1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফ্রান্সের পরমাণু পরীক্ষার শিকার মানুষরা আজও ক্ষতিপূরণ পান নি

৪ আগস্ট ২০১১

ফুকুশিমা দুর্ঘটনার পর জার্মানি ও সুইজারল্যান্ড পরমাণু শক্তি বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ কিন্তু গত শতাব্দীতে ফ্রান্স যে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল, তার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষতিপূরণের বিষয়টির এখনো নিষ্পত্তি হয় নি৷

https://p.dw.com/p/12B0n
A man carries a peace flag during a demonstration where thousands of Tahitians took to the streets of Papeete Saturday August 26, 1995 in a church-organized mass protest joined by political opposition parties over French nuclear testing in the South Pacific. The protests took place as more boats arrived in the French Polynesian capital on their way to join the protest flotilla at Mururoa Atoll.(AP Photo/Francois Mori)
পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলনছবি: AP

ফ্রান্সের পরমাণু কর্মসূচি

১৯৬০ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে ফ্রান্স মোট ২১০টি পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে৷ এই তালিকায় একমাত্র সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ৭১৮ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১,০৩৯টি এমন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফ্রান্সের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে৷ প্রথমদিকে ফ্রান্স তার প্রাক্তন উপনিবেশ আলজেরিয়াকে পারমাণবিক পরীক্ষার জন্য বেছে নিয়েছিল৷ তারপর সেদেশ প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে পলিনেশিয়া দ্বীপপুঞ্জে নিজস্ব ভূখণ্ডে পরীক্ষা চালাতে থাকে৷ গোটা কর্মযজ্ঞে সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তি মিলিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ অংশ নিয়েছিলেন৷ প্রায় ৫,০০০ মানুষ আজও জীবিত৷ তাদের মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ ক্যান্সার রোগে ভুগছেন৷ তাদের করুণ অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে দুটি সংগঠনের আপ্রাণ চেষ্টা চালানোর পর ২০১০ সালের জুন মাসে তাদের ক্ষতিপূরণের জন্য ফ্রান্সে একটি আইন কার্যকর হয়েছে৷ তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যার্ভে মোব়্যাঁ বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তির উদ্দেশ্যে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ কিন্তু সেই অর্থ আজও সব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছয় নি৷

ক্ষতিপূরণ আইন নিয়ে জটিলতা

ক্ষতিপূরণ আইন কার্যকর হবার ঠিক এক বছর পর, অর্থাৎ গত জুন মাসে প্রথম ব্যক্তি ক্ষতিপূরণের খবর পেলেন৷ ফরাসি সেনাবাহিনীর এই প্রাক্তন সদস্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক৷ বহুদিন ধরে তিনি মারাত্মক ত্বকের ক্যান্সারে ভুগছেন৷ এই ঘটনার এক প্রতীকী তাৎপর্যও রয়েছে৷ ১৯৬০ সালের শুরুতে সাহারা মরুভূমিতে ফ্রান্স যখন প্রথম পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায়, তখন তরুণ সৈন্য হিসেবে এই ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত ছিলেন৷ বিস্ফোরণের কেন্দ্রস্থলের খুবই কাছে পর্যবেক্ষক হিসেবে তাকে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছিল৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সেসময়ে আমরা সুরক্ষার জন্য এক ধরণের সাদা পোশাক পরতাম৷ সঙ্গে থাকতো দস্তানা ও গ্যাস মুখোশ৷ তবে সেই সব সরঞ্জাম ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের৷''

Das Luftbild vom Freitag (08.04.11) zeigt das franzoesische Atomkraftwerk (AKW) Fessenheim am Ufer des Flusses Rhein in Fessenheim im Elsass, Frankreich, in unmittelbarer Naehe zur deutschen Grenze bei Bremgarten in Baden-Wuerttemberg. Fessenheim ist das aelteste franzoesische AKW und steht wegen zahlreicher Pannen in den letzten Jahren in der Kritik. Foto: Winfried Rothermel/dapd
ছবি: AP

