‘বস্ত্র সহযোগিতা' একটি সূচনা মাত্র
১৬ অক্টোবর ২০১৫বিশ্বায়িত বিশ্বে বাণিজ্য ঠিক ন্যায়-অন্যায় মেনে চলে না৷ কলা, কফি, চামড়ার জিনিসপত্র বা গার্মেন্টস – পশ্চিমের বিপণীগুলিতে এ সব পণ্য থরে থরে সাজানো থাকে, কিন্তু তা আসে তৃতীয় বিশ্ব থেকে৷ অন্যদিকে ইউরোপের সামাজিক ও পরিবেশগত মান সম্পর্কে তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের কোনো জ্ঞান নেই৷ তৃতীয় বিশ্বের শ্রমিকদের পারিশ্রমিক কম এবং স্কুলের পড়াশুনোও বেশি দূর নয়৷
ধরা যাক বাংলাদেশের গামেন্টস শিল্পে কর্মরত নারীদের৷ সপ্তাহে সাতদিন দিনে ১৪ ঘণ্টা করে কাজ, যা পারিশ্রমিক তা-তে কোনোমতে পরিবারের পেট চলে৷ চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ যে কোনো সময় চাকরি চলে যেতে পারে৷ কেননা হাজার হাজার তরুণ, অল্পশিক্ষিত নারীরা অপেক্ষা করছেন সে জায়গা নেবার জন্য৷ যার চাকরি গেল, তার অস্তিত্বের সংকট৷
এই সেদিন অবধি বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে কর্মস্থলে ন্যায্য পরিবেশ বা পারিশ্রমিক অলীক ছিল, কেননা কারখানার মালিক ও তাদের সাপ্লায়াররা ছিলেন চাপের মুখে: গার্মেন্টসের দাম পড়ছে অথচ গার্মেন্টস তৈরির খরচ বাড়ছে৷ যে সব কোম্পানি পশ্চিমে মাল সরবরাহ করে থাকে, তাদের অবস্থাও অনুরূপ – কেননা জার্মানিতে যে সব চেইনস্টোর রেডিমেড গার্মেন্ট বিক্রি করে থাকে, তাদের মধ্যেও দাম কমানোর প্রতিযোগিতা চলেছে৷
পরিবর্তনের ছোঁয়া
ভাগ্যক্রমে উন্নয়ন সাহায্য সম্পর্কে জার্মানিতে ধ্যানধারণা বদলাতে শুরু করেছে৷ পশ্চিমের মানুষজন বুঝতে শুরু করেছেন যে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি তাদের দুরবস্থার জন্য একা দায়ী নয়, শিল্পোন্নত দেশগুলিরও সেখানে একটা ভূমিকা আছে৷ যে সব বহুজাতিক সংস্থা তৃতীয় বিশ্ব থেকে পণ্য এনে পশ্চিম ইউরোপে জলের দরে বিক্রি করে, এমনকি যে সব গ্রাহক সেই পণ্য কেনেন – তারাও তো পুরোপুরি নির্দোষ নন৷ বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের মহিলা কর্মীরা যে জীবনযাপন করছেন, সেজন্য কি সকলেরই কিছুটা দায়িত্ব নেই?
২০১৪ সালের ১৬ই অক্টোবর জার্মানি টেকসই বস্ত্র সহযোগিতার উদ্যোগ নেয়৷ লক্ষ্য হলো, গামেন্টস কর্মীদের অবস্থার স্থায়ী উন্নতিসাধন৷ গার্মেন্টস প্রসেসিং এবং সাপ্লাই প্রক্রিয়ায় যারা সংশ্লিষ্ট, তারা যা-তে ছোট ছোট পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতির বাস্তবিক ও প্রামাণ্য উন্নতি সাধন করতে পারে, সেটাই হলো এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ এর ফলে কারখানায় গার্মেন্টস কর্মীদের অবস্থারও ধাপে ধাপে উন্নতি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে৷ অপরদিকে যে সব সংস্থা এই উদ্যোগে অংশগ্রহণ করবেন, তাদের পণ্যে একটি ক্যাশে বা সিল লাগানো থাকবে, যা-তে জার্মানিতে চূড়ান্ত গ্রাহকরা নির্দ্বিধায় ‘‘মেড ইন বাংলাদেশ'' বস্ত্র কিনতে পারবেন৷
শুভ সূচনা, কিন্তু কাজ অনেক বাকি
বস্ত্র সহযোগিতা এক বছরের মধ্যেই অকুস্থলে ইতিবাচক ফলাফল এনে দিয়েছে৷ উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট গার্মেন্টস কোম্পানিগুলিতে ইতিমধ্যে কারখানা ভবনের নিরাপত্তা, পরিবেশসম্মত কাজের প্রক্রিয়া অথবা শ্রমিক সংগঠন ইত্যাদি বিষয়কে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে৷ এমনকি জার্মান সরকারের সাহায্যে একটি দুর্ঘটনা বীমাও চালু করা হয়েছে৷
অথচ প্রয়োজনের তুলনায় বিশেষ কিছুই ঘটেনি, এমন বলা চলতে পারে৷ বাংলাদেশের কিছু কিছু কোম্পানি করেন এক আর দেখান এক, এ অভিযোগ বহুদিনের৷ গার্মেন্টস মালিকরা শুধু ধনি নন, রাজনীতির সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকে৷ তবুও গার্মেন্টস সেক্টরে কিছুটা প্রগতি ঘটেছে বৈকি, যে প্রগতি অন্যান্য শিল্পে – যেমন চর্মশিল্পে – এবং অপরাপর দেশেও ঘটা প্রয়োজন৷ যে কাজের জন্য গোটা পশ্চিমি দুনিয়াকেই একজোট হয়ে উদ্যোগ নিতে হবে৷ জার্মানি সেক্ষেত্রেও পথিকৃৎ হতে পারে৷
বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পে জার্মান সহযোগিতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