1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যত চ্যালেঞ্জ

২৯ জুন ২০২৩

ঢাকায় কোরবানির ঈদে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাই দুই সিটির বড় চ্যালেঞ্জ। গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। তাই ঈদের নামাজের পর সড়কে জমে থাকা পানির সঙ্গে পশুর রক্ত একাকার হয়ে যায়।

https://p.dw.com/p/4TDcz
Bangladesch l Kalabagan-Straße ist mit blutigem Wasser überschwemmt, Dhaka
ছবি: Harun-ur Rashid Swapan/DW

ঢাকার পড়া-মহল্লার  রাস্তা তো বটেই কোথাও কোথাও প্রধান সড়ক দেখে হঠাৎ যে কারুর মনে হয়েছে "রক্ত নদী”। তবে  বেলা দুইটার মধ্যেই অধিকাংশ রাস্তা ও সড়কের পানি নেমে যাওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন কোরবানির হাট ও জবাই করা পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক উদ্যোগ নিলেও ড্রেনেজ সিস্টেমের কারণে তা সফলতার মুখ দেখতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আর নগরবাসীর অসচেতনতাও এর জন্য অনেকটা দায়ী। পশুর বর্জ্য তারা নির্ধারিত জায়গা বা ডাস্টবিনে না ফেলে ড্রেনে ফেলায় তা ড্রেনেজ ব্যবস্থাকেও অনেকটা অচল করে দেয়। পশুর এই কঠিন বর্জ্য প্রতি বছরই কোরবানির সময় অনেক জায়গায়ই ড্রেন আটকে দেয়।

কোরবানির সময় দুই সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুইটি দিকে খেয়াল রাখতে হয়। গরুর হাট এবং কোরবানির পশুর বর্জ্য। দুই সিটি এবার ২৪ ঘন্টার মধ্যে কোরবানির সব ধরনের বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছে। এজন্য বৃহস্পতিবার কোরবানির দিন দুপুর থেকে ১৯  হাজার ২৪৪ জন পরিচ্ছন্নকর্মী কাজ শুরু করেছেন।

সিটি কর্পোরেশন বলছে, এবার ঈদে  ঢাকায় কমপক্ষে পাঁচ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। আর এর বর্জ্য হতে পারে ৩০ হাজার টন। এই বর্জ্য অপসারণের জন্য দুই সিটির বজ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারির ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আর কোরবানির আগের দিন ১১ লাখ প্ল্যাস্টিক, পলিব্যাগ ও বর্জ্য ব্যাগ বিতরণ করেছে সিটি কর্পোরেশন। বিতরণ করেছে ব্লিচিং পাউডার। বেলা দুইটা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই সিটিতে বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকার দুই সিটিতেই কন্ট্রোল রুম এবং হটলাইন চালু করা হয়েছে। নগরবাসী প্রয়োজন মনে করলে বর্জ্য অপসারণের জন্য কন্ট্রোল রুমে জানাতে পারেন। আর দুই সিটিতেই বর্জ্য অপসারণে তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এস এম শরিফ-উল- ইসলাম জানান, "আমারা আগে থেকেই প্রচার করেছি। বর্জ্য ব্যাগ বিতরণ করেছি। তারপরও লোকজন সচেতনতার অভাবে বর্জ্য  সংরক্ষণ করে ডাস্টবিনে না ফেলে ধুইয়ে ফেলেছে। ড্রেনে ফেলছে। এর ফলে ড্রেন আটকে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।  অনেকে নাড়িভুড়িও ফেলে দিয়েছে যা ড্রেনে গিয়ে পড়ছে। এটা একটা বড় সমস্যা। আমরা যে বর্জ্য ব্যাগ দিয়েছি তা ঘরে রেখে দিয়েছে। তারপরও আমরা  আজ (বৃহস্পতিবার) বেলা দুইটা থেকে পরবর্তী  আট ঘন্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করে ফেলতে পারব বলে আশা করি।”

‘কমিউনিটি পর্যায়ের ড্রেন নিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না’

