বর্ণবাদী পতাকার সমর্থক ট্রাম্প
২০ জুলাই ২০২০নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে, ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ততই কমছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভোট নিয়ে এমনই সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সেই রিপোর্ট মানতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, এ সব রিপোর্টকে আদতেই গুরুত্ব দেন না তিনি। ভোটে হারলে সেই নির্বাচনকেই তিনি মানবেন না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। শুধু তাই নয়, বর্ণবাদী পতাকা কনফেডারেট ফ্ল্যাগের সমর্থনেও কথা বলেছেন ট্রাম্প।
রোববার অ্যামেরিকার একটি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ট্রাম্প। সেখানে তাঁকে সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা রিপোর্টের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সেই সমীক্ষা অনুযায়ী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের থেকে প্রায় ১৫ পয়েন্ট পিছিয়ে আছেন ট্রাম্প। দেখা গিয়েছে ৫৫ শতাংশ জনগণ বাইডেনকে সমর্থন করছেন। ট্রাম্পের সমর্থন মাত্র ৪০ শতাংশ। কিন্তু ট্রাম্প এই সমীক্ষা মানতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, এত দ্রুত এ সব সমীক্ষা তিনি মানতে রাজি নন। বস্তুত, তাঁর কথায় স্পষ্ট, নভেম্বরের নির্বাচনে তিনি হেরে গেলে সেই নির্বাচনকেই তিনি মানবেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনের কয়েক মাস আগেও এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
বাইডেন মানসিক ভাবে অসুস্থ
সাক্ষাৎকারে বিরোধী প্রার্থী জো বাইডেনকে সরাসরি আক্রমণ করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট। বলেছেন, বাইডেন মানসিক ভাবে সুস্থ নন। অ্যামেরিকাকে চালানোর মতো ক্ষমতা তাঁর নেই। বাইডেন প্রেসিডেন্ট হলে অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে অ্যামেরিকা। পুলিশের ফান্ড কমিয়ে দেওয়া হবে। মানুষের ধর্মীয় অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে। কিছু দিন আগেই জর্জ ফ্লয়েড হত্যার ঘটনা ঘটেছে অ্যামেরিকায়। তার পরে ডেমোক্র্যাটরা পুলিশ বিভাগের সংস্কারের দাবি করেছে। দাবি উঠেছে, প্রয়োজনে পুলিশের বাজেট কমানো হোক। সে বিষয়টিকে উল্লেখ করেই বাইডেনের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন ট্রাম্প।
ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রসঙ্গটিও এসেছে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা থেকে। করোনাকালে ডেমোক্র্যাট শাসিত রাজ্যগুলিতে চার্চ বন্ধ রাখা হয়েছে। ট্রাম্প সে বিষয়টিকেই রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছেন বলে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। ট্রাম্প জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউস এখনও পর্যন্ত নভেম্বরের নির্বাচন নিয়ে যত সমীক্ষা চালিয়েছে, তার প্রতিটিতেই তিনি এগিয়ে আছেন। এর পরেই প্রেসিডেন্টের সংযোজন-- এমন একটি সাক্ষাৎকারে যদি বাইডেন বসতেন, তা হলে তিনি এত কথার উত্তরই দিতে পারতেন না। মাকে ডাকতেন বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য। ট্রাম্পের এ ধরনের মন্তব্য শালীনতা বিরোধী বলেই মনে করছেন মার্কিন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ট্রাম্প বাইডেনকে যত এ ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করবেন, ততই তাঁর জনপ্রিয়তা কমবে।
বর্ণবাদী কনফেডারেট ফ্ল্যাগ
অ্যামেরিকার দক্ষিণ অংশে কনফেডারেট ফ্ল্যাগ ব্যবহৃত হয়। গৃহযুদ্ধের সময় থেকে এই পতাকার বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে একাংশের মানুষের। অভিযোগ, এই পতাকা বর্ণবাদী। বস্তুত, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য কায়েম করতে বহু সময়েই এই পতাকা ব্যবহার করা হয়েছে। এখনও বর্ণবাদীরা এই পতাকাটিকে সিম্বল হিসেবে ব্যবহার করেন। দীর্ঘদিন ধরে এই পতাকাটি বাতিলের দাবি উঠছে। ট্রাম্প অবশ্য পতাকাটিকে বাতিল করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ওই পতাকা গৌরবের ইতিহাস বহণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অ্যামেরিকার জয়ের সঙ্গে জুড়ে আছে ওই পতাকা। ফলে কোনও ভাবেই তা বাতিল করা হবে না। শুধু তাই নয়, প্রেসিডেন্টের বক্তব্য, ওই পতাকার সঙ্গে দক্ষিণের মানুষের আবেগ জড়িত। সম্প্রতি কেনট্যাকির মেয়র কনফেডারেট জেনারেলদের নাম মিলিটারি বেস থেকে তুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। ট্রাম্প জানিয়েছেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে তিনি সেই পদক্ষেপ সমর্থন করবেন না।
করোনা-কাল
অ্যামেরিকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিযোগ উঠছে, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ট্রাম্প সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। বস্তুত, করোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকে ক্রমশ সমর্থন কমতে শুরু করেছে ট্রাম্পের। এখনও পর্যন্ত সব চেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অ্যামেরিকায়। মৃত্যুও হয়েছে সব চেয়ে বেশি। করোনা-কালের একেবারে গোড়া থেকে বার বার স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং উপদেষ্টাদের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন ট্রাম্প। তাড়িয়ে দিয়েছেন বহু বিশেষজ্ঞকে। ট্রাম্প অবশ্য এ সব কোনও কথা মানতেই নারাজ। তাঁর বক্তব্য, ঠিক ভাবেই করোনা পরিস্থিতি সামলেছেন তিনি। প্রেসিডেন্টকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করছেন না তিনি। ট্রাম্পের উত্তর, মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চাননি বলেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেননি তিনি।
রোববার ট্রাম্পের বক্তৃতার পরে রীতিমতো আলোড়ন শুরু হয়েছে অ্যামেরিকায়। অনেকরই বক্তব্য, এরপর ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা আরও কমার সম্ভাবনা তৈরি হলো।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স)