত হন শাহ আলম (৪৫)৷ তাঁর পরিবার তখন অভিযোগ করেন যে, সীমান্তে ঘাস কাটার সময় তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ বিএসএফ শেষ পর্যন্ত ঐ ঘটনার তদন্ত শেষে তাঁর পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ দেয়৷
এরপরই কুঁড়িগ্রাম সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার বিচার শুরুর খবর আসে৷ ২০১১ সালের ৭ই জানুযারি কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশ ব্যাপক নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় তোলে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শামীমা সিদ্দিকা মনে করেন, দেরিতে হলেও ভারত ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছে৷ এছাড়া, যদি ফেলানীর পরিবার ন্যায়বিচার পায় তাহলে দুই দেশের মানুষের মধ্যেই আস্থার সম্পর্ক বাড়বে৷ তরুণ সাংবাদিক আরিফ রেজা মাহমুদ বলেন, দেরিতে হলেও ভারত যে উদ্যোগ নিয়েছে তা ইতিবাচকভাবেই দেখতে হবে৷ তবে এটা যেন লোক দেখানো না হয়৷ ফেলানীর পরিবার যেন ন্যায়বিচার পায়৷
ফেলানীর আইনজীবী আব্রাহাম লিংকন ডয়চে ভেলেকে জানান, কাঁটাতারে ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি এবং খবর ভারতীয় গণমাধ্যমই আগে প্রকাশ করেছিল৷ বাংলাদেশ এবং বিশ্বের গণমাধ্যম সেখান থেকেই খবর পায়৷ এখান থেকেই সীমান্ত হত্যার ব্যাপারে ভারতের গণমাধ্যম এবং সেখানকার নাগরিকদের মনোভাব বোঝা যায়৷ তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশই যে আশ্বস্ত হবে তা-ই নয়, ভারতও দায়মুক্তি পাবে৷
বিজিবি-র ৪৫ ব্যাটেলিয়নের কমান্ডার অধিনায়ক লে. কর্ণেল জিয়াউল হক খালেদ ডয়চে ভেলেকে জানান, ২০০৭ সাল থেকে কুঁড়িগ্রাম সীমান্তে ৫৯ বার গুলি ছুড়েছে বিএসএফ৷ এতে ফেলানীসহ বিএসএফ-এর হাতে আটজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন ছয়জন৷ কিন্তু বিচার হচ্ছে একজন বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী হত্যাকাণ্ডের৷ তবে তারা প্রতিটি হত্যাকাণ্ডেরই প্রতিবাদ এবং বিচার দাবি করেছেন৷ তিনি মনে করেন, ফেলানী হত্যাকাণ্ডের বিচার হলে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড কমে আসবে৷ এটি একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে৷ লে. কর্ণেল জিয়াউল হক খালেদের কথায়, সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের প্রতিটি ঘটনার তদন্ত এবং বিচার হওয়া প্রয়োজন৷
আইনজীবী আব্রাহাম লিংকন বলেন, ফেলানী নিহত হয়েছে কাঁটাতারের সীমান্ত পার হতে গিয়ে৷ এই কাঁটাতারের বেড়া পার হতে মোট তিনটি মই লাগে৷ দু'টি মই থাকে বেড়ার দু'পাশে৷ আর একটি মই ঐ দু'টি মইকে সংযুক্ত করে৷ তাই ভারতের লোকজনের সহযোগিতা ছাড়া বাংলাদেশ থেকে কাঁটাতারের বেড়া পার হয়ে সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়৷ অথচ তাদের কখনো শাস্তির আওতায় আনা হয় না৷ তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশের নাগরিক নয় ভারতের নাগারিকরাও সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে আসেন৷ এখনো কুঁড়িগ্রামের কারাগারে ভারতীয় নাগরিক আটক আছেন৷
এদিকে ফেলানীর মা জাহানারা বেগম জানান, ফেলানী হত্যার বিচার হবে শুনে তিনি খুশি৷ তবে তিনি চান আর কোনো মাকে যেন ফেলানীর মতো লাশ গ্রহণ করতে না হয়৷