"টানা বৃষ্টির কারণে সড়কে পানি জমে গেছে আর সেই পানিতে পশুর রক্ত মিশে একাকার হয়ে গেছে। নগরের বেশ কিছু এলাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত পানি সরে গেলে এমন হত না। এখানে আমাদের কিছু করার নেই,” বলেন প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা।

করোনার সময় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনই কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট জায়গার ব্যবস্থা করেছিল। বাসায় মাংস পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থাও ছিল। আর দুই সিটিতে দুইটি আধুনিক কসাইখানা তৈরি করা হয়েছে। আরো দুইটির কাজ চলছে। কিন্তু মানুষের নির্দিষ্ট জায়গায় কোরবানি করার আগ্রহ এখনও তৈরি হয়নি বলে জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের। তিনি বলেন, "আমরা আগে ১২৫টি স্পট নির্ধারণ করেছিলাম কোরবানির পশু জবাই দেয়ার জন্য। তখন মাত্র সাতটি স্পটে ১১টি পশু কোরবানি দেয়া হয়।  আমাদের পশু কোরবানির জন্য আধুনিক কসাইখানাও আছে। কিন্তু মানুষ ওইসব নির্দিষ্ট এলাকায় পশু কোরবানি দিতে উৎসাহী নয়। সে তার বাড়ি বা বাসার সামনেই কোরবানি দিতে চায়। তবে নির্দিষ্ট স্থানো কোরবানি চালু করা গেলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ হত।”

তার কথা, "আমরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছি ড্রেনে, নালায় কোরবানির পশুর বর্জ্য ফেলায়। আমরা বর্জ্য  রেখে তা ডাস্টবিন বা আমাদের পচ্ছিনন্নতাকর্মীদের দেয়ার জন্য এক লাখ ২৫ হাজার বর্জ্য ব্যাগ বিতরণ করেছি। কিন্তু কোরবানির দিন দেখলাম ওই ব্যাগে বর্জ্য না রেখে মাংস রাখছে। আর বর্জ্য ফেলে দিচ্ছে রাস্তায় ড্রেনে। এ কারণে ড্রেনগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম।”

দুই  সিটি কর্পোরেশনই বলছে যে, তাদের বিতরণ করা  সেগুলো পরিবেশ বান্ধব বায়েডিগ্রেডেবল। এগুলো পঁচে মাটির সাথে মিশে যাবে।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কোনো আলাদা বিষয় নয়। এর সঙ্গে নগরীর ড্রেনেজ সিস্টেম যুক্ত। বড় বড় ড্রেন নিয়ে ভাবা হচ্ছে। কিন্তু ছোট ড্রেনগুলো যে বন্ধ হয়ে গেছে তা দেখা হচ্ছেনা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবান প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক এবং  বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আদিল মোহাম্মদ খান বলেন,"আমরা স্টর্ম স্যুয়েরেজ নিয়ে কথা বলছি, খাল ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলছি। কিন্তু কমিউনিটি পর্যায়ের ড্রেন নিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। ময়লা জমে অনেক ড্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তা থেকে পানি অপসারণের পদ্ধতিও তেমন কার্যকর নয়। ড্রেনের ওপরে নানা ধরনের নির্মান কাজ হচেছনা। ফলে জলাবদ্ধতাও কমছে না।”

তার কথা, "বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে এই ড্রেনও যুক্ত। ড্রেনগুলো সচল থাকলে বৃষ্টিতে পানি জমতে পারত না। আর কোরবানির পশুর রক্ত এভাবে জমে থাকা পানির সঙ্গে একাকার হতেও পারত না।”

প্রসঙ্গত, খাল ছাড়াও দুই সিটিতে বৃষ্টির পানি সরাতে আছে দুই হাজার ৫০০ কি.মি. খোলা ড্রেন এবং চার হাজার কি.মি. ভূগর্ভস্থ ড্রেন৷ কিন্তু এসব ড্রেন পরিষ্কার থাকে না ৷ ৪০ ভাগেরও বেশি ময়লা জমে থাকে৷ আর  স্বাভাবিক সময়ে ঢাকায় প্রতিদিন ১৫ লাখ ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদিত হয়৷ যার বড় একটি অংশ এইসব ড্রেনে যায়৷