ফরাসি কর্তৃপক্ষ আরও ১১ জনের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেছে৷ কিন্তু এই লক্ষ্যে গঠিত কমিশন সবার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের দাবি মানতে প্রস্তুত নয়৷ ৫০০রও বেশি ব্যক্তি আশঙ্কা করছেন, যে তাদের আবেদন নাকচ হয়ে যাবে৷ ফ্রান্সের সমাজতন্ত্রী দলের সাংসদ জঁ পাত্রিক গিল এই আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ৷ এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে তিনি বলেন, ‘‘এই আইন আসলে অনেকটাই আপনাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে৷ আপনারা, মানে সংবাদ মাধ্যমের জন্য৷ এই আইনের খসড়া তৈরি করেছিলেন যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী, তিনি আসলে আপনাদের বুক ফুলিয়ে বলতে চেয়েছিলেন, ‘দেখুন আমি সাহস করে এমন এক স্পর্শকাতর বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছি৷' কিন্তু তিনি যাই বলুন না কেন, শুরু থেকেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, যে বাস্তবে এই আইনের প্রয়োগ কীভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে৷ এই আইনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের দাবি সমাজের স্বীকৃতি পেয়েছে বটে, কিন্তু গোটা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাঠামো একেবারেই অকেজো৷''

আরও স্বীকৃতির প্রচেষ্টা

দীর্ঘদিন ধরে পরমাণু বিস্ফোরণের কুপ্রভাব শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছেন যেসব মানুষ, তাদের আইনজীবী জঁ পোল তেসোনিয়ে একেবারেই হাল ছাড়তে প্রস্তুত নন৷ কর্তৃপক্ষ কারো আবেদন নাকচ করলেই তিনি আদালতে গিয়ে মামলা ঠুকে দিচ্ছেন৷ আইনের কাঠামোর মধ্যেও অবশ্য ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত মতবিরোধের নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রয়েছে৷ এর আওতায় দ্বিতীয় এক কমিশনের কাজ হলো নতুন করে এই সব আবেদন খতিয়ে দেখা৷ কিন্তু সেই কমিশন এক বছরেও গঠন করা সম্ভব হয় নি৷ ফলে সরকারের সদিচ্ছার উপর ভরসা না করে ‘আভেন' নামের এক সংগঠন বিষয়টি নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ সংগঠনের সভাপতি জঁ লুক সঁস বললেন, ‘‘আমরা পারমাণবিক পরীক্ষার পরিণাম খতিয়ে দেখতে নিজেরাই পর্যবেক্ষকদের এক গোষ্ঠী তৈরি করছি৷ পারমাণবিক পরীক্ষার সময় যারা আশেপাশে থাকেন, তাদের স্বাস্থ্যের উপর কী প্রভাব পড়ে, সামাজিক স্তরে তাদের কোন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, সেবিষয়ে আমরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি৷ যারা সরাসরি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে এবং যারা আলজেরিয়া ও পলিনেশিয়ায় পরীক্ষার কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি বসবাস করেন, তাদের স্বাস্থ্যও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে৷''

বাড়তি সচেতনতা

বিষয়টি সম্পর্কে সচেতনতা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে৷ প্রায় সব রাজনৈতিক দলের মধ্যেই এই আইনের সংস্কারের দাবি উঠছে৷ পলিনেশিয়ার রাজনীতিক রিশার তুহেইআভা সেইসঙ্গে নতুন এক আইন প্রণয়নের জন্য চাপ দিচ্ছেন, যার আওতায় পরমাণু পরীক্ষার ফলে গোটা অঞ্চলে যে পরিবেশ দূষণ ঘটেছে, তারও দায় বহন করবে ফ্রান্স৷ ফ্রান্সের কিছু রাজনীতিকও তাঁকে এই প্রশ্নে সমর্থন করছেন৷ বহুকাল ধরেই পলিনেশিয়ায় পরমাণু পরীক্ষার পরিণামের খুঁটিনাটি বিষয়গুলি ফ্রান্স প্রকাশ্যে জানায় নি৷ সম্প্রতি সেদেশের এক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, এই পরীক্ষার ফলে গোটা অঞ্চলে মারাত্মক সুনামিও ঘটতে পারতো৷ বলাই বাহুল্য, এই স্বীকারোক্তির ফলে ফ্রান্স ও তৎকালীন পলিনেশিয়ার স্থানীয় সরকারের বিরুদ্ধে তুমুল সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ কোনো না কোনো সময়ে ফ্রান্সকে যে ক্ষতিপূরণ সহ গোটা বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করতে হবে, এবিষয়ে প্রায় সব মহলই একমত৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই